শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন

আইএসকে পালাতে সাহায্য করেছে আমেরিকা-ব্রিটেন?

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৬ পাঠক
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম: সিরিয়ার যে শহরকে তাদের স্বঘোষিত খেলাফতের রাজধানী বানিয়েছিল ইসলামিক স্টেট, কিছুদিন আগে সেই রাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পশ্চিমা কোয়ালিশন সমর্থিত কুর্দি এবং আরব কয়েকটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী।
কিন্তু সেই শহরে থাকা হাজার হাজার আইএস যোদ্ধা, যাদের অনেকেই ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা – তাদের কি হলো?
বিবিসির সংবাদদাতারা এক অনুসন্ধানের পর বলছেন যে, যুদ্ধরত কয়েকটি পক্ষের মধ্যে এক গোপন চুক্তির অধীনে হাজার হাজার আইএস জঙ্গিকে তাদের পরিবারসহ নিরাপদে অন্যত্র পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এরা এখন সিরিয়ার অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে এমনকী তুরস্কে গিয়ে ঢুকেছে।
এসব জিহাদিদের মধ্যে ছিল ফ্রান্স, তুরস্ক, আজারবাইজান, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সউদি, চীন, তিউনিসিয়া, মিশরের নাগরিক।
কি ভাবে পরাজিত হবার পরও অক্ষত দেহে পালাতে পারলো তারা – সেটা এমন এক গল্প যা সব পক্ষই গোপন রাখার চেষ্টা করছে।
এ জন্য একটা চুক্তি হয়েছিল, এবং তার অধীনে রাকায় থাকা আইএস যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের লোকরা অনেকগুলো বাসে করে অন্য জায়গায় চলে যেতে পেরেছিল।
বিবিসির সাংবাদিক কুওয়েন্টিন সমারভিল বলছেন, রাকা শহরের সিটি হাসপাতাল ভবনে আইএস যোদ্ধারা কয়েক মাস ধরে লুকিয়ে ছিল। এই হাসপাতালের সামনে থেকেই তাদের বহনকারী বাসগুলো অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
“এই বাসগুলোতে ছিল আইএস যোদ্ধারা, তাদের পরিবারের সদস্য, এবং তাদের হাতে আটক থাকা জিম্মিরা। আমাকে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে যাবার সময় আইএসের যোদ্ধাদের মোটেও পরাজিত বা হতাশ মনে হয়নি, বরং তারা উজ্জীবিত ছিল। এখানে এসেই তারা বুঝতে পারে যে আরো একটি যুদ্ধের জন্য তারা বেঁচে থাকতে পারবে”
রাকার নোংরা গোপন কথা
“যে চুক্তিটির ফলে তারা এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পেরেছিল – তা নিয়ে এখানে কেউই কথা বলতে চায় না। এটা হচ্ছে রাকার নোংরা গোপন কথা।”
এখানে কি তাহলে কুর্দি, আরব এবং পশ্চিমা কোয়ালিশন একসাথে বসে একটা চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল যার ফলে আইএস শুধু যে রাকা থেকে পালাতে পেরেছিল তাই নয় – তাদের সবচেয়ে দু;সাহসী যোদ্ধারা শহরের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পেরেছিল?
বিবিসির এই সংবাদদাতা বলছেন – এই চুক্তির প্রথম করণীয় ছিল সংবাদমাধ্যমকে কিছুই জানতে না দেয়া – একটা মিডিয়া ব্ল্যাক-আউট। ইসলামিক স্টেটের পলায়ন টিভিতে দেখা যায় নি। বিশ্বকে বলা হয়েছে শুধু কিছু স্থানীয় যোদ্ধাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে, কোন বিদেশী ছাড়া পায়নি, কোন অস্ত্রও তারা নিয়ে যেতে পারেনি।
“কিনতু সাধারণ লোকদের তোলা ভিডিওতে ব্যাপারটা ধরা পড়েছে । আমরা দেখতে পেয়েছি আই এস যোদ্ধা ভর্তি ট্রাকের বহর যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে – তাদের হাতে ভারী অস্ত্র। কেউ কেউ তখনো আত্মঘাতী বেল্ট পরে আছে।”
বেশ কয়েকদিন অনুসন্ধানের পর বিবিসি আইএস যোদ্ধাদের বহন করা ট্রাকগুলোর খুঁজে পায় তাবকা শহরে। পাওয়া যায় বেসামরিক ড্রাইভারদেরও। তাদেরকে ভাড়া করেছিল কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স।
সাত কিমি লম্বা আইএস বহর
একজন ড্রাইভার বলেন, “এই বহরে ছিল ৪৭টা বাস আর ১৩টা ট্রাক। আইএস জঙ্গিদের নিজেদের গাড়িও ছিল। পুরো বহরটা ছিল ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার লম্বা।নারী ও শিশু সহ আমরা প্রায় ৪ হাজার লোককে বহন করেছি”
বিদেশী যোদ্ধারা কোন কোন দেশের ছিল, সে কথাও জানালো এই ড্রাইভার । ফ্রান্স, তুরস্ক, আজারবাইজান, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সউদি, চীন, তিউনিসিয়া, মিশর – এক কথায় সেখানে অনেক অনেক বিদেশী যোদ্ধা ছিল।
“এসডিএফ বলেছিল, এসব বাস ট্রাকের ওপর কোন পতাকা বা ব্যানার থাকতে পারবে না – যাতে এটা আইএসের বিজয়ের মতো না দেখায়। আইএস যোদ্ধারা নির্ভয়ে ট্রাকের ওপর বসে ছিল। একটা ট্রাকে তো এত অস্ত্র তোলা হয়েছিল যে সেটার এক্সেল ভেঙে গিয়েছিল”
শামিনা নামে একটা গ্রামে আলি আল আসাদের দোকানের সামনে যাত্রাবিরতি করে আইএসের গাড়ি বহরটি। মি আসাদ জানান দলটতে প্রায় ৪ হাজার যোদ্ধা ছিল।
“মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের বিমান এই বহরের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে কিন্তু তারা কিছুই করেনি।”
সেখান থেকে তারা প্রধান সড়ক ত্যাগ করে একটি ধূলিময় পথ দিয়ে মরুভূমির ভেতরে চলে যায়।গ্রামবাসী এবং ট্রাক চালকরা জানান, যাবার সময় আইএস যোদ্ধারা বলে যায় তাদের সাথে কেউ বেইমানি করলে তাদের শিরশ্ছেদ করা হবে।
সূত্র: বিবিসি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *