1. azadkalam884@gmail.com : A K Azad : A K Azad
  2. bartamankantho@gmail.com : বর্তমানকণ্ঠ ডটকম : বর্তমানকণ্ঠ ডটকম
  3. cmisagor@gmail.com : বর্তমানকণ্ঠ ডটকম : বর্তমানকণ্ঠ ডটকম
  4. khandakarshahin@gmail.com : Khandaker Shahin : Khandaker Shahin
শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:১২ অপরাহ্ন
১১ বছরে বর্তমানকণ্ঠ-
১১ বছর পদার্পণ উপলক্ষে বর্তমানকণ্ঠ পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা....

আসপিয়া ও মিম আমাদের চৈতন্যে দিক নাড়া

আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী
  • প্রকাশিত : রবিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২২

আসপিয়া আর মিম যখন স্থায়ী ঠিকানার অভাবে নিয়োগ সংকটে পড়লেন তখন অনেক প্রথিতযশা আমলাকে জিজ্ঞেস করলাম স্থায়ী ঠিকানার সংজ্ঞা কী? যাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম তারা সবাই চাকুরি করেছেন জন প্রশাসনে সেই সাথে ভূমি প্রশাসনেও। তাঁদের সবারই জবাব ছিল স্থায়ী ঠিকানা মানে স্থায়ী ঠিকানা। আবারো জোর দিয়ে বলেছেন ঐ মানে যেটা স্থায়ী ঠিকানা সেটাই। যেমন কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় চাঁদ কী আর জবাব যদি হয় চাঁদ মানে চাঁদ, চাঁদই জবাবগুলি ছিল তেমনি।

আসপিয়া ও মিম সংকটে পড়লে এগিয়ে এলেন অনেকেই। সগর্জনে বললেন স্থায়ী ঠিকানা নেই বলে তারা নিয়োগ লাভে বঞ্চিত হতে পারেন না। এমন অনেকেই মন্তব্য করেছেন যারা আইনের ধারক বাহক ও প্রয়োজনে আইনে পরিবর্তন আনয়নের জন্য পরামর্শ প্রদানের যোগ্য এখতিয়ার ধারণ করেন।

অনেকদিন আগে সরকারি চাকুরি শুরু করার প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণে সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মরহুম ড. সা’দত হুসাইন তাঁর স্বভাব সুলভ বাচন ভঙ্গীতে বলেছিলেন এমন কোন কাজ করবে না যা আইনে নেই। যদি করতেই হয় তবে আইন বানিয়ে নিয়ে করবে।

আলোচিত সংকটে এই বাণী স্মরণ করার কারণ, ব্যক্তি পরিচিতির জন্য প্রায় সকল আইনেই বলা আছে স্থায়ী ঠিকানার কথা তবে কোন আইনেই স্থায়ী ঠিকানার সংজ্ঞা দেয়া নেই। স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে সবারই ধারণা এটা আবার চাউড় করে বলার কোন বিষয় না-কি! কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।

দেশে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ স্থায়ী ঠিকানা বিহীন। তাঁরা যে শুধু বস্তিতে থাকেন বা ভাসমান তা নয়, অনেক মানুষই কয়েক প্রজন্ম ধরে ভাড়া বাসায় বাস করে আসছেন যাদের স্থায়ী ঠিকানা বলতে পূর্ব পুরুষের ছিল যে নিবাস- যেখানে এখন নিজেদের কোন সম্পদ নেই। সেই ঠিকানায় নেই তাদের নামে কোন জমি বা ভিটা। হয়তো শুধু রয়ে গেছেন পূর্ব পুরুষের বংশধরগণ, যারা সম্পদহীন ব্যক্তির সাথে আত্মীয়তার সূত্রে বাঁধা। কারো কারো ক্ষেত্রে সে ঠিকানা-ও নদী গর্ভে। ঐ ঠিকানায় কারো বসবাস করার কোন সুযোগই নেই। নদী ভাঙনের পর বা কোন কারণে কথিত স্থায়ী ঠিকানার সম্পদ হাতছাড়া করে আশ্রয় নিয়েছেন ভাড়া বাড়িতে, বস্তিতে বা পরের জমিতে কিংবা সরকারি কোন অব্যবহৃত জমিতে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম কাটিয়ে দিচ্ছেন এমনি স্থায়ী ঠিকানা ছাড়াই।

দেশে স্থায়ী ঠিকানাবিহীন মানুষ আছেন বেদে সম্প্রদায়, ধাঙর সম্প্রদায়, চা বাগানের শ্রমিক, এমনি আরো নানা গোষ্ঠি। আরো আছেন ১৯৪৭ এর পরে ভারত হতে এ দেশে এসে ভাড়া বাড়িতে বা পরের জমিতে বাস করা অনেক মানুষ। বিনিময় দলিল করে এলেও অনেকেই পাননি সেই দলিলের ওপর সরকারি মোহর, ফলে তাঁরাও স্থায়ীভাবে এক ঠিকানায় বসবাস করলেও আইনানুগভাবে এক ধরণের স্থায়ী ঠিকানাবিহীন মানুষ। আটকে পড়া পাকিস্তানিদের সন্তানগণ ভোটার হওয়ার অধিকার পেয়েছেন কিন্তু তাঁরাও স্থায়ী ঠিকানা বিহীন মানুষ।

শুধু পুলিশ নয়, সকল সরকারি চাকুরিতেই জেলা কোটা আছে। মেধার ভিত্তিতে যারা চাকুরি পান পুলিশি তদন্তে তাদেরও স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করা হয়। পাসপোর্টের জন্য যাচাই হয় স্থায়ী ঠিকানা। জাতীয় পরিচয়পত্রে লিখতে হয় স্থায়ী ঠিকানা। সরকারি দলিল দস্তাবেজের নানান পরতে পরতে লিখতে হয় স্থায়ী ঠিকানা। যাদের স্থায়ী ঠিকানা নেই বা লোপ পেয়েছে তাঁদের কথা কেউ কী ভেবেছেন?

জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট, সরকারি চাকুরি এমনি নানান কাজের জন্য লিখতে হয় স্থায়ী ঠিকানা। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্র আইন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, পাসপোর্ট আইন, নাগরিকত্ব আইন বা সরকারি চাকুরি বিধিমালাসমূহের কোথায়ও স্থায়ী ঠিকানার সংজ্ঞা দেয়া নেই। আসপিয়া কিংবা মিম যদি চাকুরির আবেদনে লিখতেন নদীতে ভেঙে যাওয়া পিতৃপুরুষের স্থায়ী ঠিকানা তাহলে কি তাঁরা অন্য ভাবে বিব্রত হতেন না? স্থায়ী ঠিকানা বিহীন মানুষদের ঠিকানা নিয়ে কেউই আমরা ভাবিনি। সবাই ধরেই নিয়েছি কোনটি স্থায়ী ঠিকানা তা সবারই জানা। এবার আসপিয়া ও মিমের ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে বাতলে দিয়েছে আমাদের সম্মিলিত অজ্ঞতা।

যারা প্রশ্ন তুলেছেন স্থায়ী ঠিকানার অভাবে কেন চাকুরি হবে না, তারা কেউই ব্যাখ্যা করেননি নিজ জেলা বা স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের মাপকাঠি কী হতে পারে। পুলিশের কনস্টেবলের চাকরির আবেদন করার শর্তই হচ্ছে নিজ জেলায় আবেদন করতে হবে এবং ঐ জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। অতএব বরিশাল কিংবা খুলনার পুলিশ প্রশাসন আলোচ্য দুইজনের চাকুরির নিয়োগপত্র জারি না করে আইনানুগ কাজই করেছিলেন।

আসপিয়া ও মিমের হাত ধরে এখন আমাদের সময় এসেছে যে কোন একটি আইনে স্থায়ী ঠিকানার সংজ্ঞা লিপিবদ্ধ করার। নিবন্ধকার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক থাকাকালে ২০১৪ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাবে [“স্থায়ী ঠিকানা; অর্থ ব্যক্তির নিজের ও পিতা পিতামহের স্থাবর সম্পত্তিসহ বসবাসের ঠিকানা; অথবা নদী ভাঙ্গন বা অন্য কোন কারণে ইতোপূর্বেকার স্থায়ী ঠিকানা বিলুপ্ত হওয়ায় বা ত্যাগ করায় নতুন কোন স্থানে কোন স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করিয়া ১২ বৎসরের অধিক সময়ের জন্য উক্ত স্থানে বসবাস করিতেছেন ও ঐ ঠিকানার বিপরীতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে করাদি পরিশোধ করিতেছেন;] যুক্ত করার জন্য প্রস্তাব করেন। তবে ২০১৮ সালে সংশোধিত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালায় স্থায়ী ঠিকানা সংজ্ঞার পরিবর্তে স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থানের সংজ্ঞা এই রূপে লিপিবদ্ধ হয় [“স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান“ অর্থ কোন ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা বা কোন ব্যক্তি যে স্থানে ন্যূনতম ৩ (তিন) বৎসর যাবৎ বসবাস করিতেছেন অথবা নদী ভাঙ্গনে বা অন্য কোন কারণে স্থায়ী ঠিকানা বিলুপ্ত হওয়ায় নূতন কোন স্থানে যে কোন সময়ের জন্য বসবাস করিতেছেন বা নূতন কোন স্থানে কোন স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করিয়া যে কোন সময়ের জন্য উক্ত স্থানে বসবাস করিতেছেন।] অর্থাৎ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালায় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্থায়ী ঠিকানা সংজ্ঞায়িত হলো না, সংজ্ঞায়িত হলো স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান।

স্থায়ী ঠিকানার সংজ্ঞা না নির্ণিত হলে ভবিষ্যতে অনেক বেশি বেশি মানুষ সমস্যায় পড়বেন। ঠিকানা বিহীন যে সব মানুষ আগে শুধু কায়িক শ্রমের উপর নির্ভরশীল ছিলেন তাঁদের নতুন প্রজন্ম এখন শিক্ষিত হচ্ছেন, আসছেন কায়িক শ্রমের বাহিরে বিভিন্ন পেশায়, উদ্যোগী হয়েছেন বিদেশের শ্রমবাজারে প্রবেশের। সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন ঠিকানার সত্যতা। রাষ্ট্রই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, স্থায়ী ঠিকানা থাকার আবশ্যিকতা আছে কি-না!

আদতেই কী স্থায়ী ঠিকানা জাহির করার আবশ্যিকতা আছে এখনকার প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার যুগে? কেন চাই স্থায়ী ঠিকানা? প্রয়োজনে কাউকে খুঁজে বের করতে! মানুষের পরিচিতি এখন বায়োমেট্রিক্সের মধ্যে আটকে পড়ে গেছে। কেউ চাইলেই আর নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারবেন না। তাই স্থায়ী ঠিকানার বাস্তু ভিটার পরিবর্তে নিজের বায়োমেট্রিক্সই এখন যে কারো স্থায়ী পরিচিতির মাপকাঠি- তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। যদি রাষ্ট্রের মনে হয় তার নাগরিকের স্থায়ী ঠিকানা থাকার প্রয়োজন আছে তাহলে কোন একটা আইনে স্থায়ী ঠিকানার সংজ্ঞা থাকতে হবে। সেটা হতে পারে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনে কিংবা জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন আইনে। অথবা স্থায়ী ঠিকানা আইন বলেও কোন এক নতুন আইন হতে পারে। আইনে স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার সংজ্ঞা সুস্পষ্ট করে লিপিবদ্ধ করতে হবে। নইলে আসপিয়া ও মিমের মত ঘটনা আরো অনেক ঘটবে। আসপিয়া ও মিম আমাদের চৈতন্যে যে নাড়া দিলেন তাতে এখনই সময় অন্যদের জন্য মসৃণ পথ সৃজন করার। তাঁরা দু’জন সংকটে পড়েছিলেন কেন? পুলিশের চাকুরির বিধান নিজ জেলায় আবেদন করতে হবে বলে। শুধু পুলিশে নয়, তাঁরা যদি চাইতেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মী পদে নিয়োগ, তাহলেও আবেদন করতে হতো নিজ স্থায়ী জেলার কোটায়। রাষ্ট্র পঞ্চাশ বৎসর বয়স পেরিয়ে পা দিলো একান্নতে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে লোপ পাক জেলা কোটা। সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত হোক!

*লেখক অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব।




এই পাতার আরো খবর

















Bartaman Kantho © All rights reserved 2020 | Developed By

Privacy Policy

Theme Customized BY WooHostBD