শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন
মোঃ মোছাদ্দেক হাওলাদার, বরিশাল॥ তিনি হচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির বরপুত্র। চাহিদা মোতাবেক টাকা না দিলে তার কলম চলে না। কলমের কালি খরচ করেন তার চাহিদা মেটানোর পরে। নয়ত সে দোষ ধরতে ধরতে অনেক কাগজ পত্র ছুড়ে ফেলে দেন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী অনেকের। যার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে তিনি হলেন, ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা মজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে দিনের পর দিন অসাধু দলিল লেখকদের যোগসাজশে নামমাত্র কাগজপত্র দাখিল করে মোটা অঙ্কের ঘুষের মাধ্যমে চলছে দলিল রেজিস্ট্রির কাজ।
জেলা সাব-রেজিস্ট্রার ও প্রশাসনের তদারকি না থাকায় দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা ও তার আশীর্বাদপুষ্ট দালালরা জিম্মি করে রেখেছে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে। সাব-রেজিস্ট্রার ও অসাধু দলিল লেখক চক্রের দুর্নীতির কাছে অসহায় হয়ে পরেছে সাধারন জনগন। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন জেহাদ ঘোষণা করেছে তখন অফিসের প্রধান কর্মকর্তা বহল তবিয়তে থাকায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার খুঁটির জোর কোথায়?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দলিলের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক প্রতি লাখে ১১শ টাকা নির্ধারিত ঘুষ। এরপর প্রথম হাজার থেকে ২৪ হাজার পর্যন্ত ৫শ, ২৪ হতে ৩৫ হাজার পর্যন্ত ৬শ, ৩৫ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত ৮শ, ৫০ থেকে ৭৫ হাজার পর্যন্ত ৯শ, ৭৫ থেকে ১ লাখ পর্যন্ত ১১শ টাকা এবং ১ হাজারের নিচে হলে ১শ টাকা। এভাবেই নির্ধারিত ঘুষ দিতে হয় অফিসারদের। অফিস শেষে কতটি দলিলে কত লাখ টাকা হয়েছে তা প্রত্যেক দলিল লেখকে হিসাব করে দিতে হয় ঘুষের নির্ধারিত ফি। এ নিয়ম শুধু সাফ কবলা দলিলের ক্ষেত্রে। এছাড়া হেবা বিল এওয়াজ, দানপত্র, হেবার ঘোষণাপত্র, আমমোক্তারনামা, বায়না চুক্তিনামা, এফিডেবিড এ সমস্ত দলিলের ক্ষেত্রে আবার আলাদা ঘুষ ফি দিতে হয়। এবং দলিল করতে যে সমস্ত কাগজপত্রাদি প্রয়োজন সেখানে যদি কোনো ত্রুটি থাকে তবে কর্মকর্তাদের চাহিদা মতো হাদিয়া না দেওয়া পর্যন্ত দলিল রেজেস্ট্রি হয় না। কিছু দলিল হয় যা দলিল আইনে পড়ে না। দলিলগুলো অফিসের মধ্যে বিশ্রাম কক্ষে বসে রেজেস্ট্রি করে দেন কর্মকর্তা। দলিল ভিজিট কমিশনের ক্ষেত্রে ফিস ধার্য থাকলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দলিল দাতা/গ্রহীতার দুর্বলতার সুযোগ পেয়ে উভয় পক্ষ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। দলিল ডেলিভারি ক্ষেত্রে দলিল প্রতি মাসে ৫ টাকা ও ৩ বছরের ঊর্ধ্বে ১শ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও সেখানে নেয়া হয় বেহিসাবে। কর্তার মন জয় করে কাজ না করলে দলিল লেখদের সমূহ বিপদ সামনে এসে দাঁড়ায়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে তাকে কয়েকজন দলিল লেখকের সাথে বিশ্রামাকক্ষে আড্ডা দিতে দেখা যায়। এ সময় অভিযোগের বিষয়ে তাকে নানান প্রশ্ন করা হলে তার পাশ থেকে দলিল লেখকরা তার পক্ষে উত্তর দেওয়া শুরু করে। এক পর্যায়ে নানান প্রশ্নের মুখে পরলে সাব-রেজিস্টার ও দলিল লেখরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সাংবাদিকদের উপর। এবং ক্ষুব্ধ হয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মজিবুর রহমান বলেন, আমার এখানে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, এ অফিসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়। আর প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হয় সাধারন মানুষ। অবৈধ ভাবে দলিল হওয়ায় ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেকে।