শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫০ অপরাহ্ন

এক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৮.৪৪শতাংশ

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৮ পাঠক
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫০ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,মঙ্গলবার,০২ জানুয়ারী, ২০১৮ : সদ্য বিদায়ী ২০১৭ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

সংস্থাটি বলছে, গত এক বছরে পণ্যমূল্য ও সেবা-সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। পূর্ববর্তী ২০১৬ সালে এই বৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৭ সালে জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান।

তিনি জানান, বিগত বছরের তুলনায় ২০১৭ সালে খাদ্যপণ্য বিশেষ করে চালের মূল্য বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্যে থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা-সার্ভিসের তথ্য এই পর্যালোচনায় বিবেচনা করা হয়েছে। এই হিসাব শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রকৃত যাতায়াত ব্যয় বহির্ভূত।

যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে

২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সব ধরনের চালের গড় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে তুলনামূলকভাবে মোটা চালের দাম সরু চালের দামের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। দেশি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ৪০ দশমিক ৯৯ শতাংশ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজে বেড়েছে ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। শাক-সবজিতে গড়ে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। তরল দুধে বেড়েছে ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, গরুর মাংসে বেড়েছে ১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। চিনি ও গুড়ে গড়ে বেড়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ, লবণে বেড়েছে ১১ দশমিক ০৩ শতাংশ, ভোজ্য তেলে বেড়েছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ, চা পাতায় বেড়েছে ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ। দেশি শাড়িতে বেড়েছে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, গুঁড়ো দুধে বেড়েছে ৫ দশমিক ১১ শতাংশ, মাছে বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ডালডা ও ঘিতে বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ, দেশি মোরগ-মুরগিতে বেড়েছে ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ডিমে বেড়েছে ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আটা ময়দায় বেড়েছে ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ডালে বেড়েছে ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গেঞ্জি, গামছা ও তোয়ালেতে গড়ে দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। সেবা খাতে ২ বার্নার গ্যাসের চুলার গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, আবাসিক খাতে বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, বাণ্যিজিক খাতে বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ওয়াসা সরবরাহকৃত পানির মূল্য প্রতি হাজার লিটারে বেড়েছে ৫ শতাংশ। বাসা ভাড়া বেড়েছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ।

যেসব পণ্যের দাম কমেছে

দেশি মসুর ডালের দাম কমেছে ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ, আমদানিকৃত মসুর ডালে কমেছে ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ, ফার্মের ডিমে কমেছে ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নারিকেল তেলে কমেছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, আলুর দাম কমেছে গড়ে ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। রসুনে কমেছে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং জ্বালানি তেলে কমেছে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ। সার্বিকভাবে মাছের দাম বাড়লেও সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে উৎপাদিত কই মাছের দাম কমেছে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ আর ইলিশের দাম কমেছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ইলিশের দাম ভরা মৌসুমে সকল শ্রেণির ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার নাগালে নেমে এসেছিল। এটা ছিল প্রজননের সময় সরকারের ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার সুফল।

চালের মূল্য ও খাদ্য নিরাপত্তা

খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম প্রায় সারা বছর জুড়েই দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা বাজারে এক পর্যায়ে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৫০ টাকারও বেশি এবং সরু চালের (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) দাম প্রতি কেজি ৬৫-৭২ টাকায় উন্নীত হয়। সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানির নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। বেসরকারিখাতে চাল আমদানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমদানি শুল্ক হার সর্বমোট ২৮ শতাংশ থেকে প্রথমে ১০ শতাংশ ও পরবর্তীতে ২ শতাংশে হ্রাস করা হয়। মোটা চালের দাম ৪২-৪৩ টাকায় নেমে আসে।

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিগত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দুই ধাপে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রথম দফায় ০১ মার্চ ও দ্বিতীয় দফায় ০১ জুন হতে গ্যাস বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে উচ্চ আদালত দ্বিতীয় দফায় দুই বার্নার চুলায় ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য মাসিক ৮০০ টাকা থেকে ৯৫০টাকায় নির্ধারণ অবৈধ ঘোষণা করে ৮০০ টাকায় স্থির করে। এতে বাসা-বাড়িতে গ্যাস ব্যবহারকারী সকল ভোক্তার মাসিক ১৫০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

নভেম্বর ২০১৭ তে বিইআরসি ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, যা ১ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে বিইআরসি বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধির আবেদন প্রত্যাখান করেছে। ক্যাব মনে করে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি বিআরসির সিদ্ধান্ত ও ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত হয়নি।

যাতায়াত ব্যয়

২০১৭ সালে গণপরিবহনে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোন উন্নতি হয়নি। এ বছর মোবাইল অ্যাপভিত্তিক গাড়ি শেয়ার নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে। এতে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চালকদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমেছে। তবে ব্যবহারকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসবের একটি আইনি কাঠামোয় আনা জরুরি বলে মনে করে ক্যাব। ঢাকায় বাস চলাচলের ক্ষেত্রে ফ্রানচাইজ প্রথা প্রবর্তন, র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ যোগাযোগখাতের প্রকল্পসমূহের দ্রুত ও সময়মত বাস্তবায়ন হলে অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।

স্বাস্থ্য সেবা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। হৃদরোগ, কিডনি প্রতিস্থাপনসহ অনেক জটিল রোগের চিকিৎসাই এখন দেশে সম্ভব। তবে ২০১৭ সালেও বরাবরের মতো স্বাস্থ্যখাতে সেবার মান ছিল অতীতের মতই প্রশ্নবিদ্ধ ও ব্যয়বহুল।

শিক্ষা খাত

২০১৭ সালে শিক্ষা খাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস ছিল ব্যাপক আলোচিত ও নিন্দিত। কোচিং বাণিজ্য এবং নোট ও গাইড বইয়ের ব্যাপক ব্যবহার দেশবাসীকে পূর্ববর্তী বছর সমূহের মতই গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রেখেছে। সকল স্তরে শিক্ষার মানের উন্নয়ন জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

উন্নয়ন ও ভোক্তাস্বার্থ

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। বার্ষিক সাত শতাংশের অধিক হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। বিশ্ব ব্যংক বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত দেশ হিসাবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ইতোমধ্যে ১,৬০০ মার্কিন ডলারের সীমা অতিক্রম করেছে। দারিদ্র সীমার নিচে জীবন যাপনকারী জনসংখ্যা শতকের হিসাবে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। তবে এখনও প্রায় দুই কোটি মানুষ অতি দরিদ্র।

২০১৭ সালে চালসহ বেশকিছু নিত্যপয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ দেশের সার্বিক উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে অনেকে কষ্টে আছেন। অনেকের জমানো সঞ্চয় হ্রাস পাচ্ছে। এ প্রবণতার প্রতিকার জরুরি।

এসময় জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ১০ দফা সুপারিশ করে ক্যাব। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম ও নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *