শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন

কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবায় যুব-সম্পৃক্ততার পাশাপাশি দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে

বর্তমানকন্ঠ ডটকম, ঢাকা।  / ৩৬ পাঠক
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন

করোনা মহামারী সারা বিশ্বকে এ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জর সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যুর হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমাদের দেশেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিগত জুন মাসে ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’-এর জরিপ অনুযায়ী করোনা মহামারীজনিত সাধারণ ছুটিকালীন নগর ও গ্রামে আরো প্রায় ১.৫ কোটির বেশি মানুষ দরিদ্র্যাবস্থায় পতিত হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের নানা প্রান্তের যুবরা সাধারণ মানুষের কাছে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা ও করণীয় সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা, খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদান, স্বাস্থ্য-সহায়ক উপকরণ বিতরণসহ নানা ধরনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। অনলাইনেও নানা কার্যক্রম নিয়ে তারা সক্রিয় ছিল। আসন্ন দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার ক্ষেত্রেও যুবরা তাদের সাধ্যানুযায়ী ভূমিকা পালন করবে এবং সরকারও তাদের কাজে লাগানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত যুবদেরকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসবে। ২৪ নভেম্বর, ২০২০ নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং প্রতিনিধিদের সম্মিলিত জোট ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ এবং যুব সমাজের প্লাটফর্ম ‘ইয়ুথ এসেম্বলি’ আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ ও যুব সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক যুব সিম্পোজিয়ামে বক্তারা এসব বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ ও ‘পিকেএসএফ’-এর চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আখতার হোসেন। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন ও দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ। সম্মানীয় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিসিও কোঅপারেশনের হেড অব প্রোগ্রাম (দক্ষিণ এশিয়া) মো. আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সমন্বয়কারী কানিজ ফাতেমা এবং ইয়ুথ এসেম্বলির পক্ষে এর প্রেসিডেন্ট নাজমা সুলতানা লিলি বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যুক্ত খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও ই্য়ুথ এসেম্বলির প্রতিনিধিদের মধ্যে জায়েদ ইকবাল, নাজের হোসেন, মেহেদী হাসান বাপ্পী, নাঈমা সুলতানা, রবিউল ইসলাম, হাজেরা সুলতানা প্রমুখ তাদের মতামত তুলে ধরেন।

এ আলোচনার উদ্যোগকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে প্রধান অতিথি মো. আখতার হোসেন বলেন, করোনার কারণে যুব মন্ত্রণালয়ের খেলাধূলা অনুষ্ঠানের অনেক উদ্যোগ এ বছর স্থগিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৭১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৫২টি ট্রেডের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কৃষিভিত্তিক প্রশিক্ষণ পেয়ে বেশিরভাগ যুবরা সফল খামারিতে পরিণত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় অনলাইন প্লাটফরমে এসব প্রশিক্ষণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনাকালে স্বেচ্ছাসেবায় ভূমিকা রাখার জন্য যুবদেরকে পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যুবদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে ‘যুব ব্র্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসংস্থান হারিয়ে যারা গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা প্রদানের প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এরকম নানামুখী উদ্যোগের ফলে যুবরা আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহিত হবে বলে মনে করি। তিনি খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের আন্দোলনে সহযোগিতা করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। সিম্পোজিয়ামের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, যুবদের প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান এবং সার্বিকভাবে যুব উন্নয়নে যুব মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগকে আরো বেগবান করতে হবে। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কর্মদক্ষতার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ উন্নয়নের দিকেও নজর দিতে হবে। কোভিড মোকাবেলায় যুবদের উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে এসব কাজে সরকারি-বেসরকারি-ব্যক্তি, সকল উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।

অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি ঘটেছিল কোভিড শুরুর আগে। কিছু মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে খাদ্যের যোগান থাকলেও তা নিরাপদ ও পুষ্টিকর কি-না সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। সকল মানুষের সেই পুষ্টিকর খাদ্যে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। কোভিডকালীন যুবদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ বলেন, বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টকে কাজে লাগাতে সরকারকে সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে। সাধারণত আমরা যেভাবে চাকরি খুঁজি সে মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে আত্মকর্মসংস্থান ও এন্টারপ্রেনারশিপের দিকে যুবদেরও এগিয়ে যেতে হবে। মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনাকালে অনেক যুব কর্মসংস্থান হারিয়ে শহর থেকে গ্রামে চলে গেছেন। পাশাপাশি দক্ষতায় ঘাটতি থাকার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক যুবরাও সংকটের মুখোমুখি। এরকম পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারের যুব মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারী উদ্যোগকও সরকার সহায়তা করতে পারে। কর্মসংস্থান বাড়লেই মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মহসিন আলী বলেন, সংকট মোকাবিলায় তরুণরা এগিয়ে এলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুবসমাজের কার্যকর অংশগ্রহণ, নেতৃত্ববোধ, সৃজনশীলতা ও কর্মস্পৃহাকে জাগিয়ে দেশের কা-ারি হিসাবে মৌলিক অধিকার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণে সরকার, নীতি-নির্ধারক, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ ও ‘ইয়ুথ এসেম্বলি’-এর পক্ষে যেসব সুপারিশমালা তুলে ধরেন সেগুলো হলো: ▪ কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার ও পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা; ▪ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে যুবদের অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা; ▪ কোভিড-১৯ এর প্রভাবে যে সকল যুব কাজ হারিয়েছে তাদের কর্মসংস্থান এবং প্রযোজ্যক্ষেত্রে খন্ডকালীন কাজের ব্যবস্থা করা; ▪ যুব উদ্যোক্তাদের (যাদের ছোট ব্যবসা ও এন্টারপ্রাইজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রণোদনা প্রদান নিশ্চিত করা; ▪ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কৃষি খাতে প্রণোদনা প্রদান নিশ্চিত করা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *