শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন

আজ ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোণা মুক্ত দিবস

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৭ পাঠক
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন

শ্রী অরবিন্দ ধর | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম:
বাঙ্গালীর রক্তের হুলিতে অর্জিত স্বাধীনতার চির অবিস্মরণীয় দিন আজ ৯ই ডিসেম্বর নেত্রকোণা মুক্ত দিবস। বাঙ্গালীর রক্তের হুলিতে অর্জিত স্বাধীনতার চির অবিস্মরনীয় দিন, ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা মুক্ত দিবস উদযাপন হোক স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও মুক্তিযোদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার সোপান। শহীদ আবু খাঁ, আব্দুর রশিদ ও আব্দুস সাত্তারের তাজা রক্ত ঝড়ে হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল নেত্রকোনা ১৯৭১ সনে ৯ ডিসেম্বর।

এ দিনটিতে নেত্রকোনার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বর্বর হায়নাদের ও দেশীয় রাজাকার, আলবদর, মীর্জাফরদের কবল থেকে মরনপণ যুদ্ধ করে মুক্ত করেছিল নেত্রকোনাকে। ‘৭১ এর পনের এপ্রিল পাক হায়নারা নেত্রকোনা শহরে প্রবেশ করে শহরাঞ্চল সহ অধুনা নেত্রকোনা মহকুমা সদর থানা ও বর্তমান জেলার ১০টি উপজেলার সর্বত্র ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। শুরু করে নির্বিবাদে নারী নির্যাতন মানুষ হত্যা লুটতরাজ ও অগ্নি সংযোগের মাধ্যমে নারকীয় পৈশাচিক তান্ডব লীলা।
বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর এ তান্ডব লীলা ছিল ব্যাপকতা। দেশীয় মীরজাফররা চিহ্নিত করে দিত হিন্দু লোক ও হিন্দু বাড়িঘর। অনেক সময় নরপশুর দল যৌনাঙ্গ কাটা না আকাটা চিহ্নিত করার জন্য পুরুষদের উলঙ্গ করে দেখে কাটা না দেখলেই চালাত তাদের বক্ষে বুলেট-ব্যানেট। এভাবে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করেছে শহর এবং গ্রামের অনেক আওয়ামী রাজনৈতিক নেতাকর্মী সহ স্বাধীনতা অর্জনে ঝাপিয়ে পড়া ব্যাক্তিদের এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর। ৭১ এর ২৫ মার্চ ঢাকায় ধ্বংস যজ্ঞ শুরু হবার পর থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত নেত্রকোনা ছিল পাক বাহিনী মুক্ত।

শুধু নেত্রকোনার মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রশিক্ষণ চালাতো। ২৯ এপ্রিল পাক বাহিনী অতর্কিত ভাবে শহরের পিটিআই ইনষ্টিটিউটে এবং ডাক বাংলায় প্রথম আস্তানা গাড়ে। ওরা শুরু করে পৈশাচিক কর্মকান্ড এবং স্বাধীনতা আন্দোলন কারী নেতা কর্মী ছাত্র যুবক ও বুদ্ধিজীবি হত্যা। এদিকে শত-শত ছাত্র, ছাত্রলীগ কর্মী, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী ও জোয়ানরা সেচ্ছায় সতস্ফুর্ত ভাবে দেশ, জাতি রক্ষায় মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষনে রত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় আনোয়ার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধের সদর দপ্তর স্থাপন করে।

পরবর্তীতে কৌশলগত কারণে সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে দপ্তর স্থানান্তরিত করা হয়। গোপনীয়তা ও যোগাযোগের স্বার্থে শহরের উত্তর-পূর্বে রাজুর বাজার সংলগ্ন ইটের ভাটায় স্থাপন করে নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে নেত্রকোনা ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের জঙ্গি কর্মীরা ট্রেজারী ম্যাগাজিন লুট করে তিনশত থ্রিনট থ্রি রাইফেল ও অগনিত গোলাবারুদ হস্তগত করে। শুরু হয় জেলায় পাকশত্রুদের হঠাতে ব্যাপক প্রতিরোধ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ছিল ইপি আর, আনসার, পুলিশ, মুক্তিকামি জনতা ও সংগ্রাম পরিষদের নেতাকর্মী। ৭১ এর ২৮ জুন মুক্তিযোদ্ধারা দূর্গাপুরের বিজয়পুর পাকসেনাদের ক্যাম্পে প্রথম আক্রমন চালায়।
৭ জুলাই মুক্তিসেনারা সদর উপজেলার বাশাঁটি গ্রামে কংস নদের তীরে ৭ জন পাক সেনাকে জীবন্ত অবস্থায় গ্রেফতার করে। ১৩ আগষ্ট কেন্দুয়া থানা আক্রান্ত হলে ৬ জন পাক বাহিনীর পুলিশ নিহত হয়। ২৮ আগষ্ট পাক বাহিনী যখন মদন উপজেলার বহেরখলা নদী পার হবার চেষ্টা করে তখন মুক্তিযোদ্ধারা অর্তকিতে তাদের উপর আক্রমন চালালে শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর, ৯ অক্টোবর, ২৯ অক্টোবর, ২ নভেম্বর এবং ৩০ নভেম্বর যথাক্রমে কেন্দুয়া, মোহনগঞ্জ, ঠাকুরাকোনা এবং পূর্বধলায় পাক সেনাদের সাথে মুক্তিফৌজের গেড়িলা হামলায় ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনেক পাকসেনাকে নিহত করে। ৬ ডিসেম্বর দুর্গাপুর উপজেলার গাড়ো পাহাড়ের পাদদেশে বিজয়পুর মুক্তিবাহিনীর আক্রমনে পাক সেনারা নেত্রকোনায় চলে আসে এবং ৮ ডিসেম্বর রাতে পাক সেনারা নেত্রকোনা শহরের নাগরা এলাকায় বিএডিসির ফার্ম চত্তরে একত্রিত হয়, ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে যাবার কৌশল অবলম্বনে।

এদিকে বারহাট্টা উপজেলার ফকিরের বাজার হাইড আউট ৮ ডিসেম্বর রাত প্রায় ১০টায় প্লাটন কমান্ডার বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা, বর্তমান সংসদ সদস্য (মৎস ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রি)আশরাফ আলী খান খসরু ও তার টু-আই-সি আবু সিদ্দিক আহম্মদ এবং কম্পানী কমান্ডার আনোয়ার মাষ্টার ও প্লাটন কমান্ডার আব্দুল মতিন সহ সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিয়র রহমান এবং ওয়ারলেস ম্যাসেজের নির্দেশে পরস্পর যোগাযোগ সন্ধিক্ষনে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হয়, নেত্রকোনা সদরে চূড়ান্ত আক্রমন করতে হবে এ সিদ্ধান্ত অনুসারে রাত ১২টার দিকে সকলেই নেত্রকোনা আক্রমনের উদ্দেশ্যে ফকিরের বাজার হাইড আউট ত্যাগ করে সম্মিলিত গ্রুপ ৪ ভাগে বিভক্ত হয়।

১টি গ্রুপ আসরাফ আলী খান এর নেতৃত্বে ফায়ারিং পার্টির দায়িত্বে শহরের উত্তর দিকে মার্কেজের পাশে অবস্থান নেয়। আনোয়ার মাষ্টার এর নেতৃত্বে ১টি গ্রুপ কাভারিং পার্টির দায়িত্বে শহরের পূর্বদিকে রুহী গ্রামে অবস্থান নেয়, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে ১টি গ্রুপ শহরের উত্তর পশ্চিম পাশে মঈনপুর গ্রামে কাট-অব পার্টির দায়িত্বে অবস্থান নেয় এ দিনটি ছিল ৭১ এর ৯ ডিসেম্বর প্রভাত প্রায় ৪ ঘটিকা এদিকে আবু সিদ্দিক আহম্মদ এর নেতৃত্বে এ্যামবুস পার্টি শহরে দক্ষিন দিকে নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ রাস্তার পাশে ভোর ৫টার দিকে এ্যামবুসরত, তখনও কোন ফায়ারিং শুরু হয়নি। পশ্চিম নাগড়া থেকে কমান্ডার উত্তর দিকে অগ্রসর হলে থানা বিল্ডিংয়ের উপরে পাহাড়ারত পাকশত্রু দেখা মাত্রই লড়াইয়ের নিয়ম বহির্ভূত এস এম জি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে, এখান থেকে সরে এসে সবাই মোক্তারপাড়া ব্রিজের দক্ষিন দিকে কৃষি ফার্মের পূর্ব-পশ্চিমে সরাসরি নারিকেল গাছের নীচে পজিশন নিয়ে শুরু করে তুমুল যুদ্ধ।

অপর দিকে আটপাড়া থেকে পালিয়ে আসা পাক সেনাদের দুইটি গ্রুপের মধ্যে ১টি গ্রুপ মাঝারি ধরনের অস্ত্র নিয়ে ব্যাপক গুলি বর্ষন শুরু করে এ্যামবুস পার্টির উপর। মুক্তিযোদ্ধার ফায়ারিং পার্টি ও কাভারিং পার্টি বেমালুম আক্রমন শুরু করে দেয়। এদিকে পলায়ন কারী পাক সেনারা মোক্তার পাড়া ব্রীজের আশেপাশে বেপরোয়া গুলি বর্ষন করে। এতে মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ ব্যাপক সাহস নিয়ে বীরদর্পে পাল্টা আক্রমন চালায় অনেকেই বেপরোয়া হয়ে যায় তার মাঝ থেকে দেশ জাতি রক্ষায় পাগলপারা হয়ে শহীদ আব্দুর রশিদ দাঁড়িয়ে গুলি বর্ষণ চালালে শত্রু বাহিনীর ১টি গুলি তার বক্ষ ভেদ করার পর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী যোদ্ধা আক্কাছ আলী আহম্মদ গামছা দিয়ে আহত স্থান বেঁধে তাকে শুইয়ে রাখে।

যার প্রাণের বদলিতে মুক্ত দিবস উপলক্ষে স্মৃতি চারণ করছি তার আর স্বাধীন নেত্রকোনা দেখা হল না সকাল সাড়ে ৬টায় অল্প সময় মধ্যে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন পরক্ষনে শত্রু বাহিনীর আর ১টি গুলি প্লাটন কমান্ডার আবু সিদ্দিক আহম্মদের ডান হাতের দুটি আঙ্গুল ভেঙ্গে এস এম জির ম্যাগজিন জয়েন্ট ভেঙ্গে গুলিটি বুকের ডান পাশে বিদ্ধ হয়। মারাত্বক আহত অবস্থায় তাকে সহ যোদ্ধা আক্কাছ আলী আহম্মদ কমান্ডারকে পিঠে তুলে ক্রসিং করে জয় নগরের দক্ষিন পাশে রেখে পুনরায় পূর্ব অবস্থানে চলে এসে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়।

চলে উভয় পক্ষের জুরালো লড়াই এক পর্যায়ে উদভ্রান্তের মত মেইন রোড দিয়ে গুলি করতে-করতে আব্দুল জব্বার (আবু খাঁ) ব্রীজের পাশে চলে আসলে শত্রু বাহিনীর একটি গুলি তার বক্ষ ভেদ করলে আত্ম চিৎকার দিয়ে তিনি ব্রীজ সংলগ্ন জমিতে লুটিয়ে পড়েন সহ যোদ্ধার প্রতি সহ যোদ্ধার আন্তরিক টান ছিল চুম্বকের মত তাই গুরুতর আহত আবু খাঁ কে উদ্ধার করার জন্য পাগল হয়ে ছুটে গিয়ে আবু সিদ্দিক আহম্মেদ (ছাত্তার) আবু খাঁকে ধরে নিয়ে আসার সময় পাক সেনাদের আর ১টি গুলি ছাত্তারের মাথার খুলি উরিয়ে দেয় এমতাবস্থায় দুই সহযোদ্ধা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঢেলে দেয় বুকের তাজা রক্ত, নেত্রকোনা উদীয়মান স্বাধীনতার সূর্য আরো গাঢ়ো লাল হয়ে উঠার জন্য।

সকাল সময় প্রায় ৭টা পাক বাহিনীর মটার সেলের বেপরোয়া আঘাতের ফলে নেতৃত্ব বিহীন এ্যামবুস পার্টি তিনটি শহীদের লাশ ফেলে রেখেই এ স্থান ত্যাগ করে সাথী হারানো বেদনায়, প্রতিশোধের নেশায় কাঠলি দিয়ে পিছিয়ে দক্ষিন মালনি দিয়ে নদী পার হয়ে শহর আক্রমনের উদ্দেশ্যে কিন্তু ভাগ্যে দেখা দিল বিরম্বনা আটপাড়া থেকে আগত মালনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত পাক সেনাদের অপর ১টি দলের সম্মুখিন হয় তারা। এসময়ে আহত হয় ফেরদৌস আহম্মদ পিছনের কমড়ের নীচে গুলি লেগে জ্ঞান হারায় সে ধান ক্ষেতে।

পাক বাহিনী এ সুযোগে শহরে প্রবেশ করে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও মুক্তি যোদ্ধা দল পিছনে ধাওয়া করতে পারেনি এদিকে রুহি গ্রামে অবস্থান রত অপর মুক্তি যোদ্ধা দল গুলি বর্ষন করে। এ্যামবুস পার্টির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কাভারিং পার্টির উপর আরা-আরি ভাবে আঘাত হানে তাই অবশেষে এ্যামবুস পার্টি বাধ্য হয়ে কাভারিং পার্টির সঙ্গে যোগসুত্রতার জন্য অপেক্ষমান ছিল কিছু সময় এদিকে পাক হায়নারা সকলেই ময়মনসিংহ যাবার পথে পা বাড়ায় এবং শহরের রাজাকার আলবদর আল সামস বর্তমান স্বাধীনতা বিরোধী মীরজাফররা তিন শহীদের লাশ পায়ে রশি বেধে টেনে থানায় নিয়ে আসে এবং নৃশংস ভাবে লাশের উপর বেনেট বেন্ড দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে আনন্দে মেতে উঠে কিন্তু তাদের আনন্দ উল্লাস অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।

রাজুর বাজার দিয়ে এ্যামবুস পার্টি কাভারিং পার্টি ও ফায়ারিং পার্টি গোপনীয় ভাবে শহরে প্রবেশ করে উকিলপাড়া দিয়ে চুপিসারে সবাই গ্রেনেড হাতে নিয়ে থানার ভিতরে নিক্ষেপ করে চিরতরে দাবিয়ে দেয় শয়তান মীরজাফর, রাজাকার, আলবদরদের অমানবিক কান্ড। এদের অনেকেই, মোক্তিযোদ্ধারা তাৎক্ষনিকভাবে আটক করে এলএমজি দিয়ে থানার সম্মুখে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মগড়া নদীতে ফেলে দেয়। হায়না ও শকুনদের কবল থেকে মুক্ত হয় নেত্রকোনার আকাশ-বাতাস এবং স্বাধিনতার লাল সূর্য গাঢ় লাল হয়ে উদিত হয়, ১৯৭১ সনের ৯ ডিসেম্বর দিনটিতে। সন্মুখ যুদ্ধে এ দিনটিতে শহীদ হয়েছেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাঠপোরা গ্রামের সাদির উদ্দিনের পুত্র আব্দুর রশিদ, গাবরাগাতি গ্রামের মোঃ হাসান খাঁর পুত্র আব্দুল জব্বার (আবু খাঁ) ও ডোমন শেখের পুত্র আব্দুস সাত্তার তাদের পরিচিতি সংগ্রহে এবং মুক্ত দিবসে সঠিক তথ্য বিবরনীতে সহযোগীতা করেন আমার প্রতিবেশী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ এখলাস আহম্মেদ কোরাইশী।

শহীদ তিনজন আজ চির নিদ্রায় নেত্রকোনা শহরস্ত সাতপাই গোরস্থানে, তারা আজও নেত্রকোনা বাসির অন্তরে-অন্তরে চিরজীবি কিন্তু একটি কথা উল্লেখ না করে ও লেখাটি শেষ করতে পারছিনা এ শহরে যারা শকুনের ভূমিকায় ছিল যে সকল নামধারী বুদ্ধিজীবিরা, পাক হানাদের কাছে নিজ সত্তা বন্ধক রেখেছিল। নব প্রজন্মের কাছে এ ধরনের বেজন্মাদের কারা চিহ্নিত করবে এটাই প্রশ্ন জাগে। যদিও নেত্রকোনায় মুক্ত দিবস পালিত হয় প্রতিবছর কিন্তু নব প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার চেতনা করো জাগেনি। নেত্রকোনা মুক্ত দিবস বা স্বাধীনতা, নদীর বানে ভেসে আসেনি তাই নব প্রজন্মের মানসপটে আংশিক ইতিহাস তুলে ধরছি যখন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশের ব্যাবসা বানিজ্য মিল কলকারখানা ও জাতীয় সম্পদ সব দখল করে নিয়ে এদেশের কিছু দালালদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের চাকুরী সহ নানাবিদ প্রলোভনে স্বদেশের বিরুদ্ধে অনুপ্রানিত করে।

১৭৫৭ সন থেকে ১৮৭৫ সন পর্যন্ত বিদেশীদের তৎপরতায় বিলিন হয়ে যায় বাঙালী চেতনা এমনি সন্ধিক্ষনে কিছু-কিছু সচেতন সুধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সূচনা করার নানা প্রক্রিয়ায় শুরু করে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, অবশেষে দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সনে ভারত পাকিস্তান নামে দুটি দেশের সৃষ্টি হয় এবং ইংরেজরা তাদের স্বার্থে ‘৪৭ এর ভাগাভাগির সময় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার বীজ রোপন করে যায়, তাই হল বাঙালীর জীবনে এক অভিশাপ এ বীজ আজও অব্যাহত রয়েছে যতই অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলা বা লেখা হচ্ছে।

এদিকে দুটি দেশ স্বাধীন হলেও আজ পর্যন্ত স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি, আবার পাকিস্তানকে দুভাগে ভাগাভাগি করা হল একটি পশ্চিম পাকিস্তান আর একটি পূর্ব পাকিস্তান এ দু’দেশের দুরত্ব এগারশত মাইল মাঝখানে রয়েছে ভারত। পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ লুটে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানকে সমৃদ্ধ করা হয়। সর্বত্র ছিল পশ্চিমাদের দাপট সে সময় ঢাকায় এক বক্তব্যে কায়দে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাঙালীর মাতৃভাষা বাংলাকে অস্বীকার করে উর্দূকে রাষ্ট্র ভাষা করার ঘোষনা দেয় এ প্রতিবাদে তৎসময় ঢাকার ছাত্র-জনতা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক দল রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে মুখর হয়। শুরু হয় ভাষা টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম ১৯৪৮ সন থেকে পর্যায়ক্রমে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে রূপ নিয়ে ১৯৫২ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে এবং ১৩৫৮ সন থেকে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে রূপ নিয়ে ১৯৫২ সনের ভাষা টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম ১৯৪৮ সন থেকে পর্যায়ক্রমে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে দানা বেঁধে ১৯৫২ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে এবং ১৩৫৮ সনের ৮ ফাল্গুন লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

প্রথম শহীদ হয় সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক সহ আরো অনেকেই তখন থেকেই শুরু হয় স্বাধীনতার সংগ্রাম। ধারাবাহিকতায় চলে ১৯৫২এর ভাষা আন্দোলন, ৫৬এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ৫৮ এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ‘৬২এর ছাত্র আন্দোলন, ৬৬তে আওয়ামী লীগ কর্তৃক ঘোষিত ছয় দফার আন্দোলন, ‘৬৯ এর গন অভ্যূত্থানে বাঙালীদের সাহস বৃদ্ধি পেলে গন অভ্যূত্থানের পর ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসলে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন ঘোষনা করা হয়। ’

৭০ এর নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃতে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ভুট্টু ইয়াহিয়ার চক্রান্তে আওয়ামী লীগকে জনতার রায় উপেক্ষা করে ক্ষমতায় বসতে দেওয়া হল না। তখন থেকেই বাঙালী জাতি শয়তান আইয়ুব ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের নামে ভুট্টু ইয়াহিয়া আলোচনার ফন্দি এটে তালবাহানা করায়, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান রেসকোর্সের বিশাল জন সমুদ্রে স্বাধীনতার ডাক দেন ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে ইয়াহিয়া বাহিনী নিরীহ বাঙালীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে ঢাকায় লাখ লাখ বাঙালীকে নির্বিচারে হত্যা করে। বাঙালী জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পশ্চিমারা উঠে পড়ে লাগে কিন্তু বীর বাঙালী জাতি মাথা উচু করে ঝাঁপিয়ে পড়ল মাতৃভূমি রক্ষায়।

ব্যাপক গন আন্দোলনের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় নব প্রজন্মের কাছে আজকে স্বাধীনতা ও জাতি রাজনৈতিক বিপর্যয়ে, অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে সার্বিকভাবে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। তাই আজ ৯ ডিসেম্বর দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় ৪৮ বছর পর ফিরে আসা বিজয় মাসে স্মৃতি চারণে প্রত্যাশা করছি সারা দেশে মুক্ত দিবস উদযাপন হোক জাতীয় পতাকা ও সার্বভৌমত্ব স্বাধীনতার মর্যাদা অক্ষণ্ন রাখার হাতিয়ার ও মুক্তিযোদ্ধের বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সোপান। আজ নেত্রকোণা মুক্ত দিবস এ দিনটি এবং স্বাধীনতা নদীর বানে ভেসে আসেনি- আংশিক ইতিহাস- জেনে স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ হোক এ প্রত্যাশা-

অরবিন্দ ধর
সাংবাদিক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম:
খেলাঘর জাতীয় পরিষদ সদস্য
মোবাইল: ০১৭২৪ ১৪১৬৩৩
ই-মেইল : abdspress2012@gmail.com
তারিখ ঃ ০৯/১২/২০১৮ইং।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *