বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজারে অবৈধ চিকিৎসা সেবার রমরমা বাণিজ্য!

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৬৫ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

সৈয়দ মুন্তাছির রিমন, বর্তমানকন্ঠ ডটকম : মানব জীবনের মৌলিক অধিকারের অন্যতম একটি চিকিৎসা সেবা। অসুস্থ দেহের শেষ আশ্রয় হাসপাতাল। যদি এই হাসপাতাল অবৈধ হয় তাহলে জনগণের চিকিৎসার মান কতটুকু উন্নত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মৌলভীবাজারে ৪১টি লাইসেন্সবিহীন প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। এক সময় সারা দেশের প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো তদারকি করতো জামায়াতে শিবিরের নেতারা। মৌলভীবাজারে তার ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতার আসনে থাকার কারণে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুম মোঃ নাসিমের সময় পরিবর্তন দেখা দেয়। আওয়ামীলীগ এই খ্যাতকে নিজেদের দলীয় আওতায় নিয়ে বাণিজ্যিকরন করেন। এর ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজারে ৪১ হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। বরং আবার ১২টি প্রতিষ্ঠান শুরু থেকে লাইসেন্স না নিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় হাসপাতাল পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ১৫টি হাসপাতালকে একাধিকবার নোটিশ দেয়ার পরেও দীর্ঘ দিন যাবত লাইসেন্স নবায়ন করছে না। অনুসন্ধানে অবাক করা এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। সচেতন মহল মনে করছে জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের উদাসিনতার কারণে এমনটি হচ্ছে। সম্প্রতি জেলায় বেশ কয়েকটি হাসপাতাল লাইসেন্স না নিয়েও নতুন ভাবে উদ্বোধন করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন। আবার কয়েকটি হাসপাতাল পরোক্ষ ভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা পরিচালনা করছেন বলে সূত্র জানায়।এই জেলায় ৪১টি প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি হাসপাতাল কখনও লাইসেন্স নেয়নি। ১৫টি হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ গত ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে শেষ হয়েছে।

আবার ১৩টি হাসপাতালের লাইসেন্স চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়েছে। শুরু থেকে কখনও লাইসেন্স করেনি এমন হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে মৌলভীবাজার পৌর শহরের শাহ জালাল হাসপাতাল, হাবীব হেলথ কেয়ার হসপিটাল, আল-হামরা হাসপাতাল, সূর্যের হাসি ক্লিনিক, মেরিস্টোপস ক্লিনিক, কুলাউড়া চক্ষু হাসপাতাল, জুড়ী আধুনিক প্রাইভেট হাসপাতাল, জুড়ি আব্দুল আজিজ মেডিকেল হাসপাতাল, বড়লেখা বদর উদ্দিন জেনারেল হসপিটাল, হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটাল, সিটি ক্লিনিক এন্ড ডায়গনষ্টিক সেন্টার ও মজুমদার নার্সিং হোম।
এদিকে সিভিল সার্জন অফিস থেকে একাধিক বার নোটিশ পাঠালেও লাইসেন্স নবায়ন করেনি ইমদাদ সিতারা খান কিডনী সেন্টার, মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল, মেডিকেয়ার পলি ক্লিনিক, ইউনিক প্রাইভেট হাসপাতাল, লেইক ভিউ প্রাইভেট হাসপাতাল, বদরুন্নেছা হাসপাতাল, জেনারেল হাসপতাল, লাইফ কেয়ার হাসপাতাল, মুসলিম এইড কমিউনিটি হাসপাতাল, শ্রীমঙ্গল দীপশিখা ইনফার্টিলিটি কেয়ার এন্ড কাউন্সিলিং সেন্টার, মুক্তি মেডিকেয়ার সেন্টার, কেয়ার হাসপাতাল ও শ্রীমঙ্গল পলি ক্লিনিক। ভোক্তভোগীরা জানান লাইসেন্স বিহীন প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো সেবার নামে জেলার অসহায়, হতদরিদ্র ও নি:স্ব মানুষকে পুঁজি করে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা বাণিজ্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য বিভাগের নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো পরিচালনা করছেন। নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকলে সেই হাসপাতাল গুলোতে রয়েছে অতিরিক্ত শয্যা। কিন্তু বাড়ছে না তাদের সেবার মান। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্বলতার সুযোগে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করছে তারা। ১০ বেডের হাসপাতালে তিনজন (এমবিবিএস) ডাক্তার, ৬ জন নার্স (৩ বছরের ডিপ্লোমাধারী), ৬ জন আয়া/ওয়ার্ড বয় ও ৩ জন সুইপার থাকার কথা। এছাড়া যেসব ক্লিনিকে বেড সংখ্যা আরও বেশি তাদের স্টাফ সংখ্যাও বাড়বে। কিন্তু এগুলো সবই নীতিমালার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

জানা যায়, গ্রাম থেকে আসা রোগীর অপ্রয়োজনী বিভিন্ন পরীক্ষা এবং হাসপাতালে বেশি দিন রেখে বিলের অংক বড় করাই প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেই এমবিবিএস ডাক্তার কিংবা ডিপ্লোমাধারী নার্স। অদক্ষ নার্স দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ওই সব হাসপাতালের নার্সিং সেবা। যার ফলে প্রতিনিয়ত দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা। এনিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশার শেষ নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বছরে দু-একবার লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *