বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

নির্বাচনের আগে পরাজয়েও সুবিধা দেখছিলেন ট্রাম্প

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৭ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৮: যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় ছিল অনেকের জন্য কল্পনাতীত! এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার নির্বাচনী প্রচারণা টিমের সদস্যরাও পরাজয় মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন। তবে পরাজয়েও সুবিধা দেখছিলেন ট্রাম্প। কারণ এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে বিশ্বে তিনি সুপরিচিত ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। তার সন্তানেরা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হবেন। তার টিমের সদস্যরাও সম্মানজনক জায়গায় যাবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে লেখা ‘ফায়ার এন্ড ফিউরি:ইনসাইড দি ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’ বইতে এসব কথা উঠে এসেছে। লেখক মাইকেল ওলফ ‘ইলেকশন ডে’ শিরোনামের অধ্যায়টি মূলত লিখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা, জয়-পরাজয় নিয়ে ট্রাম্প, তার পরিবার ও সহযোগীদের মনোভাব নিয়ে।

লেখক লিখেছেন, নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে নারীদের নিয়ে ট্রাম্পের করা আপত্তিকর মন্তব্যের একটি টেপ প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন উপস্থাপক বিলি বুশ। এর ফলে প্রবল চাপে পড়েন ট্রাম্প। তবে নির্বাচনের ১১ দিন আগে এফবিআই’র পরিচালক জেমস কোমি ঘোষণা দেন যে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ই-মেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত আবারো শুরু করেছেন। এমন ঘোষণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদী হয়ে ওঠেন।

নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই সহযোগী স্যাম নানবার্গ’কে ট্রাম্প বলতেন, নির্বাচনের মাধ্যমে আমি বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান ব্যক্তি হতে পারি। তখন নানবার্গ ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কি প্রেসিডেন্ট হতে চান? এই প্রশ্নের জবাব ট্রাম্প দেননি। বইতে বলা হয়েছে, তখন এই প্রশ্নের জবাব দরকার ছিল না, কারণ তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না।

ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের বন্ধু ফক্স নিউজের সাবেক সিইও রজার আইলেস বলতেন, টেলিভিশনে ক্যারিয়ার গড়ার আগে নির্বাচন করো। ট্রাম্প আইলেসের কথায় উত্সাহিত হয়েছিলেন। কারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ আছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে অপরিমিত সুযোগের বিষয়ে আইলেস’কে আশ্বস্ত করে ট্রাম্প বলেছিলেন, আমি যেমনটা স্বপ্ন দেখেছি এটা তার চেয়েও অনেক বড় ব্যাপার। আমি পরাজয় নিয়ে ভাবছি না কারণ এটা হারা নয়। আমরা সম্পূর্ণভাবে জিতেছি। ওই সময়ে ট্রাম্প ও তার প্রচারণা টিম পরাজয়ের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।

বইতে লেখক লিখেছেন, রাজনীতিতে কাউকে হারতে হয়, তবে ব্যতিক্রমহীনভাবে সবাই মনে করে তারা জিতবে। এবং আপনি সম্ভবত ততক্ষণ জিততে পারবেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত বিশ্বাস করবেন আপনি জিতবেন। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল ট্রাম্পের প্রচারণা। ট্রাম্প মনে করতেন, তার প্রচারণা টিমের সবাই অকাজের এবং অযোগ্য লোক। অন্যদিকে ক্লিনটনের সহযোগীদের তিনি মেধাবী এবং বিজয়ী বলে মনে করতেন। তিনি প্রায়ই বলেতেন, তারা সবচেয়ে ভালো লোকদের পেয়েছে আর আমরা পেয়েছি খারাপদের। প্রচারণা চলাকালে কয়েকজন সহযোগীকেও বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প। এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, বিলিওনেয়ার ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো বিনিয়োগ করতেও রাজি ছিলেন না।

বইতে ট্রাম্পের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে তার পরিবারের লোকদেরও মনোভাব উঠে এসেছে। নারীদের বিষয়ে ট্রাম্পের আপত্তিজনক কথাবার্তার টেপ ফাঁসের পর বর্তমান ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ভেবেছিলেন তার স্বামীর প্রেসিডেন্ট হওয়ার আর কোনো উপায় নেই। অথচ ২০১৪ সালে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন তখন অল্প লোকই বিশ্বাস করতো যে এটা সম্ভব হবে। আর মেলানিয়া ছিলেন তাদেরই একজন। অন্যদিকে ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা সতর্কভাবেই নির্বাচনী প্রচারণা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। এছাড়া সৎ মা মেলানিয়াকে তিনি যে অপছন্দ করেন সেটিও গোপন রাখতেন না। বন্ধুদেরকে ইভানকা বলতেন, সবার এটি জানা দরকার যে মেলানিয়া মনে করেন বাবা নির্বাচনে দাঁড়ালে অবশ্যই জিতবেন। কিন্তু এটাও সত্যি যে, ট্রাম্পের জয় মেলানিয়ার জন্য একটি আতঙ্কের বিষয় ছিল। তিনি মনে করতেন, ট্রাম্প বিজয়ী হলে তার সযত্নে গড়া নিরাপদ আশ্রয়ের জীবন ধ্বংস হবে। নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যেই সাবেক মডেল মেলানিয়ার নগ্ন ছবি প্রকাশ করে গণমাধ্যম। এটা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদেও জড়িয়েছিলেন মেলানিয়া। এর প্রেক্ষিতে মেলানিয়াকে মামলা করতে সায় দেন ট্রাম্প। তিনি মেলানিয়াকে বুঝিয়েছিলেন নভেম্বরেই সব কিছু শেষ হবে। এছাড়া তার জয়ের তেমন কোনো সম্ভাবনাও নেই বলেও মেলানিয়াকে নিশ্চিত করেছিলেন।

লেখক বইতে লিখেছেন, নির্বাচনের পর ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সময় ব্যয় করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, এটা শুধু শুধু সময় নষ্ট করা। কারণ তিনি জিততে পারছেন না! তবে এ হারের মধ্যেও জয় ছিল ট্রাম্পের। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান ব্যক্তি হতে পারেন। তার মেয়ে ইভানকা এবং জামাই কুশনার অপরিচিত ধনীর সন্তান থেকে আন্তর্জাতিক সেলিব্রেটিতে পরিণত হবেন। প্রচারণা টিমের প্রধান ব্যানন টি-পার্টি আন্দোলনের কার্যত নেতা হবেন। প্রচারণা টিমের ম্যানেজার কেলিয়ানে কনওয়ে টেলিভিশনের বড় তারকা হবেন। মেলানিয়া ট্রাম্প লোকচক্ষুর অন্তরালে মধ্যাহ্নভোজে ফিরতে পারবেন। নির্বাচনে পরাজয় সবার জন্যই কাজে দেবে। এজন্য ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর একটি ঝামেলামুক্ত ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন তারা।

রাত আটটার পর ট্রাম্পের জয় অনেকটা নিশ্চিত হলো। এ সময়ের বর্ণানায় ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র তার এক বন্ধুকে বলেন, বাবাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তিনি ভূত দেখেছেন। মেলানিয়া, যাকে ট্রাম্প পরাজয়ের বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন তার চোখে পানি এসেছিল। তবে এটা আনন্দের অশ্রু ছিল না। স্টিভ ব্যাননের বর্ণনায়, ট্রাম্প ছিলেন পুরোপুরি দ্বিধাগ্রস্ত এবং ভীত। তারপর হঠাৎ করেই যেন ট্রাম্প সম্বিত ফিরে পান। তিনি এমন একজন মানুষ হয়ে ওঠেন, যিনি বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তিনিই যোগ্য এবং তিনি একমাত্র দাবিদার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *