বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

কোভিড১৯ : কেমন করে ছড়ায় জনে জনে মানুষে মানুষে

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৯ পাঠক
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

ডাঃ ইসমত কবীর, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, যুক্তরাজ্য : কার্যকর সংক্রমণ এর জন্য জীবাণুর ডোজ একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেমন কলেরা রোগের বেলা এ ডোজটি হচ্ছে এক লক্ষ, তার মানে সাধারণভাবে একজন কলেরা আক্রান্ত হতে হলে তাঁকে একলক্ষ কলেরা জীবাণু খেতে হবে। অন্যদিকে ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি বা রক্ত আমাশার বেলা এ সংখ্যাটা মাত্র দশ।

কোভিড১৯ এর ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটা সম্পর্কে এখন ধারণা পাওয়া গেছে। প্রতীয়মান হচ্ছে সংখ্যাটা গড়পড়তা এক হাজার। শুধু এটাই নয় কেমন করে এ এক হাজার ভাইরাস কণা একজনকে আক্রান্ত করতে পারে তারও কিছু হিসেব-নিকেষ এর হদিস মিলেছে এখন।

ড্রপলেট বা বিন্দুকণা দিয়ে এ রোগটি ছড়ায়।
আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিষ্ক্রান্ত ড্রপলেটে ভাইরাস কণার সংখ্যা
(১) শ্বাস-প্রশ্বাস ~২০ প্রতি মিনিটে
(২) কথা বলা ~২০০ প্রতি মিনিটে
(৩) হাঁচি প্রতিবার ~২০ কোটি প্রতিবারে*
(৪) কাশি প্রতিবার ~২০ কোটি প্রতিবারে*

*পর্যাপ্ত বায়ু প্রবাহ বা ভেন্টিলেসন এর ব্যবস্থা না থাকলে বদ্ধ ঘরে এ কণাগুলো বেশ কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে।

এখন কেউ যদি সামাজিক দূরত্বের ছয়ফুট না মেনে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকেন আর ব্যক্তিটি যদি চুপচাপও থাকেন তা’হলে সংক্রমণ ঘটতে সময় লাগবে মোটামুটি চল্লিশ পঞ্চাশ মিনিট। আর তিনি যদি সামনা সামনি কথা বলেন তা’হলে সংক্রমণের জন্য চার পাঁচ মিনিটই যথেষ্ট। একবার চিন্তা করুন, হাঁচি-কাশি হলে কী ঘটবে।

এখন সামাজিক কাজকর্মে ঝুঁকি কতটুকু দেখা যাক।

(১) কারও কাছাকাছি অবস্থানঃ কম ঝুঁকি (চল্লিশ মিনিট পর্যন্ত )
(২) কেউ পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে, দৌড়ে গেলে বা সাইকেল চালিয়ে গেলেঃ কম ঝুঁকি
(৩) দোকানে বাজার সওদা (সামাজিক দূরত্ব রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে)ঃ কম ঝুঁকি
(৪) বদ্ধ ঘরে অফিসের কাজঃ প্রবল ঝুঁকি
(৫) রেস্তোরাঁঃ বাইরে – সামাজিক দূরত্ব মেপে বসলে বিধি মেনে চললেঃ মাঝারি ঝুঁকি, ভেতরেঃ প্রবল ঝুঁকি
(৬) সিনেমা, কনসার্ট, ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানঃ প্রবল ঝুঁকি
(৭) অফিস, স্কুলঃ প্রবল ঝুঁকি
(৮) বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান, গণজমায়েতঃ প্রবল ঝুঁকি
(৯) খোলামেলা স্থান, সামাজিক দূরত্ব মেপে স্বল্পকালীন অবস্থানঃ কম ঝুঁকি
(১০)গণশৌচাগার, গণপরিবহনঃ প্রবল ঝুঁকি

খাবার দিয়ে পানি দিয়ে ছড়ায় না

খাবার, ফল-মূল, শাক-সব্জি, মাছ-মাংস, পানি-পানীয়, পত্র-পত্রিকা, আসবাবপত্র এসবের মাধ্যমে সংক্রমণের এখন পর্যন্ত জোরালো কোন প্রমাণ মেলেনি। কোন বস্তুর উপর ভাইরাস কণার উপস্থিতি মানেই সংক্রমণ নয়৷ নির্দিষ্ট সংখ্যক ভাইরাস কণাকে নাক-মুখ-গলা পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে এবং শুধুমাত্র হাত ধোওয়ার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই এ ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব।

পোষা প্রাণী থেকে ছড়ায় না

ঘরের কোন প্রাণী, পোষা জীব বা পাখি থেকে সংক্রমণ এর সম্ভাবনা নেই।

মৃত ব্যক্তি থেকে সহজে ছড়ায় না

আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস এর বিস্তার লাভ বন্ধ হয়ে যায়। মৃত ব্যক্তির শ্বাস-কথা-হাঁচি-কাশি এসব নেই বলে ড্রপলেট এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। শুধু বডিফ্লুইড বা দেহ থেকে বের হওয়া শ্লেষ্মা ইত্যাদির সংস্পর্শে সরাসরি না এলেই হলো। মৃত ব্যক্তিকে অচ্ছুৎ জ্ঞান করার কোন কারণ থাকতে পারে না। যথাযথ সম্মান-শ্রদ্ধার সাথে মৃত ব্যক্তির সৎকার সামাজিক দায়িত্ব।

অকারণ ভীতি নয়, বিজ্ঞান ভিত্তিক স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলতে হবে।

লেখক : জেরিয়াট্রিক ও জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রেজিস্ট্রার, কুইন এলিজাবেথ দা কুইন মাদার হসপিটাল, মারগেট, কেন্ট, যুক্তরাজ্য।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *