শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১২ অপরাহ্ন

দখল-স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ ইউনাইটেড গ্রুপের বিরুদ্ধে

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৫৩ পাঠক
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১২ অপরাহ্ন

জামালপুর,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,মঙ্গলবার,১৯ ডিসেম্বর ২০১৭: জামালপুরে বিদ্যুতকেন্দ্র করতে গিয়ে জমিদখল আর অবৈধ বালু উত্তোলনে নেমেছে ইউনাইটেড গ্রুপ। সদর উপজেলার চর যথার্থপুরে ৩১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে তারা। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে নাম মাত্র মূল্যে ইতোমধ্যেই ৩শ’ বিঘা জমির দখল নেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও ফসলি এসব জমি উঁচু বা ভরাট করতে গিয়ে ১৫টি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে পাশের ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে। এভাবে ফসলি জমি দখল আর নদী থেকে সমানে বালু তোলায় হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ প্রতিবেশ। এলাকাবাসী বলছেন, ইউনাইডেট গ্রুপের এসব দখলদারিত্ব ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যাচ্ছে না। কিছু বলতে গেলে বা প্রতিবাদ জানাতে গেলে দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের হুমকি ধামকি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন জামালপুর জেলা কমিটির সভাপতি শফিক জামান লেবু এ প্রসঙ্গে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ব্রহ্মপুত্রের গভীরতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় নদের পূর্ব তীরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে স্থানীয় কৃষকদের বহু ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

ইউনাইটেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন হাসান রশীদ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে জানান, ইউনাইটেড গ্রুপ জামালপুরে দুই হাজার ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তেল ভিত্তিক দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করছে। একটি ইউনাইটেড জামালপুর পাওয়ার লিমিটেড এবং অপরটি ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার লিমিটেড নামে নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে ইউনাইটেড জামালপুর পাওয়ার লিমিটেড ৭৬০ কোটি টাকায় ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। অপরটি ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার লিমিটেড এক হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।

জামালপুরের চর যথার্থপুরের ১০০ একর জমির ওপর ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি নির্মাণ হচ্ছে। আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউনাইটেড গ্রুপ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ১০০ একর ফসলি জমি নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করেছে। ইতোমধ্যেই প্রকল্প এলাকা থেকে ১০টি পরিবারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল জব্বার ও শহিদুর রহমান জানান, এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পরদিন থেকেই মাছিমপুর গ্রামের জমি কেনাবেচার দালাল মোয়াজ্জেম হোসেন বাচ্চু, আমিনুর ইসলাম নান্টু ও তাদের সহযোগীরা বাড়িঘর সরিয়ে নিতে চাপ সৃষ্টি করছেন এবং দফায় দফায় ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। তারা স্থায়ী বাসিন্দাদের শতাংশ প্রতি মাত্র ১০ হাজার টাকা এবং প্রত্যেককে বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার জন্য ১০ হাজার করে টাকা হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। টাকা নিতে অস্বীকার করলে তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপনের পরদিন থেকেই দালাালদের সহযোগিতায় শ্রমিকরা ২০টি পরিবারের বাড়িঘর ভেঙ্গে দিয়েছে।
মাছিমপুর বগালি গ্রামের নেওয়াজ শরিফ জানান, নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় তাদের দুই একর ফসলি জমি রয়েছে। দালাল মোয়াজ্জেম হোসেন বাচ্চু ও আমিনুর ইসলাম নান্টু শতাংশ প্রতি মাত্র ১০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের জমি ছেড়ে দিতে চাপ সৃষ্টি করছেন। তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা দুই একর জমির সবজি ক্ষেত দখল করে সেখানে নির্মাণ সামগ্রী রেখেছে এবং ওই জমির কিছু অংশে ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাট শুরু করেছে। বাধা দিতে গেলে দালাল ও শ্রমিকরা তাদের হুমকি দিচ্ছে।
তবে মোয়াজ্জেম হোসেন বাচ্চু ও আমিনুর ইসলাম নান্টু জানান, এলাকায় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। এ কাজে ইউননাইটেড গ্রুপকে সহযোগিতা করা সবার দায়িত্ব। তারা স্থানীয় কৃষকদের জমি ন্যায্য মূল্যে হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করে থাকেন।
ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে বাচ্চু ও নান্টু বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বালুর ব্যবসা করছেন। সেই সুবাদে প্রকৃত জমির মালিকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে লিখিত চুক্তিনামার ভিত্তিতেই ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইউনাইটেড গ্রুপের জামালপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর আবু মুসা জানান, জামালপুরে নির্মাণাধীন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য স্থানীয় প্রকৃত জমির মালিকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ৫০ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে। ওইসব জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার প্রভাব সৃষ্টি করা হয়নি। তবে জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহয়োগিতা নেওয়া হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র থেকে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে ন্যায্য মূল্যে চুক্তি করে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।’
তবে নদ থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির জানিয়েছেন, খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *