বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বিষয়সহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিম্নআয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা দেয়া হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেয়া হবে। জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভাসানচরে এক লাখ মানুষের থাকার ও কর্মসংস্থান উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইভাবে বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবাও দেয়া হচ্ছে। আমি নিম্নআয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আপনারা ইতোমধ্যেই জেনেছেন। তবু আমি কয়েকটি বিষয়ের কথা আবারও উল্লেখ করছি। দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও কোচিং সেন্টার গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। সকল পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ২৬-এ মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি-বেসরবারি অফিস বন্ধ থাকবে।
‘কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে। গতরাত থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন, নৌযান এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখবে। ২৪-এ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে। এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহায়তা করছেন। আপনারা যে যেখানে আছেন, সেখানেই অবস্থান করুন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে, যারা জনগণকে সেবা দেবেন। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে গত ১৫ মার্চ সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে আমি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হই। এ রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে আঞ্চলিকভাবে সম্মিলিত প্রয়াস নেয়ার জন্য আমি সার্কভুক্ত দেশসমূহের নেতাদের উদাত্ত আহ্বান জানাই। সার্কভুক্ত দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলো প্রস্তাবিত সুপারিশমালা বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করছে। আমরা একটি যৌথ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে বাংলাদেশ ১৫ লাখ ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
‘যুগে যুগে জাতীয় জীবনে নানা সঙ্কটময় মুহূর্ত আসে। জনগণের সম্মিলিত শক্তির বলেই সেসব দুর্যোগ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেয়েছে। ইতোপূর্বে প্লেগ, গুটি বসন্ত, কলেরার মতো মহামারি মানুষ প্রতিরোধ করেছে। তবে ওইসব মহামারির সময় বিশ্ব এখনকার মতো ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ছিল না। এতো বিপুলসংখ্যক মানুষ তখন একদেশ থেকে অন্য দেশে বা একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করতো না। এ কারণে করোনাভাইরাস দ্রুততম সময়ে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিরও প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। সবাই মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালালে নিশ্চয়ই বিশ্ববাসী এ দুর্যোগ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাবে।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এ সঙ্কটময় সময়ে আমাদের সহনশীল এবং সংবেদনশীল হতে হবে। কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন না। বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সঙ্গে সরবরাহ চেইন অটুট রয়েছে। অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়াবেন না। জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। সর্বত্র বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।