শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন

অবাধে পাথর উত্তোলন: বিপন্ন পরিবেশ

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৩ পাঠক
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন

পরিবেশ ডেস্ক:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে অবাধে পাথর উত্তোলন চলছে। জাফলংয়ের চিত্র আরও ভয়াবহ। গত ৩ বছরে পাথর উত্তোলনের সময় নিহত হয়েছেন ৭৬ জন পাথর শ্রমিক।

কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা। বাইরে থেকে ঠিক থাকলেও ভেতরে গেলে দেখা যায় এর দুরাবস্থা। পুরো টিলাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য গর্ত। পাথর উত্তোলনের জন্য ধ্বংস করা হয়েছে বিশাল এই টিলা। উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের এই টিলায় লালচে, বাদামি ও আঠালো মাটির নিচে রয়েছে বড় বড় পাথর খণ্ড। এসব পাথর উত্তোলনেই ধ্বংস করা হয়েছে টিলাটি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর হিসেবে, ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৬ জন পাথর শ্রমিক নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি এই টিলার গর্ত থেকে রুবেল মিয়া নামে এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে ২০ জানুয়ারি একই এলাকা থেকে আরেক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের চিত্র আরও ভয়াবহ। জাফলং হচ্ছে সিলেটের অন্যতম পর্যটন সমৃদ্ধ স্থান। কিন্তু অপরিকিল্পিত ও অবাধে পাথর উত্তোলনের ফলে জাফলং হারিয়েছে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাথর উত্তোলনের ফলে পুরো এলাকা ধূলা, শব্দ আর ধ্বংসলীলায় একাকার। এ কারণে জাফলং এখন পর্যকদের জন্য এক হাহাকারের নাম।

এই এলাকাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

অন্যদিকে, পরিবেশের বিপর্যয়রোধে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া- এই পাঁচ স্থান থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০১৪ সালে বেলা’র দায়ের করা একটি রিটের প্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে সব ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত।

অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে প্রায় প্রতিদিনই সিলেটের বিভিন্ন কোয়ারিতে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। সর্বশেষ ৪ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির কালাইরাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত আট কোটি টাকার যন্ত্র ধ্বংস করে প্রশাসন। বাঁধ কেটে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয় ২১টি কোয়ারি। এছাড়া গত ১৫ দিনে ধ্বংস করা হয়েছে অন্তত ১৫ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। তবু থামানো যাচ্ছে না বেপরোয়া পাথর ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাই নিয়ন্ত্রণ করেন পাথর কোয়ারিগুলো। তাদের মদদেই পাথর ব্যবসায়ীরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য পাথর উত্তোলন করে।

কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য্য জানান, পাথর উত্তোলন একেবারে বন্ধ করতে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। পাথর উত্তোলনে এই এলাকায় যে বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে তা কেবল প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করতে পারবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি ও শাহ আরেফিন টিলা কেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীদের নেতৃত্বে থাকার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম মিয়ার বিরুদ্ধে।

অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগে ২০১৭ সালে শামীমসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদফতর। অভিযুক্তদের প্রায় সকলেই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তবে মামলা দায়ের হলেও তারা প্রকাশ্যেই রয়েছেন এলাকায়।

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম মিয়া বলেন, ‘‘আমি আগে পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর এসবের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’’

সিলেট জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। আমাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে তাই প্রমাণ করে। জাফলংয়ের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। গোয়াইনঘাটের পাথর ব্যবসায়ীদের আমরা পর্যটন খাতে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করছি। তাতে পাথর শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *