বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৯ অপরাহ্ন

পৃথিবী পুনর্গঠনের কাজ চলছে

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ১৫৩ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৯ অপরাহ্ন

করোনা ভাইরাস শেষে কী করবে পৃথিবীর মানুষ ? বিষয়টি ভাবনার জন্য সবাইকে প্রকৃতি সময় দিয়েছে।

মোহাম্মদ আবদুল হাই পিএএ : এ পৃথিবী মানুষের একার না। পবিত্র কোরানের বর্ণনা মতে, জল ও স্থলভাগে বিচরণশীল প্রাণী এবং আকাশে উড্ডয়নশীল পাখি প্রত্যেকটি এক একটি জাতি এবং সবাইকেই কেয়ামতের মাঠে হাজির করা হবে।

তাহলে বুঝা গেল পৃথিবী মানুষের একার না। হয়তো মানুষ এখানে রাজত্ব করছে কিছুকালের জন্য । কিন্তু রাজত্ব করতে গিয়ে মানুষ এ পৃথিবীর উপর, মানুষের উপর তথা প্রকৃতির অন্যান্য সকল কিছুর উপর অনেক বেশি মাত্রায় জুলুম করে ফেলেছে। জুলুমের মাত্রা এতো বেশি হয়ে গেল যে, তা পৃথিবীর পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিল না বা মানুষের মধ্যে এগুলি বন্ধ করার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। ফলে প্রকৃতির নিজের ইচ্ছায় বা মানুষের ভুলের মাধ্যমে পৃথিবী পুনর্গঠনের সুযোগ নিলো। কিংবা বলা যায়, মানুষের কল্যাণের জন্য তাকে আইসিইউতে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেয়া হলো । এরপর আবার তার সবকিছুই মানুষের জন্য ও পৃথিবীতে বিচরণশীল প্রাণীর জন্য খূলে দেয়া হবে। মানুষ আবার পৃথিবীর রূপ, রস ও সৌন্দর্য উপভোগ করবে। কিন্তু সে যদি বারবার এ ভুল করে তাহলে ভিন্ন কোন অভিশাপে আবারো অভিষিক্ত হয়ে যন্ত্রণা ভোগ করবে, নাজেহাল হবে বা ধ্বংস হয়ে যাবে। বর্তমানে পূণর্গঠনের জন্য মানুষের যে সব পাপ কাজ ও কর্ম আপাতত বন্ধ হয়েছে যা মানুষ করোনা নামক মহামারি না আসলে বন্ধ হতো না তা সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হলো:

রাসুল করীম হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর রাসুল হয়ে প্রেরিত হওয়াই কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার একটি নিদর্শন। যেমন তিনি নিজেও এ কথা বলেছেন, “আমার প্রেরিত হওয়ার ও কিয়ামতের মাঝে ব্যবধান হল এই দুই আঙ্গুলের (মাঝে ব্যবধানের) ন্যায়।” (বুখারী) । তিনি ইঙ্গিত করে একথা পরিষ্কার করে দিলেন যে, যেভাবে এই আঙ্গুল দু’টি পরস্পর মিলে রয়েছে, অনুরূপ আমার ও কিয়ামতের মধ্যেও কোন ব্যবধান নেই।

রোগবালাই হলো আল্লাহর গজব এবং মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত করে আল্লাহর দেয়া বিধানের দিকে ফিরে আসার সুযোগ ও সতর্ক বার্তা। করোনার কারণে অনেক ধরণের পাপকাজ কমে গেছে।

যেমন:
(১) যৌনাচার জাতীয় পাপাচার বন্ধ :
আপাতত পৃথিবীতে সকল ধরণের যৌনাচার বন্ধ হয়ে গেছে যার সবগুলি এখানে উল্লেখ করলে ব্যক্তি বিশেষের কাছে অশোভন মনে হতে পারে। এক হিসেবে এ যৌনাচারের সংখ্যা বা ধরণ ২৫ টি বা ততোধিক। এ ধরণের প্রত্যেকটি পাপ কর্ম মানুষের একটি বিশাল অংশ অত্যুতসাহে প্রতিদিনই করছিলো এবং দিন দিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। শালীনতা বজায় রেখে যে কয়েকটির পাপাচারের নাম বলা যায় তা হলো :
(ক) অবৈধ সেক্স বন্ধ হয়ে গেছে ।
(খ) চুমো খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে ।
(গ) পতিতালয় বন্ধ হয়ে গেছে ।
(ঘ) হোটেল মোটেলে যৌনকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে ।
(ঙ) লেসবিয়ান ও গে কর্ম বন্ধ হয়ে গেছে ।
(চ) পার্কে, বনে জঙ্গলে, নদী তট, সমুদ্র তীরে, বিনোদন পার্কে বা প্রমোদ ভ্রমণের নামে অশ্লীলতা বন্ধ হয়ে গেছ।
(ছ) ক্যাসিনো বন্ধ হয়ে গেছে ।
(জ) বার, পাব, সরাইখানা বন্ধ হয়ে গেছে ।
(ঝ) বেলি ড্যান্স (আরবের মহিলাদের উলঙ্গ নৃত্য) ও শীশা সংস্কৃতি বন্ধ হয়ে গেছে ।
(ঞ) মেসেজ পার্লার ও স্পা সেন্টারগুলি বন্ধ হয়ে গেছে ।
(ট) সমুদ্রতীরে উলঙ্গ সান বাথ বন্ধ হয়ে গেছে ।
(ঠ) নাইট ক্লাবে উলঙ্গ নাচ ও গান বন্ধ হয়ে গেছে ।

(২) নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ :
করোনা আগমনের পর বিশ্বের কোথাও এখন নারী ও শিশু নির্যাতন হচ্ছে না। নারীর প্রতি অসহনশীল আচরণ যা অহরহ ঘটতো পথে ঘাটে, বাসে, ট্রেনে, কর্মস্হলে, শপিং মলে, বাজারে, শহরে, গ্রামে, টেলিফোনে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অন্যত্র সব বন্ধ হয়ে গেছে । শিশু নির্যাতনও অনুরূপভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ।

(৩) মানুষের উপর নির্যাতন বন্ধ:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেভাবে মানুষের উপর নির্মম নির্যাতন হতো বিশেষ করে যুদ্ধ, জাতিগত সহিংসতা, ধর্মীয় সংঘাত বা নিপীড়ন তা বন্ধ হয়ে গেছে। উল্লেখযোগ্য যেমন, উহান, চায়না, রোহিঙ্গা, মিয়ানমার, আসাম, ভারত, কাশ্মীর, ভারত পাকিস্তান, তালেবান, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, হুতি, সৌদি আরব, শিয়া, কুর্দি, ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ইজরায়েল, সিরিয়া, লিবিয়া, লেবানন, মিন্দানাও, ফিলিপাইন, বালুচ, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে যে মানুষ মানুষের শত্রু হয়ে মারা মারি, হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, নির্বাসন, বোমা নিক্ষেপ ইত্যাদি বন্ধ হয়ে গেছে । বন্ধ হয়ে গেছে সাদা কালো তথা নিগ্রো হোয়াইট ক্লাশ বা শ্রেণি সংঘর্ষ ।” আমি আল্লাহ্কে সব কিছু বলে দিবো” সিরিয়ান ঐ নিস্পাপ শিশুর করুন আকুতি হয়তো মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বলার সাথে সাথে গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন এ করোনার মাধ্যমে। ইয়েমেনের কঙ্কালসার শিশুগুলির ক্রন্দণ সাদা ধবধবে পোশাকে মানবতার দাগ কাটতে পারেনি। সোমালিয়া, সুদান, নাইজেরিয়ার বুভুক্ষু মানুষের কান্না এ পৃথিবীর ভোগবিলাসী মানুষের নজর কাড়েনি, নজর কেড়েছিলো মহান আল্লাহর। মধ্যপ্রাচ্যের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো তেলের দাপড়ে আর অহমিকা করার সুযোগ নেই। তেলের দাম এখন আর নেই। প্রয়োজন না হলে তেল হলো একটি অপ্রয়োজনীয় পরিত্যক্ত পদার্থ বা আবর্জনা ।

(৪) প্রাণী হত্যা বন্ধ হয়ে গেছে:
মানবজাতি এখন ঘরে বা খাঁচায় বন্ধি চিড়িয়াখানায় আর প্রাণিকূল সদর্পে সর্বত্র বিচরণশীল । তাইতো কক্সবাজার সৈকতে ডনফিনের সাঁতার কাটা, সাগর সৈকতে হরিণের দৌড়ঝাপ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, মানুষের মতো তাদেরও আনন্দ উল্লাস করতে ইচ্ছে আছে, অধিকার আছে। অস্ট্রেলিয়া এখন আর দশ হাজার নিরীহ উট মারার সিদ্ধান্ত নিবে না। মানুষের মতো উটগুলিরও পৃথিবীতে বাস করার, পানি পানের ও শান্তিতে বসবাসের অধিকার আছে । উন্নত বিশ্ব সাগরের নীল তিমি, হাঙ্গর ও ডলফিন আর নির্বিচারে বধ করবেনা।

(৫) ভূগর্ভস্থ সম্পদ অপচয় বন্ধ:
সোনা, রূপা, হিরা, জহরত, পেট্রোলিয়ামসহ সকল খনিজ পদার্থ নির্বিচারে উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে । এক দেশের সম্পদ আরেক দেশ জোর করে বা কৌশলে উত্তোলন করে নিজেরা সম্পদের পাহাড় গড়ে পৃথিবীতে এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে বুভুক্ষু রাখার কৌশল আজ পরাজিত। ধনী দেশগুলির অর্থ বিত্ত আজ কোন কাজে লাগছে না। মৃত্যু হার ধনী দেশগুলিতেই তুলনামূলকভাবে এখন পর্যন্ত বেশি। করোনা বুঝিয়ে দিলো সম্পদের পাহাড় নয়, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কম দামী টক জাতীয় ও গরম খাবারই সুস্থ থাকার উপায় । এয়ার কন্ডিশন চালিয়ে গ্রীন হাউজ ক্ষতি করা মানে করোনার আগমন। কারণ করোনা ঠান্ডাকে একটু পছন্দ করে বেশি ।

(৬) ভূ-উপরিস্থ সম্পদের উপর জুলুম বন্ধ:
উন্নয়নের নামে পৃথিবীর ভূ-উপরিভাগে সকল ধরণের নির্মানকাজ আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে । এখন জলাধার, জলাশয়, নদী নালা, খালবিল, ভরাট হচ্ছে না, ইট ভাটায় নির্বিচারে গাছ পুড়িয়ে ধোঁয়া সৃষ্টি হচ্ছে না, গাড়ির ধোঁয়া বন্ধ, বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড কমে গেছে, নির্মাণ কাজের কারণে বাতাসে ধুলোবালির মাইক্রোন কমে গেছে যা মানুষের শ্বাসযন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকিজনক। কলকারখানা হতে বিষাক্ত শিসা, ধোঁয়া, পানি ও বজ্য নির্গত হচ্ছে না ।

(৭) চুরি, রাহাজানি ও হানাহানি বন্ধ :
বর্তমানে চলছে এক প্রকার ইয়া নফসি, ইয়া নফসি সময়। মানে আমার কী গতি হবে, আমি কী মুক্তি পাবো কিংবা আমি কী নিরাপদ থাকতে পারবো। এ মুক্তি বা নিরাপদে থাকার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। এমনকি নিজের সবচেয়ে আপনজন মা, বাবা, ভাই, বোন, সন্তান, স্ত্রী বা স্বামী যে কিছুক্ষণ আগেও খুব নিকটে বসেছিলো, করোনা আক্রান্ত হবার সাথে সাথে দূরে, বহু দূরে ঠেলে দিচ্ছে। কাছে গিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না কেবল ডাক্তার ও নার্স ছাড়া । এমনকি মরে গেলে লাশ কবর দেওয়ার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। এখন আর বহু লোক জানাযায় আসেনা। অনেক ক্ষেত্রে লাশ রেখে পালিয়ে যাচ্ছে বা এ কবরস্থানে করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা যাবে না মর্মে নোটিশ দেয়া হচ্ছে । অথচ হয়তো এ কবরস্থানের উন্নয়নের জন্য তার অনুদান ছিলো। চুরি, রাহাজানি, হানাহানি, মারামারি এখন নেই বললেই চলে। এ ধরণের সামাজিক অপকর্ম একেবারেই কমে গেছে।

(৮) সামরিক ব্যয় ও যুদ্ধাস্ত্র কি দরকার ?
করোনা এমন একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, তাকে কোন যুদ্ধে বা বিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে কুপোকাত করা যাবে না। ফলে সাগরে ভাসমান বিশাল বিশাল যুদ্ধ জাহাজগুলির সৈনিকরাও নিরুপায় ও আতংকিত কিংবা আক্রান্ত । বিশাল বিশাল বিমানগুলি আজ আইসোলেশন সেন্টারে পরিনত। কোন বোমারু বিমান এখন আর আকাশে চক্কর দেয় না নিজ সীমান্ত রক্ষার জন্য । কারণ পুরো বিশ্ব নিজেই অরক্ষিত । ফলে সামরিক ব্যয় কমিয়ে তা এখন মানুষ রক্ষা তথা মানবতার কল্যাণে ব্যয় হচ্ছে।

(৯) মানুষের চিন্তা ধারায় পরিবর্তন:
অঢেল সম্পদ যে মানুষকে নিরাত্তা ও সুখ দিতে পারে না তা মানুষ উপলব্ধি করতে শুরু করছে। সীমাহীন সম্পদ, ক্ষমতা বা সুবিধা থাকা সত্তেও করোনার আক্রমন হতে ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী বাঁচতে পারেনি, জার্মানির অর্থ মন্ত্রীকে আত্মহত্যা করতে হয়েছে, মার্কিন পপ শিল্পী জন প্রাই, প্রযোজক উইলনার, প্যাট্রিসিয়া বোসওয়ার্থ এবং লিবিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ জিব্রিল সহ শতাধিক খ্যাতিমান ব্যক্তির তালিকা গুগুলে আছে যারা এ রোগে মারা গেছে। ফলে মানুষের চিন্তা, চেতনা ও বিবেককে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে । সম্পদের মোহ ও দুনিয়াবি মোহ কমতে শুরু করছে।

করোনা শেষে কী হবে এ পৃথিবীতে?
এখন প্রশ্ন জাগে করোনা শেষে কী হবে এ পৃথিবীতে? মানুষ কি পূর্বের মতো আচরণ অব্যাহত রাখবে না পরিবর্তন করবে ? বিষয়টি শর্তসাপেক্ষে হলেও বলা যায়, করোনা শেষে মানব চরিত্রে, জীবনাচারে, কর্মকান্ডে ও চিন্তা ধারায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবেই। সমগ্র পৃথিবীর মানুষ নতুন আঙ্গিকে ইতিবাচক ধারায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে যা কয়েক দশকব্যাপী অব্যাহত থাকবে। কী পরিবর্তন হবে তাহলে ?

(ক) এক পৃথিবী, এক জাতি ও এক পরিবার:
পৃথিবীতে ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে কে বড়, কে ছোট তা আর ভাবার সময় নেই। সময় এখন আমি তখনই নিরাপদ যখন আমার পাশেরজন নিরাপদ, আমি তখনই নিরাপদ যখন আমার প্রতিবেশি নিরাপদ, আমার দেশ তখনই নিরাপদ যখন আমার আশপাশের সকল দেশ নিরাপদ। একা একা নিরাপদ ও সুখে থাকা সম্ভব নয়- এ ধারণা পৃথিবীর সকল জাতির মধ্যে এখন প্রতিষ্ঠিত হলো। বড় বড় যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ, বোমারু বিমান, ভূমি হতে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, তারকা যুদ্ধ, হাইড্রোজেন বোমা তথা আনবিক বোমাসহ কোন সমরাস্ত্র এখন আর কার্যকর না। বাঁচতে হলে সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষ ও প্রাণীর কল্যাণের মাধ্যমে বাঁচতে হবে। ফলে পরিবারের কর্তা যেমন সকল সদস্যের কল্যাণে কাজ করে, তেমনি পৃথিবীর সব বড় বড় রাজা, বাদশা ও নিয়ন্ত্রকদের এখন এক পৃথিবী, একজাতি, এক পরিবার তত্ত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণে কাজ করতে হবে কিংবা বলা যায় এ ভাবেই কাজ শুরু হবে। বিনির্মিত হবে এক নতুন পৃথিবী যেখানে মানবিকতা সর্বাগ্রে, যেখানে ভালোবাসা সর্বাগ্রে, যেখানে সবাই যেন আপন, যেখানে অপরের কল্যাণই প্রধান, যেখানে লোভ কম, যেখানে সেবাই প্রধান, যেখানে হিংসা কম, যেখানে সম্পদের সুষম বন্টন ও ইকুয়িটি প্রাধান্য পাবে, যেখানে বুভুক্ষু কেউ থাকবে না, যেখানে যুদ্ধ থাকবেনা, যুদ্ধাস্ত্র নিষ্প্রয়োজন, যেখানে ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় নেই, যেখানে সবাইকে নিয়েই সূখে থাকতে হবে এবং এ পৃথিবীর সকল মানুষ সুখে ও শান্তিতে থাকবে – এ বিশ্বাসেই সমগ্র পৃথিবী পূণর্গঠন হবে।

(খ) স্বাস্থ্য ও সেবা খাতে বিনিয়োগ:
করোনা পরবর্তী বিনিয়োগের প্রধান আকর্ষণ হবে স্বাস্থ্য ও সেবাখাতে, মানব কল্যাণে, গবেষণা খাতে ও পৃথিবীকে সুরক্ষা করার জন্য । যে কোন জটিল রোগ ও মহামারীর কবল হতে মানব জাতিকে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হবে। একটি রোগ কোন এলাকা বা দেশের জন্য হুমকি না, বরং এটি সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকি ও ধ্বংসাত্মক বিবেচনায় সবাই একযোগে কাজ করবে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সামরিক খাতে ও যুদ্ধাস্ত্রে ব্যয় না করে চিকিৎসা সেবা ও রোগ গবেষণা খাতে ব্যয় হবে। এমনকি আগামী পাঁচ, দশ বা বিশ বছরে কি ধরণের রোগবালাই পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে তা নিয়ে গবেষণা করে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে। এতে পৃথিবীর পরবর্তী প্রজন্ম দীর্ঘকাল সুরক্ষিত ও সুখে থাকবে।

(গ) প্রকৃতির উপর জুলুম কমে যাবে:
মানুষ আর পূর্বের মতো প্রকৃতির উপর জুলুম করবে না । প্রকৃতির উপর জুলুম করা মানে মানব জাতির জন্য বিপর্যয় ত্বরান্বিত করা -এ ধরণের উপলব্ধি মানুষের মধ্যে জেগে উঠবে। ফলে সমুদ্রের অগাধ সম্পদ, ভূপৃষ্ঠের সম্পদ, ভূগর্ভস্থ অগাধ সম্পদ অতিমাত্রায় উত্তোলন, ধ্বংস ও অপচয় করা হতে বিরত থাকবে। মানুষের মনে এ উপলব্ধি জাগ্রত হবে যে, এ সকল সম্পদতো পৃথিবীর মানুষের জন্য, বর্তমানে জীবিত মানব জাতিতো মহাসুখে আছে, তাহলে অপচয় কেন ? পরবর্তী প্রজন্মতো ভোগ করতে হবে, তাদের জন্য সম্পদ সুরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য । ফলে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু ভোগ দরকার তাই করবে-ভোগের জন্য বেঁচে থাকার অদম্য স্পৃহা কমে যাবে।

(ঘ) আল্লাহর একাত্ববাদে আগ্রহী হবে:
এ জীবন যে নশ্বর, ক্ষণস্থায়ী ও ভোগবিলাসের নয় তা মানুষ বুঝতে শুরু করবে। এ জীবনের নিয়ন্ত্রা যে আরেকজন যার হাতে হায়াত, মৃত্যু, ধন দৌলত ও রিজিক তা উপলব্ধি হবে। এ জীবনের পরে যে আরেক জীবন আছে এবং সেই জীবনে যে ইহকালের কর্মের জবাবদিহিতা রয়েছে তা উপলব্ধি হবে। ভালো ও মন্দ কর্ম অনুযায়ী যে পরকালীন জীবন নিয়ন্ত্রিত হবে তা উপলব্ধি হবে। সব কিছুর মালিক বা নিয়ন্ত্রক যে এক ঈশ্বর বা আল্লাহ্, যিনি সর্বশক্তিমান, চিরস্থায়ী, সকল ক্ষমতার অধিকারী, সকল কিছুর স্রষ্টা এবং যার কাছে সবাইকে ফিরে যেতে হবে এবং জবাবদিহি করতে হবে । তিনি এমন আল্লাহ্ যার অনুগ্রহ ও করুনা ব্যতিত কারো মুক্তি নেই। ফলে আল্লাহর একাত্ববাদে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

পরিশেষে, আশাকরি, মহান আল্লাহ্ আমাদের এ মহামারীর কবল হতে শীঘ্রই মুক্তি দান করবেন এবং তার নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দান করবেন। সমগ্র বিশ্বের মানুষকে আল্লাহ্ রক্ষা করুন, মানুষের উপলব্ধি ও চেতনায় পরিবর্তন আনুক এ কমনা করছি।

[ডিসক্লেমাইমার: উপরোক্ত লেখাটি আমার একান্ত নিজস্ব চিন্তা, চেতনা ও উপলব্ধির ফল। এটি কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জাতি, দেশ বা সমাজকে হেয় বা খাটো করার জন্য না। এ লেখায় যতটুকু যে কেহ আহত বা দ্বিমত পোষণ করেন ততটুকু বাতিল বা এক্সপাঞ্জ বলে গণ্য হবে ]

লেখক : উপসচিব, পরিচালক (শিক্ষা), নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, ঢাকা, বাংলাদেশ ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *