বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন

চিকিৎসায় ধস নামার শঙ্কা

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৭৭ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন

দেশে করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই সংক্রমিত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৬৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা মোট আক্রান্তদের ১১ শতাংশের বেশি। তাদের সংস্পর্শে থাকা বিপুলসংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে। ফলে হাসপাতালে সৃষ্টি হয়েছে চিকিৎসক ও কর্মী সংকট। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবায় ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংকট ও নিম্নমানের পিপিই’র সরবরাহকে।

এ ছাড়া চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তথ্য গোপনের কারণে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ভাইরাসটি আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে করোনার চিকিৎসা তো বটেই, পুরো স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ভয়াবহ শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য অনুসারে, গত সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২৯৫ জন চিকিৎসক, ১১৬ জন নার্স ও ২৪৯ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬০ জন। তবে চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশে ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৩৭৩ জন চিকিৎসক সংক্রমিত হয়েছেন। একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। সুস্থ হয়েছেন আটজন। সংক্রমিত নার্সের সংখ্যা ২২০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ছয়জন।

সরকারি হিসাবে, এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৬৪৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক আছেন ২৮৯ জন, ১১২ জন নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ২৪৩ জন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসেসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক মহাসচিব ডা. ইকবাল আর্সালান খান বলেন, মানসম্পন্ন পিপিই থাকলেও অনেকে আবার তা ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানেন না। তাছাড়া এর ব্যবহার সম্পর্কে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের আগে থেকে কোনো প্রশিক্ষণ না দেওয়াটাও একটা কারণ।

তিনি বলেন, সামাজিকতার ভয়ে ও চিকিৎসা না পেতে পারেন, এমন শঙ্কায় অনেক কোভিড-১৯ রোগী তাদের তথ্য গোপন রাখছেন। এতে চিকিৎসক ও অন্য রোগীদের মধ্যেও ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে হাসপাতালগুলো লকডাউন করে দিতে হচ্ছে।

বিএমএর বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নজরে আনার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভালো মানের পিপিই বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক লাখ ১০ হাজার মানুষের মধ্যে ১৩ লাখ পিপিই বিতরণের কথা বলা হলেও এখনও এটির সংকট রয়েছে। অথচ গড়ে ১৩টা করে পিপিই পাওয়ার কথা। বাকিগুলো গেল কোথায়?

‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জরিপে দেখা গেছে, এখনো ২৫ শতাংশ চিকিৎসক, ৪০ শতাংশ নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী পিপিই পাননি।’ যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়কারী ডা. নিরুপম দাস বলেন, ভাইরাসটি সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই অধিকসংখ্যক চিকিৎসককে একসঙ্গে কাজে লাগানোর কারণে এমনটা হচ্ছে। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে কোনো পরিকল্পনাও ছিল না।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কোনো পিপিই সরবরাহ করা হয় না। নিজেদেরই কিনে নিতে হয়। সেখানে কেউ করোনায় সংক্রমিত হলে হাসপাতাল লকডাউন করতে চায় না কর্তৃপক্ষ। আবার অনেক হাসপাতালে রোগী হারানোর ভয়ে চিকিৎসকদের পিপিই পরতে দেওয়া হয় না। তাছাড়া রোগীরা তাদের করোনা উপসর্গ লুকিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায়। কারণ উপসর্গের কথা বললে অনেক হাসপাতাল তাদের চিকিৎসা করাতে চায় না। এতে করে চিকিৎসকদের মধ্যে সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি শুরু থেকেই সবাইকে করোনা রোগী ধরে তারপর প্রাথমিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভাগ করে ফেলা যেত, তাহলে আর এই সমস্যার সৃষ্টি হতো না।

ডা. নিরুপম দাস বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার উৎপত্তিস্থল উহানে ৪০ শতাংশ সংক্রমণ ছড়িয়েছে হাসপাতাল থেকে। বাংলাদেশেও এখন তাই হচ্ছে। চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতাল লকডাউন করে দেওয়া হচ্ছে। মোট কথা, ভাইরাস সংক্রমণের বড় সোর্সে পরিণত হচ্ছে হাসপাতালগুলো।

বিএমএ মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী জানান, তাদের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে মোট আক্রান্তের ১১ শতাংশই চিকিৎসক-নার্স টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী।

তিনি বলেন, চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবাদানকারীরা এ হারে আক্রান্ত হতে থাকলে আগামীতে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএমএর তিন দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই।

দাবিগুলো হচ্ছে- দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোভিড হাসপাতালে নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য সঠিক মানের পিপিই, এন-৯৫ বা এর সমমানের মাস্ক প্রদান, নন কোভিড হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে ট্রায়াজ সিস্টেম চালু করে সেখানে কর্মরত সকল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য উপযুক্ত পিপিই, এন-৯৫ বা সমমানের মাস্ক প্রদান নিশ্চিত করা এবং সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসন, প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *