শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

বেনাপোল কাস্টমস হাউস : রাজস্ব আদায়ে ধস

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৮ পাঠক
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

বেনাপোল,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৭: বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মোড়কের মূল্য ও পণ্যের মূল্য একই। এ ঘটনায় রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমে গেছে। ফলে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে। যে সব পণ্য ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে রাজস্ব বোর্ডের এ ধরনের নির্দেশে অধিকাংশ পণ্য চালান খালাস নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্ষোভ বেড়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
জানা যায়, আমদানিকৃত পণ্যের সঙ্গে আসা মোড়কের শুল্ক আদায় নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের ধোঁয়াশা ছিল। গত ৯ অক্টোবর এনবিআরের সদস্য লুৎফর রহমান কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনগুলোতে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেন। ফলে অধিকাংশ আমদানিকৃত পণ্যের সঙ্গে মোড়কের মূল্য ও পণ্যের মূল্য একই বিবেচনায় রেখে তা শুল্কায়ন করতে হবে। বিশেষত পণ্যের সঙ্গে বিবেচিত সব ধরনের প্যাকিং কনটেইনার, ধারক, প্যাকিং ম্যাটারিয়ালের খরচ পণ্যের পরিশোধযোগ্য মূল্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না থাকলে তার আলাদা মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। গত মাসে এই নির্দেশের পর থেকে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে বিভিন্ন মোড়কের একটি নির্দিষ্ট মূল্য শুল্কায়ন করা হচ্ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বেনাপোল কাস্টমস হাউস থেকে ওই মূল্যে শুল্কায়ন না করে আমদানিকৃত পণ্যের যে মূল্য থাকবে সেই একই মূল্যে মোড়কেরও শুল্ক আদায় করতে হবে বলে নির্দেশনা জারি করা হয়। এরপর থেকে আমদানিকারকের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এনবিআরের এমন সিদ্ধান্তে প্যাকেটসহ পণ্য আমদানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে প্যাকেটের মূল্যায়ন পণ্যের মূল্যায়ন হওয়া শুরু হলে একই প্যাকেটের ওপর দুদফায় অর্থ পরিশোধ করতে হবে বলে মনে করছেন তারা।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চলতি অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৫৬ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ছিল ১০৩ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ৮ কোটি ৭১ লাখ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঘাটতি ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঘাটতি ৫২ কোটি ৮৯ লাখ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতি ১৯৪ কোটি টাকা।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভারত থেকে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৮ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে আমদানি হয়েছে ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৩ টন পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে চলতি অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩২৩ টন পন্য আমদানি হয়েছে।
বেনাপোল আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, রপ্তানিকারকরা সবসময়ই পণ্যের সঙ্গে ব্যবহার করা মোড়কের মূল্য প্রধান পণ্যের সঙ্গে যোগ করে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। প্যাকেটের মূল্য বাদ দিয়ে কোনো রপ্তানিকারক পণ্যের মূল্য প্যাকেটের গায়ে নির্ধারণ করেন না। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত শুল্ক নীতির ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক ঋণ ও ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার ঋণপত্র খুলেছে। হঠাৎ করে নতুন নিয়মে শুল্কায়ন করা হলে পণ্যের মূল্য বাড়বে দ্বিগুণ। কিন্তু বর্ধিত দরে পণ্য বিক্রি সম্ভব হবে না। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন।
এদিকে রাজস্ব বোর্ডের এক চিঠিতে বলা হয়েছে পেনসিল, কাজল, নেইলপলিশ বা সমজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে যেহেতু আমদানি করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়, সে জন্য এ জাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে উপস্থাপিত পণ্য হিসেবে শুল্কায়ন হবে। এছাড়া একক ও অভিন্ন সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে সব ধরনের প্রসাধনী, শ্যাম্পু, সুগন্ধি, খেলনা, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, পেনসিল, কাজল, নেইলপলিশ, চকলেট, চিপস, ওয়েফার, বিস্কুট, কফি, বিভিন্ন ক্যামিকেল (এক কেজির প্যাকেট, জার, বোতলজাত) ও অন্য যেসব পণ্য প্যাকিং আকারে ক্রেতার কাছে পৌঁছায় সেসব পণ্যের ক্ষেত্রে মোড়কের ওজনভিত্তিক মূল্য প্রধান আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যের সঙ্গে যোগ করে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নিরূপণ করতে হবে। ক্যারেট, প্যাকেট, কনটেইনার, কাঠের বাক্স ও সমজাতীয় প্যাকিং যা খুচরা পর্যায়ে পণ্যের সঙ্গে ক্রেতাদের সরবরাহ করা হয় না, তা এর আওতাবহির্ভূত থাকবে। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, এনবিআরের এই নির্দেশনার ফলে একই মোড়কের ওপর দুদফায় মূল্য আরোপ হবে। বর্তমান আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বর্ধিত শুল্ক এড়াতে নিম্নমানের মোড়ক ব্যবহারে উৎসাহী হবেন। এতে করে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে। কার্যত সরকারের রাজস্ব কমে যাবে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার শওকাত হোসেন জানান, রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *