শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন

মানবসেবার নেশায় দরিদ্র মেরাজুল

বর্তমানকন্ঠ ডটকম । / ১৭৮ পাঠক
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন
দরিদ্র পরিবারের ছেলে নিয়মিত নিজের খেয়ে পরে জনসেবা করায় এলাকায় বেশ প্রশংসিত হয়েছেন

মোঃ মেরাজুল ইসলাম। বয়স ৩০ বছর। দরিদ্র পিতা মোঃ সাইফুদ্দিন বগা। গ্রাম ভোলাহাট উপজেলার ময়ামারী। ছোট বেলা থেকে মানবসেবা করে আসছেন। ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলায় দেশসেবায় প্রথমে বেছে নেন বিজিবির সোর্সের কাজ। বর্তমানে সীমান্তে চোরাচালানী সন্তোষজনক হলে সোর্সের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। পরে যানজোট হলে জোটমুক্ত ও ভয়াবহ করোনা থেকে মুক্তি পেতে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত মাঠে ঘাটে কাজ করছেন। দরিদ্র পরিবারের ছেলে নিয়মিত নিজের খেয়ে পরে জনসেবা করায় এলাকায় বেশ প্রশংসিত হয়েছেন।

২০ জুন সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহারাদের মাঝে ২য় পর্যায়ের গৃহ হস্তান্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভোলাহাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ভর্তি বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। অনুষ্ঠান সুশৃঙ্খল রাখতে নিজের দায়িত্বে দরজায় সোজা দাঁড়িয়ে। মাথায় টুপি গায়ে লাল গেঞ্জি। ঘাড়ে একটি বাঁশি।

বুকের দুদিক দিয়ে লাল পিতা। দেখে মনে হচ্ছে সরকারের বেতন-ভাতা ভোগি কর্মচারী। তাঁর নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন দেখে পরিচয় জানতে এগিয়ে যেতেই সালাম জানিয়ে আমার পরিচয় জানতে চান। পরিচয় জানার সাথে সাথে আজকের পত্রিকাকে তাঁর মানবসেবার কথা জানাতে শুরু করলেন।

মোঃ মেরাজুল ইসলাম জানান, তিনি ছোট থেকেই মানবসেবা করে আসছেন। আমরা ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করি। সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মাদক বাংলাদেশে প্রবেশ করতো। তখন ভাবলাম নেশার জগতে ঢুবে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। মাদক ব্যবসায় হাতে গুনা কয়েকজন ব্যক্তি লাভবান হলেও ধংস হবে যুবসমাজ। এসব ভেবে চিন্তে বিজিবির সাথে যোগাযোগ করে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিতে সোর্সের দায়িত্ব পালন করি। পরে মাদক নিয়ন্ত্রণে আসলে অন্যদিকে মানবসেবাই ঝুঁকে পড়ি।

এখন আম মৌসুম। ভোলাহাটে অনেক ট্রাক,ভ্যান, অটোরিকশা যাতায়াত করছে। আম ফাউন্ডেশন ভোলাহাট উপজেলার একমাত্র আমবাজার। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন শত শত যানবাহন ভর্তি আম যায়। আমবাগান থেকে ভ্যানে আম বাজারে আম নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা ফলে ব্যাপক যানজোটের সৃষ্টি হয়। এ যানজট নিরসনে আম ফাউন্ডেশনে কাজ করি।

তিনি আরো বলেন, এখন ভয়াবহ করোনা যখন জনজীবনে হতাশা। স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই মানুষ চলাফেরা করছেন। আমি তাঁদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরার অনুরোধ করি। এক প্রশ্নের জবাবে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, আমি নিজ বাড়ী থেকে সকালে খাওয়া দাওয়া করে বের হয়ে সারাদিন মানবসেবায় কাজ করে যাচ্ছি দীর্ঘদিন ধরে। আমি মানুষের সেবা করতে ভালোবাসি। সারাজীবন নিজ দায়িত্বে মানবসেবা করে যাবেন বলে জানান। তাঁর এক ছেলে।

তিনি জানান, মানবসেবা করায় আমার স্ত্রী ৮মাস পূর্বে বাড়ী ছেড়ে বাবার বাড়ী চলে গেছেন। তাঁর বাবা মোঃ সাইফুদ্দিন বগা জানান, আমার ছেলে সকালে বাড়ীতে খেয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াই। তাঁর কাজ যানজোট মুক্ত করা।

মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা। এসব কাজ করায় তাঁকে অনেকে পাগল বলেন। এসব করাতে আমি খুশি। তবে আয় না করায় সংসারে অভাব রয়েছে।

ঐ গ্রামের মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, ছেলেটি খুব সৎ ও সহজ সরল। এখন পর্যন্ত তিনি মানবসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

এ গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মোঃ আতাউর রহমান জানান, ছেলেটা খুব ভালো। পরোপকারী মানবসেবক। করোনা কালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষকে সচেতন করেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাক,অটো,ভ্যানসহ যে কোন পথচারি মাস্ক না পরলে দাঁড় করে রাখেন এবং মাস্ক পরাতে বাধ্য করান। তিনি বলেন, শিক্ষিত বা সমাজের যারা সচেতন মানুষ তাঁরাই মেরাজুল ইসলামের মত কাজ করতে পারেন না। মেরাজুল ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন ভাবে মানবসেবা করে আসছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *