নিউজ ডেস্ক, বর্তমানকণ্ঠ ডটকম, রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮: চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে চালকের আসনে ছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন শ্রীলঙ্কা পাল্টা জবাব দেয়া শুরু করে। তৃতীয় দিন তারা নিজেদের অবস্থা মজবুত করে। চতুর্থ দিন বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। রিলে দৌড় প্রতিযোগিতার বাটন পরিবর্তনের মতো এভাবেই চট্টগ্রাম টেস্টের এক একটি দিন বদল হয়েছে। আজ শেষ দিন বাংলাদেশকে হার বাঁচাতে লড়তে হবে। লঙ্কানরা চাইবে জয়। পঞ্চম দিন উইকেট কিন্তু ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কথা কমই বলে থাকে। স্পিনবান্ধব উইকেট রং বদল করে ব্যাটিংবান্ধব হওয়ার পর সেখানে চলে ব্যাটসম্যানদের রাজত্ব।
শুরুটা টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হাত ধরে। পরে সেখানে তাল মেলান সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানরাও। কিন্তু একপর্যায়ে তারা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরকেও ছাড়িয়ে যান। এই ছাড়িয়ে যাওয়াটাই চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের জন্য ‘কাল’ হয়ে উঠে। ডেকে আনে অশনি সংকেত। যেখানে পূর্বাভাস ছড়াচ্ছে বাংলাদেশকে ড্র করতে হলে সর্বশক্তি দিয়ে আজ পঞ্চম ও শেষ দিন পুরো সময়টাই টিকে থাকতে হবে। উইকেটের বিবেচনায় এটি কঠিন কাজ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার ৯ উইকেটে ৭১৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে ২০০ রানে এগিয়ে থাকার পর বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট করতে নেমে ৮১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকেই পড়ে। এর ফলে বাংলাদেশের সামনে ভেসে উঠে হারের শঙ্কা। সেই শঙ্কা কাটাতে হলে আজ ব্যাট হাতে অসম্ভব লড়াই করতে হবে বাদ বাকি ব্যাটসম্যানদের। এখনো ইনিংস হার এড়াতে বা শ্রীলঙ্কাকে আবার ব্যাট করতে নামাতে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে ১১৯ রান।
কাজটা কিন্তু কঠিনই হবে। কারণ কাল সারাদিনে উইকেট পড়েছে দু’দলের মিলে ৯টি। শ্রীলঙ্কার ছয়টি, বাংলাদেশের তিনটি। এর মাঝে পাঁচটিই পড়েছে আবার তৃতীয় সেশনে। বলের হিসাবে ২৮.৫ ওভারে। এই পাঁচ উইকেটের চারটিই গেছে আবার স্পিনারদের পেটে। এই ২৮.৫ ওভার দু’দল মিলে রান করেছে ৯৪। ওভার প্রতি ৩.২৯৮ করে। উইকেটে বল টার্ন করতে শুরু করেছে। যে কারণে লঙ্কান দলপতি দিনেশ চান্ডিমাল অভিজ্ঞ হেরাথকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। আজ হেরাথের সঙ্গে সান্দাকান ও দিলরুয়ানের ঘূর্ণি বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যের পরীক্ষাই দিতে হবে! সেই পরীক্ষায় তারা পাস করতে পারলে তবেই বাঁচাতে পারবে টেস্ট?
রান প্রসবা উইকেটে চতুর্থ দিনের দুই সেশনের একটু বেশি সময় পর ২০০ রানের লিড কোনো ভয়ের কারণ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সেই রানকেই ভয়ের ‘বিষয়’ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তামিম-ইমরুল উদ্বোধনী জুটিতে ৫২ রান এনে দিয়েছিলেন। শুরুর এই রান কিন্তু স্বস্তিরই। যদিও এই জুটি আরো বড় হতে পারতো। কিন্তু তা আর পারেনি ইমরুলের কারণেই। রান করার চেয়ে উইকেটে টিকে থাকার মন্ত্রে যেখানে উজ্জীবিত হওয়ার কথা সেখানে ইমরুলকে পেয়ে বসে ‘সুইপ’ শট খেলার রোগ। এভাবে খেলতে গিয়ে তিনি বার কয়েক বেঁচে যান। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৯ রানে গিয়ে আর রক্ষা পাননি। স্কয়ার লেগে দিলরয়ানা পেরেরার বলে চান্দিমালের হাতে ধরা পড়েন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংসে ‘মঙ্গল’ দূর হয়ে ‘শনি’ এসে ভর করে। শেষ বিকেলে মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে প্রথমে তামিম ইকবাল (৪১), পরে মুশফিকুর রহিম (২) আউট হলে আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশের ইনিংসে অনেক আগেই সন্ধ্যা নেমে আসে।
বলা যায় শ্রীলঙ্কা যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই দিনটি শেষ করতে পেরেছে। বাংলাদেশের ইনিংসে ‘মিনি’ ধস নামানোর আগে ব্যাটিংয়ে তিনি কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে। তৃতীয় দিন শেষে তাদের লক্ষ্য ছিল নিজেদের ইনিংসকে যতটা সম্ভব পেটমোটা করা। সেখানে তারা শতভাগ সফল হয়। ৭ উইকেটে ৭১৩ রান করে পাক্কা ২০০ রানে এগিয়ে থেকে ইনিংস ঘোষণা করে। এই রান বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ রানও শ্রীলঙ্কার। ২০১৪ সালে মিরপুরে তারা ৬ উইকেটে ৭৩০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। কুশাল মেন্ডিস ও ধনাঞ্জায়া ডি সিলভার সূচনার ওপরে দাঁড়িয়ে সেখানে দলকে চতুর্থ দিন এ রকম অবস্থানে নিয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করা রোশেন সিলভা (১০৯) এবং দিনেশ চান্দিমাল (৮৭) ও ডিকবেলার (৬২) হাফ সেঞ্চুরিতে।
বাংলাদেশের বোলারদের জন্য ছিল হতাশার। তাইজুল বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ২০০ রান খরচ করেন। সানজামুল অভিষেকে সবচেয়ে বেশি ১৫৩ রান দেয়া বোলার হিসেবে নাম লেখান। আবার শ্রীলঙ্কার ১৯৯.৩ ওভার বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওভার। এর চেয়ে বেশি ওভার খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১২ সালে খুলনায় তারা ২০০.৩ ওভার খেলে ৬ উইকেটে ৬৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল।