বিএনপি আদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে খুনীর দল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারলে পাকিস্তানী ভাবধারায় রাষ্ট গঠন করে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারবে।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) দশটায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ‘১৫ এবং ২১ আগস্ট বাঙালি জাতির নেতৃত্ব নির্মূলে নীলনকশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে রিসার্চ এণ্ড ডায়লগ ইন্টারন্যাশনাল (আরডিআই)।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, খালদো জিয়া ও তারেক রহমান রাজনীতিদি নয় বরং পাকিস্তানী ভাবধারার পৈশাচিক, বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি। প্রত্যেকটা গণহত্যায় এই পরিবারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গণহত্যা একই যোগসূত্র পাওয়া যায়। একাত্তরের গণহত্যাও একই জায়গা থেকে পরিচালিত।
হানিফ বলেন, কিছু কিছু সুশীল রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলেন। কার সাথে সমঝোতার কথা বলেন? রাজনীতিবিদের সাথে রাজনীতিবিদের সমঝোতা হতে পারে, কথা হতে পারে কিন্তু হত্যাকারী, বিকৃত মানসিকতা সম্পন্নদের সাথে সমঝোতা কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।
২১ আগস্ট নিয়ে বিএনপি ২০০৪ সালে মিথ্যাচার করেছে, এখনো করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের শাবক তারেক রহমান লন্ডনে বসে বলছে ২১ আগস্টের জন্য শেখ হাসিনা দায়ী। যেটা উনার মা (খালেদা) বলেছেন সংসদে। কি পরিমাণে পৈশাচিকতা ঢুকলে এসব বলা যায়। গণহত্যা চালানোর পর তাদের কোনো অনুশোচনা হয়নি বরং তারা এখনো নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াতে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানির জন্য কোনো মামলা হয়েছে এমন নজির নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা মায়াকান্না করে বলছেন তাদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব মামলা ২০১২ সাল থেকে শুরু করা তাদের সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ড ও নাশকতার কারণে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, গ্রেনেড হামলার পর পুলিশ টিয়ারশেল, লাঠিচার্জ করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সরিয়ে খুনিদের নিবিঘ্নে পলায়নে সহায়তা করেছে। হতাহতদের উদ্ধারের ব্যবস্থা না করে সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটিয়ে মামলার আলামত ধ্বংস করে দিয়েছিলো। থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছে। মানুষ যখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তখনো মামলা নেয়নি। বিএনপি যদি এ গণহত্যায় জড়িত না থাকবে তাহলে তারা কেন এই কাজ করেছে?
বিএনপি জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে গ্রেনেড হামলাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্ঠা করেছিলো এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, সংসদে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া বললেন, শেখ হাসিনাকে আবার কে মারতে যাবে? ভ্যানিটি ব্যাগে করে তিনি নিজে গ্রেনেড নিয়ে গেছেন। কি নিষ্ঠুর পৈশাচিক রসিকতা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা বিশ্বের মানুষের কাছে ছিলেন মহান ব্যক্তি, বিস্ময়কর রাজনৈতিক নেতা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ছোট্ট স্বাধীন দেশের দায়িত্ব নিয়ে মানুষের জন্য আবাসযোগ্য করার কাজ করে যাচ্ছিলেন। সেই বঙ্গবন্ধুকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্ঠা করা হয়েছে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড কার জন্য? কেন? করা হয়েছিলো এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, একাত্তরে যেভাবে নির্বিচারে গণহত্যা চলানো হয়েছে ঠিক সেভাবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পঁচাত্তরে গণহত্যা চালানো হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তান ও তাদের মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলো। তাদের নির্মম, নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড থেকে নারী, শিশু কেউই রেহাই পায়নি। যারা পরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছিলো তাদের কাজে প্রমাণ হয় এ হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তান জড়িত ছিলো।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যায় জিয়াউর রহমান নেপথ্যে থেকে ভূমিকা রেখেছেন। খুনি ফারুক সাক্ষাৎকারে বলে গেছে ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ জিয়াউর রহমানের সাথে বৈঠক করেছে। জিয়া তাদের বলেছে, আমি সামনে যেতে পারবো না। তোমরা এগিয়ে যাও।
হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকা মানে নেপথ্যে পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকা। জিয়া নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেনন অথচ সরকার গঠন করলেন রাজাকারদের দিয়ে। পাকিস্তানের পক্ষে যারা ছিলো তাদের পুনর্বাসন করলেন, দালাল আইন বাতিল করে রাজাকারদের মুক্ত করে দিলেন। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে আনলেন। নিষিদ্ধ জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলেন। এসবের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় তিনি পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ছিলো। তাদের লক্ষ্য ছিলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে শেষ করে দিতে পারলে আজীবন ক্ষমতায় থাকা যাবে।
হানিফ বলেন, আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে পাকিস্তানের অনুসারী বিনপি-জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে বয়কট করতে হবে, কোণঠাসা করতে হবে। তবেই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপ-উপাচার্য ও আরডিআই চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, গ্লোবাল টেলিভিশনের সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা এবং বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আরডিআই নির্বাহী পরিচালক মিঠুন মুস্তাফিজ।