নিউজ ডেস্ক | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম:
চাঁদপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে এ জেলা অবস্থিত। চাঁদপুরের মানুষ আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত। ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজনন অঞ্চল হিসেবে চাঁদপুরকে ‘ইলিশের বাড়ি’ নামে ডাকা হয়। ১৯৮৪ সালের আগ পর্যন্ত এটি বৃহত্তর কুমিল্লার একটি অংশ ছিল।
চাঁদপুরে ৮টি উপজেলা, ৭টি পৌরসভা, ৬০টি ওয়ার্ড, ২৭৫টি মহল্লা, ৮টি পুলিশ থানা, ২টি নৌ থানা, ১টি কোস্ট গার্ড স্টেশন, ১টি রেল থানা, ৮৭টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং ১২২৬টি গ্রাম রয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে নদীর জেলা হিসেবে পরিচিত চাঁদপুরেও। এ জেলায় রয়েছে সংসদীয় ৫টি (২৬০, ২৬১, ২৬২, ২৬৩, ২৬৪) আসন। আর এ ৫ আসনে নির্বাচন করছেন ৩৫ জন প্রার্থী।
চাঁদপুর-১:
আসনটি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৬০ নং আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর (নৌকা), বিএনপির মোশারফ হোসেন (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির এমদাদুল হক রুমন (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক একেএম শহীদুল ইসলাম (মোটরসাইকেল), ইসলামী ফ্রন্টের নূরুল আলম মজুমদার (মোমবাতি), ইসলামী আন্দোলনের জোবায়ের আহমেদ (হাতপাখা)।
ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ২০১২ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যও তিনি। অন্যদিকে মোশারফ হোসেন মালয়েশিয়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
চাঁদপুর-২:
আসনটি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৬১ নং আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল আমিন রুহুল (নৌকা), বিএনপির ড. জালাল উদ্দিন (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির এমরান হোসেন মিয়া (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের আফসার উদ্দিন (হাতপাখা), ইসলামী ঐক্যজোটের মো. মনির হোসেন চৌধুরী (মিনার), মুসলিম লীগের নুরুল আমিন লিটন (হারিকেন)।
নুরুল আমিন রুহুল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। অন্যদিকে, ড. জালাল উদ্দিন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।
চাঁদপুর-৩:
আসনটি চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর উপজেলা ও হাইমচর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৬২ নং আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. দীপু মনি (নৌকা), বিএনপির শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলনের মো. জয়নাল আবেদীন শেখ (হাতপাখা), জাকের পার্টির দেওয়ান কামরুন্নেসা (গোলাপ ফুল), বাসদের শাহজাহান তালুকদার (মই), বাংলাদেশ বিপ্লবি ওয়ার্কাস পার্টির মো. আজিজুর রহমান (কোদাল), তরিকত ফেডারেশনের মো. মিজানুর রহমান (ফুলের মালা)।
ডা. দীপু মনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তিনি গত দশবছর ধরে এই আসনের সংসদ সদস্য। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্রথম কাউন্সিল-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এমএ ওয়াদুদের কন্যা।
তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পর বাংলাদেশে প্রথম মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিয়োগ পান।
অন্যদিকে, শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক জেলা বিএনপির আহবায়ক।
চাঁদপুর-৪:
আসনটি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৬৩ নং আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংবাদিক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান (নৌকা), বিএনপির এম এ হান্নান (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির মাঈনুল ইসলাম (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের মুকবুল হোসেন (হাতপাখা), ইসলামী ফ্রন্টের গোলাম মাহমুদ ভূঁইয়া মানিক (মোমবাতি), জাকের পার্টির বাচ্চু মিয়া ভাষানী (গোলাপ ফুল), বাসদের আনিসুজ্জামান ভূঁইয়া (মই), ন্যাপ-এর দেলওয়ার হোসেন পাটওয়ারী (আম), মুসলিম লীগের মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া (হারিকেন)।
মুহম্মদ শফিকুর রহমান জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি। আসনটিতে প্রথম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ড. শামসুল হক ভূঁইয়া। খেলাপি ঋণের কারণে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ কারণে প্রার্থী বদলে শফিকুর রহমানকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়।
এম এ হান্নান বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি।
চাঁদপুর-৫:
আসনটি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলা ও শাহরাস্তি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৬৪ নং আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম (নৌকা), বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক (ধানের শীষ), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী (চেয়ার), ইসলামী ফ্রন্টের আবু সুফিয়ান আল কাদেরী (মোমবাতি), ইসলামী আন্দোলনের শাহাদাত হোসেন (হাতপাখা), জাকের পার্টির ওবায়েদ মোল্লা (গোলাপ ফুল)।
মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, সামরিক শাসক এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯০ সালে দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারে তিনি মন্ত্রী পদমর্যদায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ শাহরাস্তি নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর-৫ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাজিগঞ্জ শাহরাস্তি এলাকা থেকে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে একই আসন থেকে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সাবেক সভাপতি। তিনি ২০০৮ সালে বিএনপির টিকেটে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন।