শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৪ অপরাহ্ন
ডা. ইসমত কবীর, বর্তমানকন্ঠ ডটকম : ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার মতো অণুজীব নয়। জীবিত কোষ বা এর পোষকের (Host) দেহের বাইরে এটা বেশিক্ষণ অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে না, বংশ বিস্তার তো নয়ই।
পোষকের শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থেকে সাফল্যের সাথে বংশ বিস্তারেই এর সার্থকতা। এই জন্য ক্ষুদে ভাইরাসের আরএনএ এর জিনগুলোতে সব সময়ই রূপান্তর বা মিউটেশন ঘটছে, তৈরি হচ্ছে নতুন স্ট্রেন।
প্রাকৃতিকভাবে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, বেশি ‘সংক্রমণ ক্ষমতা অর্জন করা’ এবং পোষক বা হোস্ট এর সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ‘কম ক্ষতিকর হয়ে উঠা’ যাতে করে পোষক বেঁচে থাকে, বংশ বিস্তারেও সুবিধে হয়।
মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন সাত ধরণের করোনা ভাইরাসের মধ্যে চারটি এ কারণেই টিকে আছে মামুলি ‘ঠান্ডা লাগার ভাইরাস’ হিসেবে। মার্স কোভি ও সার্স কোভি১ এর দুটি দুর্দান্ত করোনা ভাইরাস এ রকম সফল রূপান্তর ঘটাতে পারেনি বলে সমস্ত ভয়াবহতা নিয়ে আপাতত বিদায় নিয়েছে।
কোভিড১৯ এর ভাইরাস টিকে থাকার লড়াই এ ‘নতুন খবর হওয়া ডি৬১৪জি স্ট্রেন’ রূপান্তরিত একটি স্ট্রেন। বলা হচ্ছে, এটা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ইউরোপে প্রথম ধরা পড়ে তারপর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষিণ এশিয়াতেও এটা এখন বেশি বিস্তৃত হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় এর বিস্তার এতো বেশি যে শতকরা সাতানব্বই ভাগ ভাইরাসই হচ্ছে ৬১৪জি।
এ রূপান্তরটি হয়েছে স্পাইক প্রোটিন এর জিনে যাতে করে স্পাইক প্রোটিন এর গঠনে পরিবর্তন এসেছে।
দীর্ঘ স্পাইক প্রোটিনটির ৬১৪ নাম্বার স্থানে এমিনো এসিড এস্পারটিক এসিড (ডি) এর বদলে জায়গা নিয়েছে গ্লাইসিন (জি)। তাই পুরানোটার নাম ডি৬১৪ আর নতুনটার নাম জি৬১৪।
এতে করে নতুন স্পাইক প্রোটিন (৬১৪জি) ভাইরাসটির সংক্রমণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণ, যা অবশ্যই দুশ্চিন্তার কথা। কিন্তু একই সাথে আশার কথা হচ্ছে এতে করে এর ভয়াবহতা (Virulence) হ্রাস পাচ্ছে মানে জটিলতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যাচ্ছে।
আরও একটি ভাল খবর আছে। এ রূপান্তর যদিও স্পাইক প্রোটিনকে ঘিরে হচ্ছে তাতে স্পাইক প্রোটিন এর ‘রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন বা সাইট’ (এসিই ২ রিসেপ্টর এ যে অংশটা যুক্ত হওয়ার ফলে ভাইরাস কোষে ঢুকে পড়ে) এ কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। নীরিক্ষাধীন বেশিরভাগ টীকা আর গবেষণাধীন নতুন ওষুধের লক্ষ্য হলো স্পাইক প্রোটিন এর মূল অংশ এই আরবিডি বা ‘রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইন’।
তাই নীরিক্ষাধীন টীকাগুলোর কার্যকারিতায় এ রূপান্তর কোন প্রভাব ফেলবে না। কোভিড১৯ এর বিরুদ্ধে নতুন ওষুধ তৈরির যে গবেষণা চলছে, তাও বাধাগ্রস্ত হবে না।
লেখক – জেরিয়াট্রিক ও জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস, ইংল্যান্ড।