চট্টগ্রাম,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,সোমবার,২৫ ডিসেম্বর ২০১৭: চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে একই পরিবারের চার নারীকে ধর্ষণের ঘটনা তদন্ত ও সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) কর্ণফুলী থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ- কমিশনার (বন্দর) হারুণ উর রশীদ হাযারী এ কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত ও তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আমাদের আংশিক ব্যর্থতা ছিলো। স্পর্শকাতর এ ঘটনার পর পুলিশের যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিলো তা যথাযথ হয়নি।’
চাঞ্চল্যকর এই ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নেয়া এবং আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে স্বীকার করেন হারুণ উর রশীদ হাযারী।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর, আরও গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিলো।’
গত ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে কর্ণফুলীর শাহ মিরপুর গ্রামে এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির পর ওই বাড়ির চার নারীকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনার পর পরিবারটি মামলা করতে গেলে কর্ণফুলী থানা পুলিশ তাদের পটিয়া থানায় যেতে বলে। কিন্তু পটিয়া থানা পুলিশ তাদেরকে কর্ণফুলিতেই মামলা করতে বলে। এভাবে সপ্তাহখানেক গড়িমসি করে কোনও থানাই মামলা গ্রহণ করেনি। পরে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদের নির্দেশে কর্ণফুলী থানা পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়। গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই ঘটনায় পুলিশের যথাযথ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলো। মামলা নিতে গড়িমসি করায় তারা কর্ণফুলি থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানায়। এরইমধ্যে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তালবাহানার অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধর্ষণকাণ্ডের ১২ দিন পর সোমবার সংবাদ সম্মেলনে আসে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে মামলা নেয়া ও আসামি গ্রেফতারে কর্ণফুলী থানার ওসির রহস্যজনক ভূমিকার বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।
এ প্রশ্নে সরাসরি জবাব না দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার হারুণ-উর-রশিদ হাযারী বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি সিএমপি কমিশনার স্যারকে জানাব। উনি এখন আসামি গ্রেফতারের বাইরে কোনও কথাই শুনতে চাচ্ছেন না। তারপরও স্যার নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।’ সংবাদ সম্মেলনে ওসি ছৈয়দুল মোস্তফাও উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি নিশ্চুপ ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় একটি দৈনিকের একজন সাংবাদিক বলেন, ‘ঘটনা জানার পর আমি নিজেই ওসিকে ধর্ষণের কথা বলেছিলাম। তখন ওসি আমাকে বলেছিলেন-সেখানে ডাকাতি হয়েছে। কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। আমি বললাম- আপনাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম ধর্ষণ হয়েছে। ওসি বলেন-আপনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম।’
লিখিত বক্তব্যে হারুণ উর রশিদ হাযারী দাবি করেন, ঘটনার দুই-তিনদিন পর বাদি থানায় এলেও ধর্ষণের কথা বলেননি। ডাকাতির বিষয়টিও তিনি শুধু মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-বন্দর) আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘এ ঘটনায় কার গাফিলতি কম, কার বেশি সেটা বিষয় নয়। ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং আসামিদের গ্রেফতারেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’