শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন

পঙ্গুত্বের কাছে হার না মেনে কৃষক বিল্লাল একাই টানছেন সংসারের বোঝা

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ১৩০ পাঠক
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন

এ কে আজাদ, চাঁদপুর ব্যুরো প্রধান, বর্তমানকন্ঠ ডটকম : সত্তরোর্ধ বছর বয়সী কৃষক বিল্লাল। ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে হারিয়েছেন তার দুটি পা। কিন্তু পঙ্গুত্বের কাছে হার মেনে থেমে যায়নি তার কৃষি কাজ। কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে অতি কষ্টে হাটা চলা করে কৃষি কাজ করে টানছেন সংসারের বোঝা। আত্মমর্যাদা আর দৃঢ় মানসিকতায় নিজেকে তৈরি করেছেন সমাজের এক উজ¦ল দৃষ্টান্ত। কৃষক বিল্লালের বাড়ী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনের গাঁও এলাকার

সরেজমিন মদনের গাঁও গিয়ে দেখা যায়, বিল্লাল হোসেন গাজী আপন মনে কাজ করছেন তার বর্গা জমিতে। শতকষ্ট বুকে চেপে মুখে হাসি মেখে ক্ষেতের পাশেই তার কৃত্রিম পা টা খুলে রেখে এক মনে কাজ করে চলেছেন তিনি।

বিল্লাল হোসেন গাজী বলেন, ১২ বছর আগে ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত কিছুর সংস্পর্শে তার পায়ে পচন ধরে। পা ভালো না হয়ে পচন আরো বাড়তে থাকায় ১০ বছর আগে কেটে ফেলা হয় তার পা দু’টি। হঠাৎ করেই স্ত্রী, ৪ ছেলে এক মেয়ের সংসার নিয়ে বিপদে পড়ে যাই। সংসারের খচর মেটাতে চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে পাই। কিন্তু মনোবল না হারিয়ে আবারো কাজে নামি। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন ফসল আবাদ করে জিবিকা নির্বাহ করা শুরু করি। বর্তমানে আমি ২ একর জমি বর্গা নিয়ে আলু ও আখ চাষ করেছি।

তিনি বলেন, বাড়ির পাশে দুই একর জমি বর্গা নিয়ে সেখানে আবাদ করি। বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী শাকসবজি ও ফসল ফলাই। এতে করে যেই পরিমান টাকা লাভ হয় তা দিয়েই সংসারের খবছ বহন করি।। এতে অনেক কষ্ট হলেও কিছুতো করার নাই। কেউতো আর আমার কষ্ট কমাবে না।

তিনি বলেন, অনেক পঙ্গু মানুষ আছে যারা অন্যের কাছে হাত পেতে খায়। আমি সেটা করতে পারিনা। আমার দ্বারা তা সম্ভব না। নিজে কষ্ট করে উপার্যন করি, এতে অনেক আনন্দ পাই। আল্লাহ রিজিকের মালিক তিনি যা দেয়, তা দিয়েই কষ্টে দিন চলে যায়।

এই পঙ্গু কৃষক বলেন, দুই পা হারিয়েও আমি কোন প্রতিব›দ্বী কার্ড পাইনি। বয়স সত্তোরের বেশি হলেও আমার কপালে জোটেনি বয়স্ক ভাতা। সরকারি কতো সহায়তা আছে, আমি কিছুই পাইনি। আমার একখন্ড জমিও নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। এতে কষ্ট বেশি হলেও মুনাফ কম হয়। সরকার যদি আমাকে একটা বয়স্ক বা প্রতিব›দ্বী কার্ড দেয়। আমার চাষাবাদে সহায়তা করে তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে একটু ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারতাম।

বিল্লাল গাজীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, পঙ্গু কৃষক স্বামীর এই দুঃর্দিনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে কেউই এগিয়ে আসেনি। ৪ ছেলের তিনজনই বিবাহিত। ছেলেদের স্বল্প উপার্জনে সংসারের খরচ চলে না। একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়ে। সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়াতো। তাহলে আমার স্বামীর কষ্ট কিছুটা হলেও কম হত।

বিল্লাল গাজীর ছেলে, জাকির হোসেন বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে আমার বাবার পা কেটে ফেলতে হয়েছে। সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় আামদের স্বল্প আয়ে সংসারের খরচ হয় না। বাধ্য হয়েই আমার পঙ্গু বাবা অনেক কষ্ট করে কাজ করেন। আমার বাবার ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় কয়েকবার ইউনিয়ন পরিষদের গিয়েও কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি। আমরা সরকারের কাছে সাহায্যোর আবেদন জানাই।

বিল্লাল গাজীর কলেজে পড়–য়া মেয়ে লিজা বলেন, আমার বাবা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সংসার চালান। অভাবের মাঝেও অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। আমার বাবার এই কষ্ট আর সহ্য হয় না। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু ফিরে তাকাত তাহলে ভালো হতো।

মদনের গাঁও গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাবিব ও কাওসার মিজি বলেন, বিল্লাল কাকার হাড়ভাঙা পরিশ্রম দেখে আমাদের অনেক কষ্ট লাগে। অনেকে সুস্থ্য সবল থেকেও মানুষের কাছে হাত পাততে দ্বিধাবোধ করেন না। কিন্তু তার দুটি পা না থাকলেও তিনি কারো কাছে হাত পাতেন না। তা দেখে আমরাদের গর্ব হয়। তিনি এতো কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিল্লাল কাকার নিকট থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। বয়স্ক এই পঙ্গু মানুষটার পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি আহŸান জানাই।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অসীম চন্দ্র বনিক বলেন, আমরা তার সম্পর্কে জানতাম না। আপনাদের নিকট থেকেই প্রথমে জানতে পারলাম। প্রশাসন অবশ্যই এই পঙ্গু বয়স্ক কৃষকের পাশে দাঁড়াবে। তাকে সহায়তা করতে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে। অচিরেই তাকে প্রতিব›দ্বী কার্ড বা বয়স্ক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *