মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৪ অপরাহ্ন

রাজনীতিতে সুবিধাবাদী, দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজদের ভিড়ে সৎ রাজনীতিক অ্যাড. সিরাজুল ইসলামের কথা বার-বার মনে পড়ে

শাহাদাত হোসেন শান্ত ।। / ৮৪ পাঠক
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৪ অপরাহ্ন

১১ অক্টোবর ছিল সাবেক সংসদ ও গণপরিষদ সদস্য এবং চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সিরাজুল ইসলামের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৯ সালের ১১ অক্টোবর দিবাগত রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

জননেতা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ছিলেন চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এবং কৃতী সন্তান। তিনি ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রকৌশলী, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং সৎ ও আদর্শবান একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
দেখতে দেখতে ২১ বছর চলে গেল। কত স্মৃতি ভেসে উঠে মনের আয়নায়। শৈশব থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতি শেষে মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকতা করার সুবাদে সৎ রাজনীতির আদর্শ, মানব প্রেমের মূর্ত প্রতীক, সততা, নিষ্ঠা ও শিষ্টাচারে পরিপূর্ণ বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম এবং সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও চাঁদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, একচালা টিনের ঘরে কেটেছে যাঁর এক জনমের ধরণী সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল করিম পাটোয়ারীর কাছে প্রায়ই যাওয়া হতো আমার। দু’জনের মধ্যে অ্যাড. সিরাজুল ইসলামের বাড়ি এবং আমার বাড়ি ফরিদগঞ্জে হওয়ায় সম্পর্কটা ছিলো খুবই নিবিড়। অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম সম্পর্কে এক কথায় বললে যা হয় তা হচ্ছে, তিনি ছিলেন নীতিতে অটল, কর্মে নিষ্ঠাবান এবং বক্তব্যে স্পষ্টভাষী, একজন সৎ ও স্বচ্ছ ব্যক্তি। যার জন্য দলমত নির্বিশেষে সব মহলে তাঁর ছিল ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা।

সারাদেশের মতো চাঁদপুরেও এখন অনেক ‘জনপ্রিয়’ নেতা আছেন। এই ‘জনপ্রিয়তা’র নানা কারণও আছে। কেউ কেউ আছেন, চুরি-চামারি করলেও এলাকাবাসীর সঙ্গে থাকেন। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ করেন। কেউবা আবার এলাকার টাউট-বাটপার-গুণ্ডা-বদমাশ নয়ন বন্ডগুলোকে হাতে রাখেন। তাদের পিছনে নিয়মিত খরচও করেন। এলাকার মানুষ এসব জানলেও তাদের প্রতি এক ধরনের সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং প্রশংসাও করেন। কারণ, প্রশংসা না করলে যদি তার লোকেরা ঠ্যাঙানি মারে! আবার এমন কিছু নেতাও আছেন যারা (লোক দেখানো হলেও) গরিবের কিছু উপকার করেন। গুণ্ডা-বদমাশ, নয়ন বন্ডগুলোকে প্রকাশ্যে ধমক-ধামক দেন। আবার মনোরঞ্জন করে চলার চেষ্টাও করেন। এতেও তিনি জনপ্রিয়তার তক্মা পান।
কিন্তু এলাকায় বা সমাজে একজন জনপ্রিয় নেতা যে সত্যিকার অর্থেই সৎ এবং ভালো মানুষ, যিনি জনকল্যাণে কাজ করেন, টাকার লোভ নেই এমন নেতা এবং নেতৃত্ব এখন চাঁদপুরের রাজনীতিতে বিরলই মনে হচ্ছে। অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুল করিম পাটোয়ারীর সরব রাজনীতি দেখার সুবাদে নব্বই দশকে কিন্তু এই শূন্যতা অনুভব করিনি।

অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম নিঃসন্দেহে একজন জনবান্ধব, কর্মীবান্ধব এবং দলবান্ধব রাজনীতিবিদ ছিলেন। অথচ এখনকার রাজনীতিক নেতারা ‘জনবান্ধব’ বাদ দিয়ে নিজেকে দলবান্ধব ও কর্মীবান্ধব নেতা হিসাবে তৈরি করতে মশগুল থাকে। কারণ, দলবান্ধব ও কর্মীবান্ধব হলেই এখন নেতা হওয়ার পাশাপাশি ইলেকশনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এবং জিতা যায়। তাই জনবান্ধব নেতা হওয়ার চিন্তা আপাতত গোল্লায় যাক। বর্তমানে কর্মীবান্ধব নেতা বলতে এখন বুঝায়, নেতা-কর্মীর তদ্বিরে সাড়া দেওয়া, তাদের আপদে-বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া। এতে নিয়ম-নীতি ভাঙল কি মচকালো তাতে কিছু যায় আসে না। কর্মীবান্ধব ও দলবান্ধব নেতারা কর্মীদের দিয়ে থাকেন দলের দোহাই, আর দলকে দিয়ে থাকেন কর্মীদের দোহাই। এভাবে চলতে-চলতে একসময়ে উভয় স্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে তারা একসময় কেবল নিজের আখের নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদের দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেয়া যায় না এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নও ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব হয় না।
অথচ, রাজনীতি হলো দেশ পরিচালনার বিজ্ঞান। মেধা ও মননশীলতার সঙ্গে যার সম্পর্ক। দেশ ও জাতির কল্যাণ এ বিজ্ঞানের উপজীব্য বিষয়। তাই রাজনীতির মূল লক্ষ্যই হলো রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণ সাধন করা। নিজের আখের গোছানো নয়। রাজনীতি করে আর্দশ, সততা ও ন্যায় নীতির মাধ্যমে দেশ পরিচালনায় অংশ নিয়ে যেভাবে দেশ ও জাতির সেবা করা যায় অন্য কোন পেশায় থেকে এভাবে তা সম্ভব হয় না। সততা ও নিষ্ঠার রাজনীতি দিয়ে ইহকালে যেমন প্রশংসিত হওয়া যায় তেমনি আখেরাতেও লাভ করা যায় নাজাত। রাজনীতির সঙ্গে ‘নীতি’ কথাটা যুক্ত আছে। নীতি হলো কিছু আদর্শ নিয়ম-কানুন।
অ্যাড. সিরাজুল ইসলামের সময়ে রাজনীতিতে দেখেছি যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, তারা নীতি-নৈতিকতার চর্চা করেছেন। যার জন্যে রাজনীতিবিদদের তখন সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধাও সম্মান করত।
রাজনীতি ছিল এক সময় দেশ ও মানুষের সেবা করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা। যারা রাজনীতির খাতায় নাম লেখাতেন তারা আত্মস্বার্থ কখনো বিবেচনায় রাখতেন না। দেশ-জাতি, মানুষের কল্যাণই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারা জাতির কল্যাণ সাধনায় ব্রতী হয়ে নিজেদের দিকে তাকানোর সময় পেতেন না। জনগণের স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে চলতেন সব ধরনের ভয়-ভীতি, লোভ-লালসাকে উপেক্ষা করে। অথচ এসব শব্দ এখন চাঁদপুরেরর রাজনীতিক নেতাদের ক’জনের মস্তিষ্কে বাসা বাঁধতে পেরেছে- তা এখন উপলব্ধি করার সময় এসেছে।
এখন বড় নেতা থেকে ছোট নেতা, উপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত চলছে একই ধারায়। অধিকাংশ নেতা হাতের কাছে যা পায় তার সবটা উদরস্থ করে ফুলে-ফেঁপে পাটখড়ি থেকে হাতি হতে ব্যস্ত থাকে।
রাজনীতির সঙ্গে নেতা ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। নেতা ছাড়া রাজনীতি কল্পনাই করা যায় নায়। যাদের হাত ধরে নীতি প্রণয়ন হয়, প্রতিষ্ঠিত হয়, নীতির প্রচার, প্রসার ও বাস্তবায়ন হয়, তাদের মধ্যেই নীতি-নৈতিকতা এখন অনেকটাই নির্বাসিত। চাঁদপুরের রাজনীতির মাঠে এখন নীতিহীন নেতার সংখ্যাই বেশি।
ম্যাকিয়াভেলি তার ‘প্রিন্স’ গ্রন্থে বলেছিলেন, রাজাকে মিথ্যা বলতেই হবে, তাকে অভিনয় করে হলেও দেখাতে হবে যে- তিনি প্রজাবৎসল। প্রজাদের শোকে তিনি মুহ্যমান, এই ধারণা রাজাকে জনপ্রিয় করবে। যদিও চাণক্য রাজনীতি সম্পর্কে ভিন্ন কথা বলেছিলেন। তিনি নৈতিকতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন অনেক বেশি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, রাজাকে সৎ হতে হবে। অসত্য অন্যায়ের মাধ্যমে রাজধর্ম পালন হবে না।
বর্তমানে চাঁদপুরে অনেকেই জনপ্রিয় নেতা হচ্ছেন বটে, কিন্তু সেই অর্থে ভালো বা যোগ্য নেতা হচ্ছেন কি? সততা, বুদ্ধি, প্রকাশের ক্ষমতা, বিচারক্ষমতা, প্রশ্ন শোনা এবং জবাব দেওয়ার মানষিকতা, মতামত সংগ্রহের ইচ্ছা, তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা, ভালো স্মৃতিশক্তি, সাহস, দূরদর্শিতা, সীমাহীন উৎসাহ এবং চিন্তা-ভাবনায় কট্টর না হয়ে আধুনিক ও নমনীয় হওয়া, এ সবই একজন ভালো এবং যোগ্য নেতা হওয়ার গুণাবলী।
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদরা বলছেন, বিপুল ভোটে জিতে কেউ একজন নেতা কিংবা জনপ্রতিনিধি হলেই তাকে যোগ্য, সফল এবং শক্তিশালী বলা যাবে না। কারণ, জয়লাভ করা মানেই কিন্তু ভালো এবং যোগ্য নেতা বা জনপ্রতিনিধি হওয়া নয়। হিটলারও কিন্তু তার জাতীয়তাবাদী সমাজতন্ত্রী দলের পক্ষে পেয়েছিলেন বিপুল জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন। জনপ্রিয় নেতা ও জনপ্রতিনিধি হওয়া আর যোগ্য এবং ভালো হওয়া তাই কখনো এক কথা নয়।
অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম এবং আব্দুল করিম পাটোয়ারীদের মত দক্ষ, সৎ, শক্তিশালী ও সুযোগ্য নেতাদের নেতৃত্ব ও রাজনীতি দেখে চাঁদপুরের ভবিষ্যত নেতৃত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে তখন যে ধারণা তৈরি হয়েছিল বর্তমান সময়ের বাস্তব চিত্রে তা অনেকটাই দূরে।
২০১৭ সালের ২৭ ফ্রেব্রুয়ারি সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু ও কিশোর পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে সততার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘সততার ঘাটতি পূরণ করতে হলে সৎ মানুষদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে। ভালো মানুষেরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেলে খারাপ লোকেরা রাজনীতির মঞ্চ দখল করবে। সাংসদ-মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি হবে। তারা দেশ চালাবে কিন্তু তাতে দেশের ভালো হবে না।’
ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, রাজনীতির ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা কমে গেছে। দেশের রাজনীতিকে জনগণের সামনে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে সৎ, যোগ্য, মেধাবীদের রাজনীতিতে টেনে আনতে হবে। (দৈনিক প্রথম আলো, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)
আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার ফলে সারাদেশের মত চাঁদপুর আওয়ামী লীগেও এখন নেতা, সুশীল ও কুশীলবের অভাব নেই। নিজ দলের পাশাপাশি অন্য দল ও মতের সুবিধাবাদী নেতা, দালাল, চাটুকার, সুশীল ও কুশীলব চাঁদপুর আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। দলের দুর্দিনে জনমত তৈরিতে বিন্দুমাত্র ভূমিকা রাখার হিম্মত হয়নি। বরং অন্য রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতিপক্ষ হয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারাই এখন নিজ রাজনীতিক আদর্শের ভোল পাল্টিয়ে চাঁদপুরের কতিপয় জনপ্রতিনিধি এবং নেতাদের দালাল, চাটুকার হয়ে কখনো কখনো করিৎকর্মার ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হতে দেখা য়ায়। এরা খন্দকার মোশতাক সেজে নিজের ব্যক্তিত্ব বিকিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও জন প্রতিনিধিদের লক্ষ্যচ্যুত করে এবং আদর্শ বিকিয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করে। নেতাদের আদর্শ ও লক্ষচ্যুতি অনুধাবন করেই হয়তোবা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ছাড়া আওয়ামী লীগের সব নেতাকে কেনা যায়। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে সংসদের অধিবেশন শেষে অধিবেশন কক্ষে দলের কয়েকজন নেতাকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেছেন। (দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪)
গত ১৭ এপ্রিল ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে মেহেরপুরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, অতিথি পাখি, ফার্মের মুরগি, কাউয়া দলে দলে এসে ভিড় করেছে। তবে এখানে (মেহেরপুরে) ফার্মের মুরগি ঢুকে গেছে। দেশি মুরগি স্বাস্থ্যসম্মত। ফার্মের মুরগি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফার্মের মুরগির চাপে দেশি মুরগি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। (দৈনিক মানবকণ্ঠ, ১৮ এপ্রিল ২০১৭)
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য অনুযায়ী সারাদেশের মতো চাঁদপুর আওয়ামী লীগেও সুবিধাবাদী, অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, অতিথি পাখি, ফার্মের মুরগি, কাউয়া দলে দলে এসে ভিড় করেছে। এদের চাপে দুঃসময়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে আমি সন্দেহাতীতভাবে বলতে পারি যে, আওয়ামী লীগ কখনও খারাপ সময়ে পড়লে এসব সুযোগসন্ধানী, সুবিধাবাদী, অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, অতিথি পাখি, ফার্মের মুরগি, কাউয়া ও মৌসুমী আওয়ামী লীগারদের দেখা যাবে না। কারণ অতীতেও দেখা যায়নি।
রাজনীতিতে শক্র-মিত্র চিহ্নিত করার দুটো উপায় আছে। (এক) নীতি ও আদর্শ। (দুই) সুবিধাবাদ। দলের খারাপ সময়ে চেনা যায় নীতি ও আদর্শের রাজনীতিকদের আর সুসময়ে চেনা যায় সুবিধাবাদীদের।
‘একজন নেতার মৃত্যু কেবল তাঁর শারীরিক প্রস্থানে হয় না। তার প্রকৃত মৃত্যু ঘটে যখন তাঁর আদর্শের মৃত্যু হয়।’ ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের অমরগাঁথা উক্তির মতো অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলামের নীতি ও আদর্শ যতদিন পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিফলিত হবে ততদিন তিনি বেঁচে থাকবেন সবার মাঝে। পরিশেষে আমার ‘কিছু অন্ধ কবিতা’ কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হওয়া অ্যাড. সিরাজুল ইসলামের মৃত্যুর দুই দিন পর ১৩ অক্টোবর, ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে নিয়ে লেখা আমার কবিতাটি দিয়ে শেষ করছি।

‘স্মৃতিতে অম্লান’
(উৎসর্গ- সর্বজনশ্রদ্ধেয় রাজনীতিক, সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও সংসদ সদস্য মরহুম অ্যাড. সিরাজুল ইসলামকে)

মনে রেখ,
একদিন আমিও ছিলাম
তোমাদের কাছাকাছি
আপোসহীন, ন্যায়বিচার ও দেশসেবার কাজে।
মনে রেখ! শুধু মনে রেখ,
কখনও আনন্দ, কখনও দুঃখ অপূর্ব সয়েছি কত।
স্পষ্ট ভাষায়, নীতিগত ভূমিকায়
বিবেক নামের জমিতে কখনওবা কারও
সংকীর্ণতার মাঝে ঘৃণা লালিত হয়েছে শত।
আজ আমি দুঃখিত অশ্রু ভারাক্রান্ত কোথাও কি করেছি ভুল?
মনে রেখ,
আদর্শময় জীবনে আছে সুখকর অনুভূতি
নীতিহীন জীবন এক স্বাচ্ছন্দ্যহীন অসুন্দর প্রকাশ।
শুধু মনে রেখ, একদিন আমিও ছিলাম
তোমাদের অতি কাছাকাছি ….খুব নিকটে,
কিন্তু আজ!
এক চির নবান্নের দেশে আমার বসবাস।
কত দিন …… আর হবে না দেখা ….. কত কাল তোমাদের তরে
কত কিছু ভাবি বলিতেও চাই স্মৃতির জানালা খুলে
জানি, আমার এই ভাবনা অপূর্ণই রয়ে যাবে আজন্ম আহ্বানে।
মনে রেখ, শুধু হৃদয়ে আমার স্মৃতির অনির্বাণে।
রচনা : ১৩ অক্টোবর ১৯৯৯

লেখক পরিচিত : শাহাদাত হোসেন শান্ত, লেখক ও সাংবাদকর্মী, চাঁদপুর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *