নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,বৃহস্পতিবার,১৮ জানুয়ারী ২০১৮: ২০০১ সালের ঘটনা। একটি কালো অধ্যায়ও। মেয়েটি সবে কিশোরী। বয়স মাত্র ১৪ বছর। ছোট্ট বয়সেই তার ওপর নেমে আসে হায়েনার হিংস্রের থাবা। শিকার হতে হয় চরম নির্মমতার। শুধু মেয়েটিই নয়, তার পুরো পরিবারটিও হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়। উৎসবের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে তখন ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট। ক্ষমতায় এসেই বিরোধীদের ওপর হামলা-নির্যাতন শুরু করে।
এমন নির্যাতনের শিকার হয় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ণিমা রাণী শীলের পরিবারটি।
স্থানীয়রা জানান, শুধু আওয়ামী লীগ করার কারণেই তাদের ওপর এ হামলা-নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। সেই ছোট্ট পূর্ণিমার বয়স এখন প্রায় ৩২ বছর। অন্ধকার জগতের কতকিছুই না তাকে দেখতে হয়েছে। তারপরও আশায় বেঁচে ছিলেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে তিনি চলবেন এক ভিন্নপথে। আলোর পথে। পূর্ণিমা এখন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হয়েছেন। আজ থেকে তিনি কাজ শুরু করবেন। পূর্ণিমাকে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা করার বিষয়টি তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা নিজেই জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার নিজের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ তথ্য জানান সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হওয়া তারানা হালিম। প্রতিমন্ত্রী আশা করছেন, অন্ধকার জগত দেখে আসা পূর্ণিমা এখন আলোর জগতে নতুন পথচলা শুরু করবে।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের জয়ের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক হামলা হয়।এর মধ্যে পূর্ণিমা রাণীর ওপর অত্যাচার নিয়ে সে সময় গণমাধ্যমে একের পর এক খবর প্রকাশ হয়। তখন পূর্ণিমা ছিলেন ১৪ বছরের কিশোরী। এখন তার বয়স প্রায় ৩২ বছর।
গতকাল বিকালে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘আমার পরিকল্পনায় ছিল ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য কিছু করা। আমার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার পদটি খালি থাকায় পূর্ণিমাকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং বৃহস্পতিবার থেকে সে অফিস শুরু করবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পূর্ণিমা প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী মেয়ে। নিয়োগ দেওয়ার পর ফেসবুক পেজে ছবি দেওয়ার সময় তার ছবি আমি ব্লার করে দিতে চেয়েছিলাম, সে বলল ছবি দিতে কোনো সমস্যা নেই, এটি আমার লজ্জা না।’
তারানা হালিম বলেন, ‘পূর্ণিমা পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় গান শিখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিল। তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহায়তা করেছেন। পূর্ণিমা জানিয়েছে, সে প্রধানমন্ত্রীকে মামনি বলে সম্মোধন করে।’ পূর্ণিমাকে নিয়োগ দিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে তারানা লিখেছেন, ‘মনে পড়ে সেই পূর্ণিমাকে? ২০০১ এর ১ অক্টোবর নির্বাচন-পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ১৪ বছরের মেয়েটি। হ্যাঁ, আমি সিরাজগঞ্জের সেই পূর্ণিমা শীলের কথা বলছি। আজ আমি গর্বিত। আমি পূর্ণিমাকে আমার ‘পার্সোনাল অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ দিলাম। পূর্ণিমা তোমাকে আমরা ভুলে যাইনি। জীবনের অন্ধকার রূপ তুমি দেখেছ, আলোর জগতে তোমায় স্বাগতম…শুরু হোক নতুন পথচলা। তোমাকে অভিবাদন প্রিয় পূর্ণিমা।’
জানা যায়, ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বধীন চারদলীয় জোট বিজয়ী হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হন স্কুলছাত্রী পূর্ণিমা। তার পরিবারের ওপরও নির্যাতন করা হয়। ধর্ষণকারীরা সবাই চারদলীয় জোটের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় পূর্ণিমার বাবা অনিল চন্দ্র শীল ১৭ জনকে আসামি করে উল্লাপাড়া থানায় মামলা করেন। বাবার মৃত্যুর পর মামলার বাদী হন পূর্ণিমা নিজেই। এ ঘটনায় ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- আব্দুল জলিল, আলতাফ হোসেন, আব্দুল মমিন, আলতাফ, জহুরুল ইসলাম, হোসেন আলী, লিটন মিয়া, ইয়াসিন আলী, আব্দুর রউফ, আব্দুল মিয়া, বাবলু মিয়া।