শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন

রাস্তা নির্মাণে নিউইয়র্কের চেয়েও বেশি ব্যয় বাংলাদেশে: সিপিডি

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৪২ পাঠক
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন

নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,রবিবার ০৩ জুন ২০১৮: ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি রাস্তা নির্মাণে যে ব্যয় হয়, তার চেয়ে বেশি ব্যয় হয় বাংলাদেশে। প্রকল্পের ব্যয় অতি মূল্যায়নের কারণেই এমনটি হচ্ছে কিনা তা সরকারকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’

রবিবার (৩ জুন) রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বাধীন পর্যালোচনা নিয়ে এক আলোচনায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব তথ্য তুলে ধরেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশে এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে কত টাকা ব্যয় হয়, সেটা আমাদের জানা আছে; যেটা নিউইয়র্কের চেয়েও অনেক বেশি। বাংলাদেশে আরও বড় বড় ৩/৪টা মেগা প্রকল্প চলছে, তার ব্যয় বিশ্লেষণ করলেও একই তথ্য পাওয়া যাবে।’

দেশের উন্নয়ন ব্যয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এসব তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যতটা না উন্নয়ন ব্যয় নিয়ে চিন্তিত থাকি, তার চেয়ে বেশি চিন্তার বিষয়- এর গুণমান সম্পর্কিত। এটা এখন প্রকাশ্য যে, যে ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটি দীর্ঘ সময় ধরে বাস্তবায়নের ফলে তার প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু প্রকল্পগুলো অতি মূল্যায়িত হয়েছে কিনা সেটাও কিন্তু বড় বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘একটা হচ্ছে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতিকে সামনে বিবেচনায় নিয়ে মূল্য বৃদ্ধি হয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- প্রথমে আপনি এক টাকা তিন টাকা ধরে ব্যয় বাড়ালেন কিনা?’ তবে উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্পের কথা বলেননি।

দেবপ্রিয় বলেন, ‘দেশের জন্য প্রকল্পগুলো প্রয়োজন, কিন্তু অতি মূল্যায়নের কারণে বৈদেশিক লেনদেনের পরিস্থিতি সমস্যার ক্ষেত্র আরও ঘনীভূত করছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিককালে দশকব্যাপী বাংলাদেশ যে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা ভোগ করে আসছে, সেই সামষ্টিক স্থিতিশীলতার ভেতরে কিছু ক্ষেত্রে চির দেখা দিচ্ছে। এর ফলে আগামী দিনে বেশ কিছু উদ্বেগজনক প্রবণতা লক্ষ্য করছি।’

“দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে- বিগত সময়কাল ধরে আমরা একটি শোভন প্রবৃদ্ধির ধারার মধ্যে আছি। এবং এই শোভন প্রবৃদ্ধির ধারা বাংলাদেশে যথোপযুক্ত আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং বৈষম্য বিলোপের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর পেছনে বড় কারণ হচ্ছে- যতখানি প্রবৃদ্ধি মাত্রা নিয়ে আলোচনা, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধির চরিত্র নিয়ে আলোচনা। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আমরা ফল দেখতে পাচ্ছি না।”

কী ধরনের প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আয়ভোগ, সম্পদের বৈষম্য কমাবে এবং শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে- সিপিডির সামগ্রিক মূল্যায়নে এই দুটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানান তিনি।

সিপিডি বলছে, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে যতখানি না সমস্যা আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সমস্যা রাষ্ট্রের সঙ্গে বা বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেটা বিদ্যমান।

দেবপ্রিয় বলেন, ‘রাষ্ট্রের আয়-ব্যয় তুলনীয় দেশের চেয়ে এখনো অনেক কম। কিন্তু বাজেট ঘাটতি বা আর্থিক ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। কারণ এটা ৫ শতাংশের নিচে থাকছে।

সিপিডির মূল আশঙ্কার জায়গাটি হলো- ‘এটার অর্থায়নের ক্ষেত্রে অতি পরিমাণে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে করা হচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর এই যে নির্ভরশীলতা এ বছর হয়েছে, যখন কিনা বিদেশী ঋণ গত বছরের চেয়ে বেশি এসেছে। অর্থাৎ অর্থায়নের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ নির্ভরশীলতা কিন্ত সেই অর্থে যাচ্ছে না।’

“কিন্তু তারপরও আর্থিক খাত নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ আছে এমনটার চেয়ে বেশি উদ্বেগ আছে বৈদেশিক খাত নিয়ে।”

তিনি বলেন, ‘ইদানিং আমাদের সামগ্রিক বাণিজ্যিক লেনদেনের ঘাটতি বেড়েছে। একইসঙ্গে চলতি হিসাবেও বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি বেড়েছে। রপ্তানি, রেমিটেন্স ও বৈদেশিক সাহায্য বেড়েছে, কিন্তু তারপরও ঘাটতি বেড়েছে। এরপর বড় কারণ হলো আমদানি। রেমিটেন্স, রপ্তানি ১৭ দশমিক ৪ ও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে আমদানি ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এটা এক প্রকার ছাদ ফুড়ে চলে যাওয়ার মতো।’

“আমরা আগেই বলেছি, এই আমদানি নিয়ন্ত্রণ যদি পর্যবেক্ষণ না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশে শুধু যে অর্থনীতি সম্পর্কে বিকৃত চিত্র হবে, তা না। লেনদেন ঘাটতি হবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস- টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে- এই আমদানির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে। নির্বাচনের আগে এটা বাড়ে” যোগ করেন সিপিডি’র এই বিশেষ ফেলো।

তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্থিক খাতের উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিন্তু বৈদেশিক লেনেদের পরিস্থিতি খুব আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এটার ফলে টাকার মূল্যমান বাড়তে থাকবে। এতে কিছু রফতানিকারক হয়তো সাময়িক খুশি হবে। তবে অবধারিতভাবে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি করে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেবে। ফলে মজুরি বাজারে চাপ সৃষ্টি হবে। সরকার আগামীতে গার্মেন্টস খাতের মজুরি পূর্নবিবেচনা করবে। এগুলোর ওপর আরও চাপ বাড়বে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, ‘টাকার মূল্য হ্রাসের ফলে যদি মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে, তবে অবধারিতভাবে সুদের হারও বাড়বে। কারণ প্রকৃত সুদের হার নির্ভর করে দেশের মূল্যস্ফীতির হার কত তার ওপর। ফলে এক ধরনের দুষ্টচক্রের মধ্যে ঢুকে গেছে বৈদেশিক খাত।’

তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক খাতের সঙ্গে আরও বড় দুশ্চিন্তার বিষয়- এখন যে প্রভুত প্রয়োজনীয় ঋণ আমরা নিচ্ছি, তা হয়তো এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। এটা আগামী ৪ বা ৫ বছরে এটি একইরকম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলা যাবে না। বেশকিছু দেশে আমরা দেখেছি- বড় বড় অবকাঠামো করতে গিয়ে তারা যে ঋণ নিয়েছে তা পরিশোধ করতে গিয়ে ওই দেশ এক ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে আর্থিক খাত নিয়ে উদ্বেগ আছে। কিন্তু আতঙ্ক আছে বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি নিয়ে।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এসময় বৈদেশিক সাহায্য বেড়েছে, তারপরে অন্যান্য, রেমিটেন্স বেড়েছে, রফতানি বেড়েছে। কিন্তু তারপরও অনিয়ন্ত্রিত আমদানির কারণে। সহজ কথা- আমদানি প্রবাহের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। প্রয়োজনে আগামী বাজেটে যেসব পণ্য শূণ্য শুল্কে আসে, যার মাধ্যমে টাকা পাচারের আশঙ্কা বেশি তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *