শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৩ অপরাহ্ন
সৈয়দ মুন্তাছির রিমন, বর্তমানকন্ঠ ডটকম : সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। তবে সাংবাদিকতা পেশা না নেশা তা নিয়ে যুক্তি-তর্ক ও বিতর্ক আছে। প্রতিটি জিনিসের মৌলিক আদর্শ্য আছে। এই মৌলিক আর্দশ্যই প্রতিটি কর্মের প্রাণ। প্রাণ ছাড়া যেমন মানব দেহের কোন অস্তিত্ব নেই ঠিক তেমনি সাংবাদিকতার মৌলিক আদর্শ্য ধারন, বাহন, অনুসরন ও অনুকরন ছাড়া সাংবাদিক হওয়া যায় না। বরং দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায়। তখন তার পরিচয় হয় হলুদ কিংবা সাংঘাতিক। এই দেশে অসংখ্যক মৌলিক আদর্শ্যের সাংবাদিক দেশ ও জাতিকে ভালোবেসে সাধারণ মানুষের মতো মহান দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আর একজন সাংবাদিকের কলম ব্যক্তির পেট কিংবা পীঠে আঘাত করার জন্য নয়। বিবেকে নাড়া দেওয়াই পেশার লক্ষ্য। যদি কলম পেট কিংবা পীঠে আঘাত করে তখন সাংবাদিকতার মৌলিক আদর্শ্য হারিয়ে যায়। আর বিবেকের কলম অপরাধীর অস্ত্রতে পরিনত হয়। একজন সন্ত্রাসী আর সাংবাদিকের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে দুঃখ হয় যখন সাংবাদিকতার মহান পুরুষরাই নিজেদের পেশার আদশ্যে অটুট থেকেই সাংবাদিকতার পেশাকে পতিতার সাথে তুলনা করেন। আর কলম কখনো যদি পতিতার মতো বিক্রি হয় তবে ধরে নিতে হবে এটি বিবেকের কালি নয় বিজ্য ছিল।
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) হলো সাংবাদিকতার মেরুদণ্ড। এটি বাংলাদেশের সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রকাশনা নিয়ে কাজ করা একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত। ১৯৭৪ সালে যাত্রা শুরু হয় পিআইবির। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করার কথা ছিল ন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালের ১৮ই আগস্ট তারিখে একটি রেজলুশনের মাধ্যমে পিআইবি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পিআইবি সাংবাদিকদের নিয়মিত ভাবে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়।
আমার সাংবাদিকতার অন্যতম শিক্ষক শাহ আলমগীর। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ছিলেন। পিআইবিতে যোগ দেয়ার আগে তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। শাহ আলমগীরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায়। বাবার চাকরির সুবাদে তার জীবনের একটি বড় অংশ কাটে বৃহত্তর ময়মনসিংহে।
শাহ আলমগীরের সাংবাদিকতা পেশার শুরু ছাত্রজীবন থেকেই। উপমহাদেশের প্রথম শিশু-কিশোর সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। এখানে তিনি সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। এরপর তিনি কাজ করেন দৈনিক জনতা, বাংলার বাণী, আজাদ ও সংবাদে। প্রথম আলো প্রকাশের সময় থেকেই তিনি পত্রিকাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং ১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যুগ্ম বার্তা-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি টেলিভিশন মিডিয়ায় কাজ শুরু করেন। চ্যানেল আই এর প্রধান বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশনে হেড অব নিউজ, যমুনা টেলিভিশনে পরিচালক (বার্তা) এবং মাছরাঙা টেলিভিশনে বার্তা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি শাহ আলমগীর ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শিশু কল্যাণ পরিষদ এবং শিশু ও কিশোরদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘চাদের হাট’র সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালের ৭ জুলাই পিআইবির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পিআইবিতে যোগদানের পূর্বে তিনি সর্বশেষ এশিয়ান টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আশাকরি বর্তমান অস্থির সমাজ ব্যবস্থায় সমাজ পরিবর্তনের জন্য ভোগ বিলাসী সাংবাদিকতার পরিবর্তে ত্যাগী সাংবাদিকতার বিচরন ঘটবে। যাদের দ্বারা এদেশের প্রতিটি নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে নিয়ামক ভুমিকা রাখবে।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট। প্যারিস-ফ্রান্স।