নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, সোমবার, ০৭ মে ২০১৮:
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামীকাল মঙ্গলবার (৮ মে) জামিনে মুক্ত হওয়ার ব্যাপারে দেশবাসীর মনে নানা শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছ থেকেও পাওয়া যাচ্ছে বিছিন্ন বক্তব্য। ফলে বেগম জিয়ার কারামুক্তি সত্যিকার অর্থে কোন পথে হাঁটছে তা এখনও খোলাসা করতে পারেনি কোনও পক্ষ। এনিয়ে উৎকণ্ঠায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাও।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সোমবার (৭ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি আয়োজিত এক স্মরণ সভা, আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে ৮ মে চেয়ারপারসনের মুক্তি ইস্যুতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘৮ মে জামিন শুনানিতে খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেও তাঁকে অন্য আরকেটি মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানো হতে পারে।’
নজরুল ইসলামের ভাষ্য, ‘সুপ্রিম কোর্ট কাল যদি বেগম জিয়ার জামিন মঞ্জুর করে তাহলেও অন্য মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানোর কারণে তিনি মুক্ত হতে পারবেন না। আর এ সরকার নানা কৌশলে তাঁকে জেলে আটকে রাখার চেষ্টা করতে পারে। শ্যোন এরেস্টে আমরা উনা’র জামিন করালাম। কিন্তু আরেকটি মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখালো! আরেকটাতে জামিন করালাম আরেকটাতে দেখালো! সরকার চাইলে নিশ্চয় তা পারে।’
তবে একই দিন জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দেশের সুশৃঙ্খল আইনমান্যকারী নাগরিক হিসাবে মিথ্যা ও রাজনৈতিক মামলা জানা স্বত্বেও বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে আইনের বিধান অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আগামীকালও আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁকে মুক্ত করেই ঘরে ফিরবো।’
বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার দেখে ভীত হয়েই সরকার আদালতের মাধ্যমে গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন মঈন খান।
শনিবার (৫ মে) বিকেলে কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবদীন সাংবাদিকদের বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগামী ৮ মে জামিনে মুক্তি পেতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন- আমি তো কোনো অন্যায় করিনি, আমাকে কেন সাজা খাটতে হচ্ছে? ম্যাডাম অসুস্থ, তিনি বাম হাত নাড়াতে পারছেন না। আমরা আশাবাদী আগামী ৮ মে তিনি (খালেদা) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিনে মুক্তি পাবেন। ৮ তারিখে বেগম জিয়া মূল মামলায় জামিন পেলে অন্য মামলাগুলোতেও জামিন পাবেন।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কুমিল্লার বিচারক বেগম জিয়ার জামিন আবেদনের পরবর্তী শুনানির তারিখ দিয়েছেন ১৫ মে। কারণ ৮ মে সুপ্রিম কোর্টে জামিন হলেও বেগম জিয়ার মুক্ত হওয়ার সম্ভবনা নেই। হাইকোর্ট জামিন দিলেও সুপ্রিম কোর্টে আটকে যায়। আর সুপ্রিম কোর্ট জামিন দিলে লয়ার কোর্টে আটকে যায়। অর্থাৎ সরকার চায় না, বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হোন। আর বেগম জিয়া জেলে থেকেও যে সুস্থ এবং ভালো থাকবেন, সেটাও সরকার চায় না।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘হাইকোর্টে যেদিন মামলা উঠে, সেই দিনই খালেদা জিয়ার জামিন হওয়ার কথা। আর ওই দিন যদি জামিন হতো তাহলে এই শ্যোন এরেস্ট আর হতো না। কিন্তু সব পরিকল্পনা করে করা হয়েছে।’
বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘কী চান আপনারা? বেগম জিয়া পঙ্গু ও দৃষ্টিহীন হয়ে যাক? আল্লাহ না করুন-আরও কোনও বড় দুর্ঘটনা হোক, এটা চান?’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হয়েছে। রায় ঘোষণার দিন (৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে এখনও পর্যন্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি আছেন।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে- কবে মুক্তি পাবেন খালেদা জিয়া? বিএনপি চেয়ারপারসনের কি দীর্ঘ কারাবাস হবে? সরকার কি বেগম জিয়ার মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালিত করতে চাইছে? এমন বহু প্রশ্ন যখন জনমানসে উঁকি দিচ্ছে তখন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি কিংবা তাঁর দীর্ঘ কারাবাস প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা বিভিন্ন পক্ষের আইনজীবীদের কাছ থেকেও পাওয়া যাচ্ছে পৃথক বক্তব্য।
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘কোনও মামলায় কারও একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলে সবগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।’
যেহেতু খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে এবং তিনি কারাবন্দি আছেন, ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ কতটা নিশ্চিত তা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে দেশবাসীর মনে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে তৈরি হচ্ছে শঙ্কা। সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারও দুই বছরের অধিক সাজা হলে সাজার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। জিয়া অরফানেজ স্ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। সেই দিক থেকে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে লড়ার অযোগ্য। তবে সুযোগ থাকছে তাঁর সামনে। সেক্ষেত্রে আপিল করে ভোটে অংশ নিতে পারবেন খালেদা জিয়া।