বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন
বর্তমানকন্ঠ ডটকম, পেনিসেলভেনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র : আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে ইতিহাস গড়লেন ড. নীনা আহমদ। জিতিয়ে দিলেন অশ্বেতাঙ্গ ও নারীমহলকেও। ২৩৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম সম্মানিত হলো বাংলাদেশও।পেনিসেলভেনিয়ায় ‘অডিটর জেনারেল’ পদে পাঁচ লাখ ভোটে জিতলেন। ২৩৩ বছরের রাজ্যটিতে এই প্রথম শ্বেতাঙ্গ প্রার্থীর পরাজয়।
ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির এই ভোট অনুষ্ঠিত হয় ২ জুন। মোট পাঁচজন প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। প্রায় ৮০ হাজার ভোট কম পেয়েছেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি। তিনি পিটাসবার্গ সিটি কম্পট্রোলার মাইকেল ল্যাম্ব। ড. নীনার প্রাপ্ত ভোট প্রায় চার লাখ পঁচাশি হাজার। তিনি পেনসেলভেনিয়ার রাজধানী ফিলাডেলফিয়ায় বসবাস করেন। ২০১৪ সালে বারাক ওবামা সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ পান। এশিয়া-অ্যামেরিকা বিষয়ক কমিশনের উপদেষ্টা হন। প্যাসিফিক আইল্যান্ডও এই কমিশনের আওতাভুক্ত ছিলো।
ফিলাডেলফিয়া সিটি’র ডেপুটি মেয়র হন ২০১৫-তে। এই সময়ে তিনি রাজ্যে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিস্তার ঘটান। ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা হিসেবে অন্যান্য রাজ্যেও সক্রিয়তা দেখান। ২০১৮-তে তিনি রাজ্যের লে. গভর্ণর পদে প্রার্থী হন। নিয়ম অনুসারে আগের বছর ডেপুটি মেয়র পদে পদত্যাগ করেন। কিন্তু ভোটের আগে প্রতিপক্ষের কৌশলের শিকার হন। নির্বাচনী এলাকা আদালতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়। ফলে তিনি এলাকাবিহীন প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। ২০২০-এর নির্বাচনে তিনি অসামান্য সাফল্য দেখালেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, তিনি ব্যাপকভাবে মাঠ চষেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাপরবর্তী আন্দোলনকেও কাজে লাগিয়েছেন। নারী ও অশ্বেতাঙ্গদের প্রতিনিধিরূপেও জিতেছেন প্রথম বিজয়।
উল্লেখ্য, ২১ বছর বয়েসে তিনি মার্কিন প্রবাসী হন। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে পৈতৃকবাস। কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক-ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছিলেন। মেডিকেলে প্রথমবর্ষের ছাত্রীও ছিলেন। পরে মার্কিন বৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া’য় করেন পিএইচডি। বিষয় রসায়ন, সাল ১৯৯০। জেফারসন ইউনিভার্সিটি থেকে ফেলোশিপ করেছেন। মলিকুলার জেনেটিক্স তথা চিকিৎসাবিজ্ঞানে। রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসেবে পেশাগত দায়িত্বেও ছিলেন। শুরুতে খন্ডকালীন ‘অড জবও’ করেছেন।
বিয়ে হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আহসান নসরুল্লাহ’র সঙ্গে। স্বামী ব্যবসায় মনোনিবেশ করলে ড. নীনা চাকরি ছাড়েন। নিজে মনোনিবেশ করেন মার্কিন রাজনীতিতে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী মোর্চায় কাজ করেন। মার্কিন জীবনের কল্যাণচিন্তার ওপর গবেষণাও অনেক। পাশাপাশি বাংলাদেশের কল্যাণেও কাজ করতে আগ্রহী। ব্যক্তিগতভাবে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ। তারুণ্যে ঢাকায় ‘লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা’য় অংশ নেন। ‘রানার্স-আপ’-এর শিরোপাও অর্জন করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট বারাকা ওবামা ‘কমিশনের উপদেষ্টা’ হন ২০১৪-তে। পরেরবছর নিউইয়র্কে পান বাঙালি কমিউনিটির সম্বর্ধনা। এতে ‘নিবেদিত কবিতা’ পরিবেশন করেন কবি সালেম সুলেরী। তাতে ড. নীনা বিমোহিত হয়ে ওঠেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাইক্রোফোন হাতে নেন। বলেন, জীবনে আমাকে নিয়ে কেউ কবিতা লেখেননি। তাই আজকের দিন ও ক্ষণটি আমার জন্যে স্মৃতিময়। আমি কবি ও উদ্যোক্তাবৃন্দকে জানাই সবিশেষ শুভেচ্ছা, কৃতজ্ঞতা।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেলে বিষয়টির স্মরণ করেন। বলেন, কবি সালেম সুলেরী থাকলে খুশি হবো। ওনার বাংলা কবিতায় আমি প্রাণ খুঁজে পাই।
২০১৭-তে ‘পিপলএনটেক’ প্রতিষ্ঠানকেও একই কথা বলেন। প্রতিষ্ঠানটি ভার্জিনিয়ায় ‘কনভোকেশনে’র আয়োজন করেছিলো। প্রধান অতিথিরূপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো ড. নীনাকে। তিনি শর্ত দিয়েছিলেন– কবি সুলেরী থাকলে যাবো। উল্লেখ্য, ড. নীনার কার্যালয়ে ‘সুলেরীকাব্যের ব্যানার’ শোভিত রয়েছে। যদিও ব্যক্তিগতভাবে কবির সঙ্গে ওনার তেমন সংযোগ নেই। পারিবারিকভাবে ড. নীনা দুই কন্যা সন্তানের জননী।
নির্বাচনটি মূল ধারার হলেও বাঙালি কমিউনিটি প্রচুর খেটেছিলো। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের আপ্যায়ন করে স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশিরা। তাঁদের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযেগিতায় অন্যরাও হতবাক। অনেক ভোটকেন্দ্রে বাংলাদেশের পতাকাও শোভিত হয়। ড. নীনার পক্ষে নির্বাচন সমন্বয়ক ছিলেন ইমরুল চৌধুরী। অন্যতম উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ।
সাম্প্রতিক বিজয়ে ড. নীনাকে শুভেচ্ছাভিনন্দন জানানোর ঢল নেমেছে ।