বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

একজন নারী যখন আমার মা

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ১৫০ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক, বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮: ডুবে গেল বছরের শেষ সূর্যটা। উদিত হলো নতুন সূর্য, শুরু হলো নতুন একটি সকাল, একটি দিন। সঙ্গে করে নিয়ে এলো একটি বছর। মানে ৩৬৫টি নতুন সূর্য আসবে আমাদের জীবনে। পুরনোর হাত ধরে নতুনের আসা-যাওয়া। নতুন একদিন পুরনোতে মিলে যায়। যেমন মায়ের হাত ধরে তার কন্যার পৃথিবীতে আসা। এই কন্যাও আগামীর একজন মা। তিনিও একদিন হবেন পুরনো দিনের মা। তিনিও হাত ধরে নিয়ে আসবেন তার কন্যাকে। যে হবে আগামীর ‘মা’। এভাবেই পুরনোকে নতুন করে ফিরে ফিরে পাওয়াই মানুষের বাস্তুতন্ত্র। শ্রদ্ধেয় লেখক হুমায়ুন আজাদের ‘আমাদের মা’ থেকে যদি বলতে চাই তবে-

‘আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিল, কিন্তু ছিল আমাদের সমান। আমাদের মা ছিল আমাদের শ্রেণির, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।’

নতুনে পুরনে ফিরে আসে আমাদের মা। আমার মা। যে মায়ের ১০ মাস ১০ দিনের জীবন নিঃশেষ করা কষ্টের বিনিময়ে আমাদের পৃথিবীতে আসা। সেই মাকে ভুলি কী করে? তিনিও তো নারী। শরীরের বিন্দু বিন্দু রক্তে যিনি আমাকে ধারণ করেছেন নিজের মধ্যে। অগোচরে গড়েছেন আমাকে। দেখিয়েছেন পৃথিবীর আলো, নিজের জীবনী শক্তিকে উৎসর্গ করে। তিনি তো আমার মা, আমাদের জননী। চিরপূজনীয় আজন্ম ঈশ্বর। ঈশ্বরকে কেউ স্বচক্ষে দেখেনি কিন্তু জন্মধাত্রী মাকে সবাই দেখতে পাই। তবে কেন সেই মাকে এত অবহেলা। তিনি তো আমার মা। তার চোখে অশ্রু না ঝরিয়ে, মুখে এক পশলা হাসি ফোটানোই সন্তানের দায়িত্ব।

৮ মার্চের নারী দিবস ও মে মাসের ২য় রবিবারে বিশ্ব মা দিবস পালন করি আমরা। এ দিনগুলোতেই শুধু একটু মা ও নারীকে নিয়ে রোনাজারি করি আমরা। অন্যদিনগুলোতে তাকে ভুললে চলবে কেন? তিনি তো ভোলেন না আমাদের কখনো? অথবা কোনো নির্দিষ্ট দিনের জন্য তিনি আমাদের আদর করেন না। তার দিন তো প্রতিটি দিন। যতদিন তার নিঃশ্বাস চলে পৃথিবীতে।
প্রতিটি সময়ই তার সন্তানের জন্য। তিনিও তো আমাদেরই মতো নারী, ভোগিনী, জায়া বা কন্যা ছিলেন একদিন। আমরা অনেকেই রবিঠাকুরের আরাধনা করে থাকি তার সৃষ্ট সাহিত্যের জন্য। তাহলে মাকে কেন তার যথাযথ সম্মান করি না, তিনিও তো ঈশ্বরের দানে আমাদের পৃথিবীতে নতুন জীবন দান করেছেন। প্রসবের বেদনা ভুলে যান মা, যখন তার সন্তানের জন্ম লগ্নের কান্না শোনেন। সন্তানের হাসি দেখে খুশি হন তিনি। ভুলে যান সব দুঃখ-কষ্ট। সন্তানের প্রথম অস্ফুটো ‘মা’ ডাক শুনে পৃথিবীতে খুঁজে পান স্বর্গের সুখ। আবারো হুমায়ুন আজাদের ‘আমাদের মা’ থেকে বলতে চাই-

‘মুরগির বাচ্চার মতো আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম। ছায়া সরে গেলে আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।
আমাদের মা ছিল অশ্রুবিন্দু-দিনরাত টলমল করতো’

একজন পিতা তার সন্তানকে ফেলে দেশ-বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু মা তার সন্তান ফেলে যান খুব কমই। ইতিহাসে দু’একটা ব্যতিক্রম ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রেই মাতৃত্ব জয়ী হয়েছে সন্তানের ব্যাপারে। এ মাতৃত্ব মিশে আছে নারীর জন্ম থেকেই। ছোট কন্যাশিশু একটু হাঁটতে শিখলে বা বসতে শিখলে, গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে তার পুতুলের মা সেজেই খেলতে শুরু করে। ফুটিয়ে তোলে তার আজন্ম নারীত্ব ও স্নেহময়ী মাতৃত্বকে।

নারীর অহংকার হলো মাতৃত্ব। যে অহংকারের অধিকার ঈশ্বর পুরুষকে দেননি। সন্তানের জন্মে পুরুষের ভূমিকা থাকলেও, নারীর ভূমিকার কাছে তা ম্লান হয়ে যায়। একজন নারী তার সন্তানের জন্য একভাবে মানসিক ও শারীরিক উভয় কষ্টকেই মাথা পেতে নেন নির্দ্বিধায়। তাই মাতৃত্বের অহংকার নারীর চিরকালের।

যে নারী মা হতে না পারেন তার কষ্টের শেষ থাকে না। সমাজ ও পরিবার তাকে প্রতিপদে আঘাত করে, বিধ্বস্ত করে তোলে অথচ মা না হতে পারা বেদনার, ওই সমাজ-সংসারের দেয়া আঘাত থেকেও সহস্রাধিক বেশি কষ্টদায়ক। তার কষ্টকে কোনো রংতুলির ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব। গ্রীষ্মের খর রৌদ্রের তাপপ্রবাহে মাঠঘাটের বুক চিরে জলতৃষ্ণার রূপ যেমন প্রকাশ পায়। তেমনি সন্তানহীন নারী সর্বদা সন্তানের তৃষ্ণায় কাতর থাকেন। যে ব্যথা বোঝার ক্ষমতা কারো থাকে না। সৌদামিনি মালো হয়তো এ তৃষ্ণা মেটাতেই অন্য জাতের সন্তানকেও দিয়েছিলেন মাতৃস্নেহ (শওকত ওসমান-সৌদামিনি মালো)।

মাদার তেরেসা এ জন্যই হয়তো হাজারো শিশুর দায়িত্ব নিয়েছিলেন আর তাই যিনি আমার মা, যিনি আমাকে পৃথিবীতে এনেছেন, তার চরণে জানাই শতকোটি শ্রদ্ধা-ভক্তি ও নববর্ষের শুভেচ্ছা। তাকে আর অবহেলা যেন না করি আমরা। তার রূপের মাধুর্যতা যদি ম্লান হয়েও যায়, শরীর যদি ক্ষীণ হয়েও ওঠে, তারপরও তিনি আমার মা। হাজারো বিপদে তিনি আমার হাত ছাড়েননি। পাশে থেকেছেন ছায়ার মতো। নিজে না খেয়ে, যে খাবার জুগিয়েছেন আমার। নিজে নতুন কাপড়ে না জড়িয়ে, সাজিয়েছেন আমাকে। শত বাধা ও দুঃখ-কষ্টে যিনি সন্তানকে মানুষ করতে পেছনে ফেরেননি। তিনি আর কেউ নন। সেই মহীয়সী নারী আমার মা। আমার জননী। যিনি আমার চির নির্ভরতা ও স্নেহের স্থান। তাই কবির ভাষায় আবারো বলতে হয়- ‘আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি, সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তেন। আমাদের মা ছিলো ধান খেত, সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো। আমাদের মা ছিলো দুধভাত তিন বেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো। আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর- আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।’ সেই আমার মা। তিনিও নারী। তাকে ভালোবাসতে হবে জীবনের শত বদলের মধ্য দিয়েও। তার মুখের হাসিতে আমরাও যেন হাসতে পারি নববর্ষের প্রথম লগ্নে-এ শুভ কামনা রইল সব মাকে। শুভেচ্ছা জানাই সে নারীকে যখন তিনি হয়ে ওঠেন একজন ‘মা’।

লেখক:
শারমিন নাহার মিতু


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *