মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন

স্বাধীনতার ৫০ বছরে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি হয়নি

সৈয়দ মুন্তাছির রিমন। / ১১৭ পাঠক
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এই মাসের তাৎপর্য বাঙ্গালী জাতির কাছে অবিস্মরণীয়। ১৯৭১ সালে মুক্তি পাগল নিরস্ত্র বাঙ্গালী জীবন বাজি রেখে দেশ ও জাতি রক্ষার জন্য যাপিয়ে পড়ে। তারপর জাতির কালজয়ী সন্তানদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ৯ মাস যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানী বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এরপর বিজয় দিবস বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারীভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

কিন্ত আজও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। আজ প্রবাসে বসে আমার সাংবাদিকতার রিপোর্টিং ডায়েরির পাতা খোঁজতে গিয়ে দেখি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজলার পতনঊষার ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মরহুম হানিফ উল্লাহ স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর পার হলেও এখনও মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। বিজয়ের মাসে মুঠোফোনে প্রতিবেদকের সাথে মরহুম হানিফ উল্লাহ‘র পুত্র হাজী ছনাওর মিয়ার কথা হলে তার বাবার স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক স্মৃতি বিজড়িত কথা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন- ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার বাবা হানিফ উল্লাহ পাকিস্তানিদের হাতে নির্মমভাবে মারা যাবার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে লড়ে গেছেন। তিনি আরো জানান- ১৯৭১সালের ৪ ডিসেম্বর সকাল বেলায় তার বাবাকে পাকিস্তানিরা ঘর থেকে তুলে এনে মুন্সিবাজার দুর্গাবাড়ি নামক স্থানে নিয়ে নির্মমভাব হত্যা করে। বাবা হত্যার খবর বিকাল ৪টায় পেলেও বাবার লাশের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি স্ত্রী সন্তানদের। স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগীতায় হত্যার পর থেকে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া, পুত্র হারানোর কষ্ট সইতে না পেরে হানিফ উল্লাহর বাবা মৃত আজমত উল্ল্যাহ এর কয়েকদিন পর তিনিও মারা যান। এরপর থেকে অতি কষ্টে জীবন চলছিল মরহুম হানিফ উল্লার স্ত্রী রাবিয়া বেগম ও তার সন্তানরা আব্দুল জব্বার, মো: ছনাওর, মো: আনোয়ার, মো: ছানু, মো: আনকার,মো: আজাদ, সুফিয়া বেগম,শামীম বেগমগংদের। ১৯৭১ সালে হানিফ উল্লা হত্যার পর থেকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের পরিবার পেয়েছে অনেক সাহায্য সহযোগীতা, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ঢেউটিন, ডেগ বাসনসহ চাল ডাল ইত্যাদি সহায়তা নিয়মিত পেয়েছে।

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তন থেকে হানিফ উল্ল্যার পরিবার সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন। তারপর তার পরিবারে নেমে আসে নির্যাতন নিপীড়ন। স্থানীয় রাজাকাররা শহীদ হানিফ উল্ল্যার বাড়িঘর জবর দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে। একপর্যায়ে মরহুম হানিফ উল্লার স্ত্রী সন্তানদের বাড়ি থেকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে জমিজমা দখল করে নেয় রাজাকাররা। এর পর থেকে হানিফ উল্লার সন্তানরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেন। মরহুম হানিফ উল্ল্যার পুত্র হাজী ছনাওর আরো জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো পর্যন্ত বাবাকে শহীদ মুক্তিযাদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগত জীবনে তার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। শুধুমাত্র চাওয়া পাওয়া হল তার বাবাকে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্বার স্বীকৃতি। তিনি বলেন স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় তার বাবাকে হত্যার বিচার ও তাদের পৈত্তিক সম্পত্তি ফিরে পাওয়া জন্য সাহায্য কামনা করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *