শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:১০ অপরাহ্ন
স্বাধীনতার পর ৪৯ বছর কেটে গেছে, আজও সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার দুইটি বধ্যভূমির। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেওয়া সেই সব শহীদদের স্মৃতির শেষ চিহ্ন। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহতদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটির সংরক্ষণ না করায় নতুন প্রজন্মের কাছে অগোচরেই রয়ে গেছে এ অঞ্চলের শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস।
জানা গেছে, উপজেলার বাঁশবুনিয়া গ্রামের তালতলা বাজারে বধ্যভ‚মিতে জেলা পরিষদের অর্থায়নে স্বাধীনতার প্রায় দেড়যুগ পর ক্ষুদ্র পরিসরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। যা এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে অনেকটা জরাজির্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন অযতœ আর অবহেলায় বর্তমানে এই বধ্যভূমিটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে রয়েছে গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ। অপরদিকে, মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে শোনা যায় উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নে একটি গণকবর রয়েছে তবে অদ্যাবদি তার কোন স্মৃতি চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সলের ২৫ মে বুধবার সকালে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনী বাঁশবুনিয়া আমুয়া ও ছোনাউটা গ্রাম চারদিক ঘেরাও করে। পাক সেনারা ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাসী চালিয়ে মুক্তিকামী ৩৯ জনকে আটক করে। তারপর স্থানীয় তালতলা বাজারের পূর্ব পাশের নদীর পাড়ে দাড় করিয়ে একের পর এক গুলি করে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করা হয়। নির্দয়ভাবে হত্যার পর মরদেহ পুঁতে রাখা হয়েছিল সেখানে। এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুরো ইউনিয়নজুড়ে অভিযান চালায় পাক হানাদার বাহিনী। এসময় বাঁশবুনিয়ার ৩০জন আমুয়ায় ৮ জন ও ছোনাউটা গ্রামে ১জন শহীদ হয়েছিলেন। এর পরের দিন ২৬ মে বৃহাস্পতিবার স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ২১জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাক-বাহিনী।
শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন রিপন বলেন, স্বাধীনতার ৪৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও অবহেলা ও সংরক্ষনের অভাবে ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় বিলীন হতে বসেছে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সমুহ। যা শুধু বেদনাদায়ক না,স্পর্শকাতরও।
উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার নুরুল হক চাঁন জমাদ্দার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের এ দুটি বধ্যভূমি সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান উজির সিকার বলেন, অবহেলায় বিলুপ্তির পথে মুক্তিযুদ্ধের এই নিদর্শন। তবে স্থানটি সংরক্ষনের জন্য স্থানীয় জনতা প্রশাসনের কাছে বারবার দাবী জানালেও তা বরাবরই হয়েছে উপেক্ষিত। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি দেখেও গুরুত্ব দেয়নি কখনই। আবার রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বহীনতাও কম নয়। যুগের পর যুগ আর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তারা কখনই নেয়নি সংস্কার ও সংরক্ষনের কোন পদক্ষেপ। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম হারিয়ে ফেলবে এ এলাকার মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতি আর নিদর্শন। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমন প্রত্যাশা তার।