| বর্তমানকন্ঠ ডটকম: পৃথিবীতে সূর্য, চন্দ্র, তারা’র মতো মানুষও আলো ছড়ায়। মানুষও অন্যের মাঝে আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অপার আনন্দে নিরন্তর কাজ করেন একজন মানুষ। আমি সেই আলোকিত মানুষ সাংবাদিক অরবিন্দ ধরের কথা বলছি। প্রশান্তিময় বিশ্ব সমাজের জন্য যার আকুল প্রার্থনা সহজ-সরল জীবন-যাপন যার নিত্যসঙ্গী। সদালাপী, ভদ্র এবং বন্ধু সুলভ ব্যবহারে এক মানুষ হিসেবে সমাজে যিনি পরিচিত তিনি অরবিন্দ ধর (শ্রী অরবিন্দ বসুধর)। যে মানুষটি বার্তা সংগ্রহে সাধারণ মানুষের দুঃখ, দুদর্শায়, হাসি, কান্নায় নগরে, গ্রামে-গঞ্জে, হাটে ছুটে বেড়ান নিয়ত। পেশাগত আর্থিক আনুকুল্যকে তুচ্ছ না ভাবলেও আত্মমর্যাদা ও মনুষ্যতকে বড় করে দেখেন। নির্লোভ, নির্মোহ থেকে যিনি কাজ করে যান সতত তিনি অরবিন্দ ধর।
সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, লেখালেখি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছোট বেলা থেকেই। তিনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সূর্য সৈনিক। সাংবাদিকতার পাশাপাশি কবিতা, ছোট গল্প ও বিভিন্ন স্থানীয়-জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কলাম লিখেন। এ সমাজে বিচিত্র বিরল একজন সাদামাটা মানুষের প্রতিকৃতি অরবিন্দ দা। সেই নিরিখেই মূলত তাঁর সম্পর্কে আমার একান্ত অনুভূতি প্রকাশ করার একটা প্রয়াশ বলবো, স্ব-হৃদয় পাঠক- তাঁর সম্পর্কে একটি জীবন টিকাও বলা যেতে পারে।
তিনি ১৯৫৩ সালে ২০ সেপ্টেম্বর কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটী গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা স্বর্গীয় অধীর চন্দ্র বসুধর ও মাতা স্বর্গীয়া রেনুকা দেবী বসুধর। আট সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর শৈশব কাটে নেত্রকোণা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের বেতাটী গ্রামের নিজ বাড়িতে। অরবিন্দ ধর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন বেতাটীর ফি প্রাইমারী বিদ্যালয়ে, বড়ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে নিম্ন মাধ্যমিক এবং বাউসী অর্ধচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে নেত্রকোণা শহরের দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং ময়মনসিংহ আক্তার উজ্জামান কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। তৎকালীন আনন্দ মোহন কলেজে বাংলায় অনার্স অধ্যায়নকালীন সময়ে নিজেকে অতিশয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার কারণে উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারেননি।
১৯৯৭ সালে নেত্রকোণা শহরের সাতপাই এলাকার প্রফেসর পাড়ায় শ্রী বীরেন্দ্র চৌধুরীর কন্যা মিতা চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের এক বছর পার হতে না হতেই তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী ইহলোক ত্যাগ করেন। প্রিয় স্ত্রীর বিয়োগ ব্যথায় একাকিত্বের যন্ত্রণা ভুলে থাকার জন্য সাংবাদিকতা পেশায় আত্মনিয়োগ হন। নিজের খবরকে পাশ কাটিয়ে অন্যের মাঝেই নিজেকে সমর্পিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে নেত্রকোণা শহরের নিউ টাউন এলাকায় বসবাস করছেন একা। স্ত্রীকে তিনি এতোই ভালোবাসতেন যে, যার কারণে তিনি আর বিয়েই করেননি। সেবা করাই যার এখন একমাত্র ব্রত।
অরবিন্দ ধর বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ছাত্র ইউনিয়ন রাজনীতিতে পা রেখে ময়মনসিংহ মহা বিদ্যালয়ে অধ্যায়ণ কালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুসারী হয়ে ছাত্রলীগ রাজনীতিতে জড়িত হয়ে নেতৃত্বে প্রশাংসা কুড়িয়েছেন সর্বমহলে। তিনি কখনও পদের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। দেশপ্রেম ও সত্য, ন্যয়ের আদর্শে ময়মনসিংহ শহরের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংগঠনিক তৎপরতায় আন্দোলন ও জাতীয় কর্মসূচিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে ময়মনসিংহ মহা বিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সম্মেলনে মোহাম্মদ আব্দুল খালেক খান গেদু- কে সভাপতি এবং বিধান ভট্টাচার্য্যকে সাধারণ সম্পাদক করে নিজে কমিটি দাখিল করার পর অরবিন্দ দার স্বদেশ প্রেম সাংগঠনিক দক্ষতা ও আদর্শিক রাজনীতির আলোকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের মাঝে উদ্ভোধক বাকসুর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রাজ্জাকের নির্দেশে অরবিন্দ ধর- কে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান মোহাম্মদ আব্দুল খালেক খান গেদু। পরবর্তীতে আমলাপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগকে সক্রীয় করতে আমলাপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পরিমল ভট্টচার্য্য (বর্তমানে ডাক্তার)। পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য হন এবং ১৯৭৫ সালে অধ্যাপক বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী- কে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও অরবিন্দ ধর- কে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে কমিটি গঠিত হয়। এই বার্ধ্যকেও তারুণ্যের প্রতিনিধি অরবিন্দ ধর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রায় আনন্দিত হন এবং তাঁর সুস্থ্য জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনায় ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনারত হন।
২০০৪ সালে নেত্রকোণা সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রাম প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিধ্বস্ত হলে স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে সম্পূর্ন নিজ খরচে কাঞ্চনপুর গ্রামের গৃহহারা বিধ্বস্ত গ্রামবাসী অসহায় পেরালাইসিস রোগী ভূমিহীন হাসেম আলীর পরিবার ও ভাওয়ালপুর বিলপাড়স্থ গৃহহারা রিক্সা চালক মোনায়েম খাঁর পরিবারকে ১৮-১৯ এপ্রিল দুই দিনে দুইটি চালা ঘর নির্মাণ করে তাদেরকে পুনর্বাসন করে দিয়েছিলেন তাঁর প্রিমতমা মৃতঃ স্ত্রী মিতা চৌধুরীর আত্মার শান্তি কামনায়। সেই খবরটি ‘দৈনিক জননেত্র’ পত্রিকায় ‘সাংবাদিক কর্তৃক দুইটি পরিবারের পুনর্বাসন’, ‘দৈনিক বাংলার দর্পন’ পত্রিকার ‘সাংবাদিক অরবিন্দ ধরের গৃহ নির্মাণ’ ও ‘দৈনিক দেশ কন্ঠস্বর’ পত্রিকায় ‘দুর্গত এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে গৃহ নির্মাণ’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। অসহায় দুইটি পরিবারকে দুইটি টিনের চালা ঘর নির্মাণ করে দিয়ে সাংবাদিক অরবিন্দ ধর সর্বপ্রথম তাঁর ত্রাণ কাজের মানবিকতার পরিচয় রাখেন।
বর্তমানে অনলাইন পত্রিকা ‘বর্তমানকন্ঠ ডটকমের’ নিজস্ব প্রতিনিধি, স্থানীয় ‘দৈনিক জননেত্র’ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি, ‘সাপ্তাহিক কৃষকের বানী’ পত্রিকার নিয়মিত কলাম লেখক। এছাড়াও তিনি ‘দৈনিক সংবাদ’, ‘দৈনিক জাহান’, ‘দৈনিক জনকন্ঠ’, ‘দৈনিক যুগান্তর’, ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’, ‘দৈনিক প্রভাত’, ‘দৈনিক বাংলার জমিন’, ‘দৈনিক বাংলার দর্পন’, ‘দৈনিক দেশ কন্ঠস্বর’ পত্রিকায় অসংখ্য কলাম, রম্য রচনা এবং ধর্ম চিন্তার নিবন্ধসহ বিভিন্ন ধারায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ইতিপূর্বে তিনি বিভিন্ন সময়ে ‘দৈনিক বাংলার দর্পন’ পত্রিকায় ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, ‘মাসিক সাহিত্য আনন্দ’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক, ‘দৈনিক বাংলার জমিন’ ও ‘দৈনিক প্রভাত’ পত্রিকার নিজস্ব সংবাদ দাতা, ‘দৈনিক অর্থনীতি’ কাগজের জেলা প্রতিনিধি, ‘দৈনিক দেশ কন্ঠস্বর’ পত্রিকায় নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে সততা ও স্বচ্ছতার সাথে একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করেছেন।
শিশুদের, আদর কুড়িয়ে নেয়া এবং প্রবীনদের সাহচর্য পাওয়া তাঁর স্বভাবজাত ধর্ম। দেশ প্রেমিক শিশু সংগঠক অরবিন্দ দা আগামী প্রজন্মকে সাদা মনের আলোকিত মানুষ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে ছাত্র জীবন থেকেই নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। তিনি জাতীয় শিশু সংগঠন ‘খেলা ঘর আসর’ নেত্রকোণা জেলা শাখার সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির জাতীয় পরিষদে সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন। এই মানুষটি একসময় কবিতা লিখতেন, নাটক ও যাত্রা পালায় অভিনয় করে প্রচুর দর্শক প্রিয়তা পেয়েছেন।
পিতা মাতার সহজ-সরল, ধর্মীয় জীবন চলার অনুশাসন থেকেই সম্ভবত তাঁর ধর্মীয় অনুভূতির সৃজন হয়। এ ভাবধারায় দীর্ঘদিন দেখেছি শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত অরবিন্দ ধর সনাতন ধর্মের নাম সংকীর্তনের অনুশীলনে নিস্কাম প্রেমের আবেশে মোহিত জীবন চলার ছন্দ। পরধর্মে সহিষ্ণু ভাবনায় ইসলাম ধর্মের অবতার নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) কর্ম ও ধর্মের প্রচারে অনুশীলন উপলব্ধি ও চেতনা তাঁর হৃদকোমলে স্থান করে নিয়েছেন। তাই তিনি একাত্ববাদে বিশ্বাসী। সদ্গুরুর কৃপা বর্জিত ঈশ্বর অনুভব এবং সষ্টার দর্শন লাভ যে কখনই সম্ভব নয়, মানুষের ভেতরে যে প্রভুর লীলা খেলার প্রকাশ ঘটে এটাই সত্য, এ অন্তর্নিহিত চেতনার আলোর ইঙ্গিতে তিনি আলোকিত হওয়ার সন্ধান করছেন। মানবিক বোধ ও আধ্যাত্মিক সত্তার এ দৈত সংমিশ্রনে নিজেকে সমর্পন করে উচ্চারণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরÑ ‘এই মোর পরিচয় হোক আমি তোমাদেরই লোক’। সর্বশেষ ¯্রষ্টার কাছে প্রার্থনা, আমার চেনা সেই সাংবাদিক অরবিন্দ ধর আলো ছড়াক মানুষ মানুষের পৃথিবীতে।
লেখক : সৈয়দ সময়
কবি, গীতিকার ও সাংবাদিক।
মোবাইল : ০১৫৮৫-০৭৭৩০০
ই-মেইল : soiedsomoy@gmail.com
01914872110somoy@gmail.com