চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের জহির মিজি নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম সহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন : চাঁদপুর সদর উপজেলার মধ্যম বাখরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. জামাল গাজী, বিভাগীয় পরিদর্শক বাপন সেন, উপ-পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান, উপ-পরিদর্শক মো. পিয়ার হোসেন, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. আশ্রাফ আলী, সিপাই মো. সাইফুল ইসলাম।
গত মঙ্গলবার মোকাম বিজ্ঞ আমলী চাঁদপুর সদর আদালতে কাপড় ব্যবসায়ী জহির মিজি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নাম্বার, ৬৩২/২১। আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্ত দিয়েছেন ও ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন।
২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে দোকানে যাওয়ার পথে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম সহ তার অন্যান্য সদস্যরা কাপড় ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। এ সময় একদিন পর কাপড় ব্যবসায়ী জহিরের বাবা ও ভাইকে একটি জিডি মূলে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। সাত দিন জেল খেটে বের হয়ে জহিরের বাবা এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে চট্টগগ্রম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গোয়েন্দা ঘটনাটি তদন্ত করে সহকারী পরিচালক দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে। এছাড়া জহির মিজির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে হাজারো মানুষ মানববন্ধন করেন ও গণস্বাক্ষর অংশগ্রহণ করে।
এ ঘটনায় মামলার বাদী জহির মিজি জানান, মামলার ৭ আসামি মাদক ব্যবসায়ীর বিষয়ে তথ্য দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। সেই মাদক ব্যবসায়ীর সাথে সম্পর্ক করে টাকার বিনিময় ম্যানেজ হয়ে তার কাছ থেকে ইয়াবা নিয়ে বাড়ি থেকে দোকানে যাওয়ার পথে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম সহ অন্যান্য সদস্যরা আমাকে আটক করে। মাদকের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার কথা বলে দিদারুল আলম ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে ও টাকা না দেওয়ায় মাথায় অবৈধ অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করবে বলে হুমকি দেয়। দীর্ঘদিন নিরপরাধ হয়ে জেল খেটে বের হয়ে প্রকৃত ঘটনাটি উদঘাটন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে চট্টগগ্রম গোয়েন্দা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসে তদন্ত করে দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তারপরেই আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মামলাটি দায়ের করেছি ও ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে যে অপরাধ করেছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাই।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষে মামলার আইনজীবী অ্যাড. হুমায়ুন কবীর সুমন জানান, বাদীকে অন্যায়ভাবে মাদক ব্যবসায়ীর সাথে সমন্বয় করে একেএম দিদারুল আলম মাদক মামলায় ফাঁসিয়েছে। এই মামলাটি সিআইডিকে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন আদালত। আমরা আশাবাদী, মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে বাদীর পক্ষে প্রতিবেদন দিয়ে অভিযুক্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আদালত।
এ বিষয়ে মামলায় অভিযুক্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম জানান, আদালতে মামলা হওয়ার খবর শুনেছি। দু’একদিনের মধ্যেই সিআইডি তদন্ত করবে জানতে পেরেছি। তবে চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যিনি তদন্ত করেছেন সেই তদন্তটি পুনরায় করা হবে। তবে এই মামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নির্দোষ বলে দাবি করেছেন।