বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪২ অপরাহ্ন

শৈলকুপায় কোন খুনেরই দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির নজীর নেই! দুই চাচাতো ভাইকে কুপিয়ে হত্যা, ১২ দিনে ৪ খুন!

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৪৪ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪২ অপরাহ্ন

জাহিদুর রহমান তারিক, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধুলিয়াপাড়া গ্রামে লাল্টু (৪৫) ও অভি (২৬) নামে দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এলাকায় সামাজিক আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস খানের সমর্থকরা এই হত্যাকান্ড ঘটায়। নিহত লাল্টু ধুলিয়াপাড়া গ্রামের মনজের মন্ডলের ছেলে।অন্যদিকে অভি একই গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।

এই নিয়ে শৈলকুপায় ১২দিনে ৪ জন খুন হয়েছে। শৈলকুপার ওসি বজলুর রহমান জানান, ধুলিয়াপাড়া ও পাথরবাড়িয়া গ্রামে আওয়ামী লীগের দুইটি সামাজিক দল রয়েছে। মকবুল মহুরী ও আব্দুল কুদ্দুস খান এ সব গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কাঁচেরকোল ইউনিয়নের ধুলিয়াপাড়া গ্রামে গত ৭ মে সকালে আইয়ুব মুসল্লী নামে এক ব্যক্তির উপর হামলা করে কুদ্দুস খাঁ গ্রুপ। একই দিন বিকালে মকবুল হোসেন ও তার ভাতিজা রাকিবুল ইসলাম পলাশের উপর পাল্টা হামলা করে আব্দুর রশিদ খাঁ গ্রুপের সমর্থকেরা।

প্রতিশোধ নিতে রোববার সকালে অবেদ খাঁ নামে এক ব্যক্তির উপর হামলা চালানো হয়। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার দুপুরে আব্দুর রশিদ খাঁ গ্রুপের লোকজন মকবুল মন্ডলের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে অভি (২৫), লাল্টু (৪৫) ও মনজের মন্ডল (৬০) গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে দুপুরে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হলে দুপুর ১টার দিকে লাল্টু ও অভি মৃত্যুবরণ করেন। মনজের মন্ডলকে মুমুর্ষ অবস্থায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত অভির চাচা শফিউদ্দীন অভিযোগ করেন, আমার ভাই লাল্টু ও ভাতিজা অভি বাড়ির সামনে বসে ছিলেন। এ সময় পাথরবাড়িয়া গ্রাম থেকে এসে তাদের ব্যাপক মারধর ও কুপিয়ে আহত করে। কুপিয়ে জখম করার ফলে তারা মৃত্যুবরণ করেন। এলাকাবাসির অভিযোগ রোববার আবেদ আলীকে মারধরের পর পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং আপোষ মিমাংশা করে দেয়। ফলে সোমবার দুইটি হত্যাকান্ড ঘটে যায়।

অভিযোগ পাওয়া গেছে শৈলকুপা থানায় বর্তমান ওসি বজলুর রহমান যোগদান করার পর থেকেই সামাজিক বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আসামীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি না করে তিনি আপোষরফা করে বেড়ান বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ওসির অপসারনের দাবীতে শৈলকুপার সাধারণ মানুষ স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের কাছে দাবী জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে শৈলকুপার সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই বলেন, করোনা আতংক ও পবিত্র রমজান মাসে ১২ দিনের ব্যবধানে শৈলকুপায় চারজন খুন হওয়ায় আমি লজ্জিত। তিনি বলেন, আমি পুলিশকে বলেছি আপনারা শুধু নিরপেক্ষই থাকবেন না, অত্যাচারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর হবেন। এ ক্ষেত্রে দলমত দেখার দরকার নেই। তিনি বলেন, গত ৪/৫ বছর শৈলকুপায় কোন হানাহানি ছিল না। কোন মানুষও মরেনি। বর্তমান ওসি যোগদানের পর থেকে দেখছি আপোষের প্রবণতা বেড়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে আমি পুলিশ সুপারের সাথে আলাপ করে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় দেখছি বলে জানান আব্দুল হাই এমপি। এদিকে গনমাধ্যম কর্মীদের অভিযোগ, ওসি বজলুর রহমান ফোন ধরেন না। খালি ঘুমায়। আপোষের মাধ্যমে তিনি সব কিছুর সমাধান করতে চান। ফলে অপরাধী ও অত্যাচারীরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। তথ্য নিয়ে দেখা গেছে, জেলার সবচে দাঙ্গা প্রবণ এলাকা হিসেবে শৈলকুপায় কোন খুনের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির নজীর নেই। হত্যাকান্ডের কিছুদিন পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জোর দবরদস্তি করে প্রতিটি হত্যা মামলা আপোষ করে ফেলা হয়। ফলে একের পর এক মারামারি ও হত্যার ঘটনা ঘটলেও কোন সাজা নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *