নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০১৮: ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা জুড়েই সাকিব পাঁচ কি ছয় নম্বরে ব্যাট করেছেন। নিজের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অনেক সময়ই তাকে অম্লমধুর কথা বলতেও শোনা যেতো। যদিও এই পাঁচে-ছয়ে ব্যাটিংটা বেশ উপভোগও করতেন সাকিব। ওই সময়টাতে দল ভালো অবস্থানে থাকলে তিনি কম বলে বেশ কিছু রান করে দিতেন। সময়ের প্রয়োজনে একপ্রান্ত আগলে রেখেও ব্যাট করতে তার কার্পণ্য ছিল না।
৬-৭ বছর আগের কথা যদি বলি, সাত-আট নম্বরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে অনেকদিন যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন নাসির হোসাইন। এই জুটি ওই সময়গুলোতে দারুণ কিছু ম্যাচে ফিনিসারের ভূমিকাও পালন করেছেন। মাঝে রিয়াদকে উপরে তুলে আনা হলো। বিপরীতে নাসির একটা সময় দল থেকেই ছিটকে পড়লেন। রিয়াদও বেশিদিন তিন-চার নম্বর জায়গাটা ধরে রাখতে পারলেন না। আবারও টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডারে চলে আসতে হলো তাকে।
আর বাংলাদেশের তিন নম্বর স্থানটি নিয়ে তো বছরের পর বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি হতাশাও এসেছে ‘নম্বর থ্রি’ থেকে। মাঝে মুমিনুল কিছুদিন তিন নম্বরে ব্যাট করলেও তিনিও ধারাবাহিক হতে পারেননি। গত বছর দুই ধরে টাইগারদের সদ্য সাবেক কোচ হাথুরুসিংহে সাব্বির রহমানকে নিয়ে এই জায়গাটিতে এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছিলেন। কিন্তু ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যান হিসেবে সাব্বিরও উত্তীর্ণ হতে পারলেন না।
সম্প্রতি মুশফিকের জায়গায় সাকিব আল হাসানকে টেস্ট অধিনায়ক ঘোষণা করা হলো। মাহমুদউল্লাহ ভাইস ক্যাপ্টেন। এরই মধ্যে হাথুরুসিংহে পদত্যাগ করলেন। হঠাৎই যেন হালকা বাসাতে সুতি কাপড়ের মসৃণ ভাঁজটা কিছুটা ভেঙে গেল। তবে হাথুরুর চলে যাওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট যে ঘাড় মচকে পড়েনি তার উদাহরণ চলতি তিন জাতি সিরিজের টাইগারদের প্রথম তিন ম্যাচ।
আর তাতে নতুন করে যোগ হলো ব্যাটিং অর্ডারে ‘তিন নম্বরে’ আশার প্রতীকের সন্ধান। সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাট করে দারুণ সফল সাকিব। প্রথম দুই ম্যাচে ম্যাচসেরা। হতে পারতেন তৃতীয় ম্যাচেও। বাংলাদেশ তিন নম্বরের ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে কতদিন পর এমন ধারাবাহিক পারফর্ম পেলো সেটি খতিয়ে দেখার বিষয়। যেখানে সাকিব প্রথম ম্যাচে ৩৭, দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৭ ও তৃতীয় ম্যাচে ৫১ রান করেন।
আর অপেনার তামিমের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। গত বছর তিনেক ধরে ব্যাট হাতে এই ড্যাসিং অপেনার অনেক কিংবদন্তিতেই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এরই মধ্যে ওয়ানডেতে ৬ হাজার রান পূর্ণ করেছেন। চলতি সিরিজেও ধারাবাহিক (৮৪*, ৮৪ ও ৭৪)
তামিমের ব্যাট। মুশফিকের কথাও না বললেই নয়। এই সিরিজে চার নম্বরে বেশ কনফিডেন্টলি ব্যাট করছেন সদ্য সাবেক এই টেস্ট অধিনায়ক।
কিন্তু সিরিজে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশ যখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৮২ রানে অলআউট হয়ে গেলো তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে- টাইগারদের ব্যাটিংয়ের মূল শক্তি নিয়ে। গভীরতা নিয়ে। প্রশ্ন উঠবে দুর্বলতা নিয়েও।
আগের তিন ম্যাচে তামিম-সাকিব-মুশফিকের ব্যাটে ভর করেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ভালো কিছু করার সুযোগ থাকলেও পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির, নাসিররা। আজ হয়তো পরীক্ষাটা মিডল অর্ডারের জন্যই অপেক্ষা করছিল। কিন্তু লড়াইটাও তো করতে পারলেন না রিয়াদ-সাব্বির-নাসিররা। যেটুকু লড়েছেন তো সেই মুশফিকই। রিয়াদ-সাব্বির-নাসিরদের কেউই তো মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারলেন না। রাইজিং লেভেলের ক্রিকেটে কিংবা বিশ্ব ক্রিকেটের সমীহ আদায় করতে এমন দায়িত্বহীন ব্যাটিং যে বড় বাধা সেটি আমলে নিতে হবে। আগের তিন ম্যাচেও রিয়াদ-সাব্বির-নাসির ফ্লপ ছিলেন। কিন্তু তার প্রভাব পড়েনি। টপ অর্ডারই দলকে পথ দেখিয়েছে। কিন্তু টর্প অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে তাদের মিডল অর্ডারের দায়িত্বটা কি তাকি আদৌ আত্মস্থ করতে পেরেছেন সাব্বির-নাসিররা। নইলে কেন এমন গা-ছাড়া ব্যাটিং।
টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৩ রানে যখন তামিম, বিজয় ও সাকিব সাজঘরে ফিরলেন তখনই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। তবে সেই খাদ থেকে দলকে টেনে তোলার এদিন বড় দায়িত্বটা ছিল রিয়াদ, সাব্বির, নাসিরদের। কিন্তু পারলেনটা কই! আর সেই না পারার খেসারত হিসেবে ১০ উইকেটের লজ্জার পরাজয়।
তামিম-সাকিব-মুশফিকরা ভালো খেলতে দল বড় স্কোর করবে এটা নিশ্চিত। তবে তারা ফ্লপ করলে যে গোটা দল নতজানু হয়ে পড়বে তেমন তো নয়। অথচ হলো তা-ই। তাহলে কি আগের তিন ম্যাচে তামিম-সাকিব-মুশফিকরা ব্যাট হাতে জ্বলে না উঠলে আজকের মতোই হতো বাংলাদেশের দশা। কেন এমন হবে?
বাংলাদেশ এখন যে লেভেলে ক্রিকেট খেলছে তাতে করে তো দু-তিন জন ব্যাটসম্যানের উপর নির্ভর করা তো মোটেই উচিত নয়। আর ‘নামধারী’ পারফর্মারদের ব্যাপারেও হয়তো বিসিবিকে নতুন করে ভাবতে হবে। অন্তত আজকের ম্যাচের পরে।
চ্যালেঞ্জেবল এই ক্রিকেটের যুগে ‘গভীরতাহীন মিডল অর্ডার’ তো দলের জন্য ভরাডুবিরই কারণ হবে। ৮ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা দলে শুধু তামিম-সাকিব-মুশফিকই ব্যাটসম্যান নন। যদি তাই হয় তবে পাঁচ-ছয় কিংবা সাত নম্বরের ব্যাটসম্যানদের পারফর্ম মূল্যায়নের এখনই বোধহয় উপযুক্ত সময়। কারণ, মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের ভিত্তিটা এমন থাকতে হবে যেন টপ অর্ডার ব্যর্থ হলেও তারা ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়। আর আজকের ম্যাচের পর বিসিবিও হয়তো আঁচ করতে পারছে- দলে ব্যাটিংয়ের মূল শক্তি কিংবা দুর্বলতাগুলো। এবং সেগুলো যত দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব দলের জন্য ততই মঙ্গল।