জাহিদুর রহমান তারিক, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার খানজাপুর গ্রামের ইসরাইল হোসেন (৭০) করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বরন করায় দুটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তিনি ১৫/২০ দিন জ্বর সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। মৃত ইসরাইল হোসেনের গলায় ব্যাথাও ছিল বলে পরিবারের স্বজনদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামীমা শিরিন।
রোববার সকালে বাড়ি দুটি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা জানান, মৃত ইসরাইল হোসেনের গ্রামের বাড়ি জামাল ইউনিয়নের খানজাপুর গ্রামের বাড়ি ও শহরের আড়পাড়া নদীপাড়া এলাকায় জামাই মোঃ বোরহান উদ্দিনের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাত ৯ টার দিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার খানজাপুর গ্রামের ইসরাইল হোসেন (৭০) নামে এক বৃদ্ধ সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। তিনি শহরের আড়পাড়া নদীপাড়া এলাকায় জামাই বোরহান উদ্দিনের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর সেখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত ব্যক্তির নিকটতম প্রতিবেশি ফরিদা পারভীন নামের এক গৃহিনী জানান, মৃত ইসরাইল হোসেন লস্কর জন্মের পর থেকে এক পা বিকলঙ্গ। তারপরও তিনি ক্রাসে ভরদিয়ে চলতে পারতেন। নিজে সেলাই মেশিন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রায় ১৫/২০ দিন ধরে ইসরাইল হোসেন জ্বর,সর্দি, কাঁশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। করোনা আক্রান্তে প্রায় সকল উপসর্গই ছিল ইসরাইল হোসেনের।
শনিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নমুনা সংগ্রহসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে রোববার সকালে পরিবারের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। মৃতদেহের দাফন ও কাফনের ব্যবস্থা করেন কালীগঞ্জ উপজেলার ৬ আলেম।
হাসপাতাল থেকেই মরদেহের গোসল করানো হয়। এরপর তাদের মাধ্যমে একটি সিএনজিতে মরদেহ নিয়ে যাওয়া মৃত ব্যক্তি ইসরাইল হোসেনের গ্রাম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের খানজাপুর গ্রামে।
এসময় জানাযা পড়ানোর জন্য আলেমদের পক্ষ থেকে গ্রামের মসজিদের খাটিয়া চাওয়া হয়। কিন্তু গ্রামবাসিরা খাটিয়া দিতে রাজি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে মাটিতে রেখেই জানাযা সম্পন্ন করেন তারা। গ্রামবাসিরা সহযোগিতা না করলেও দুরে দাড়িয়ে আলেমদের দাফনের কাজ দেখছিল গ্রামবাসি।
মরদেহের দাফন- কাফনের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন, কালীগঞ্জ মেইন বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের ঈমাম ফারুক নোমানী, মাওলানা রুহুল আমিন, হাফেজ হেদায়েত উল্লাহ, মাওলানা ইয়াসিন, মাওলানা আতাউর রহমান ও হাফেজ শাহ জালাল।
ঈমাম ফারুক নোমানী জানান, জানাযার নামাজ পড়ানোর জন্য গ্রামবাসির কাছে মসজিদের খাটিয়া চাওয়া হয়। কিন্তু গ্রামবাসিরা সেটা দিতে অস্বীকার করে। পরে মরদেহ মাটিতে রেখেই জানাযা নামাজ সম্পন্ন করে লাশ দাফন করা হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামীমা শিরিন মৃত ব্যক্তির সাথে থাকা স্বজনদের বরাত দিয়ে বলেন, চারদিন ধরে জ্বর ছিল। ঠান্ডা-কাশিও ছিল এবং তার গলাব্যাথাও ছিল। আমাদের সাথে আগে থেকে সে কোন প্রকার যোগাযোগ করে নাই। গত দুই দিন ধরে তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
শনিবার রাত ৯ টার দিকে হাসপাতালে আনার পথে সে রাস্তায় মধ্যে মারা গেছে।তিনি আরো জানান, হাসপাতাল থেকেই মারা যাওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে তার করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করি। নমুনা ইতিমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে রোববার সকালে মৃত ব্যক্তির মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশ দাফন ও কাফনের জন্য ৬ জনের একটি টিম কাজ করেছে।