নিউজ ডেস্ক,বর্তমানকণ্ঠ ডটকম,শনিবার,২৪ মার্চ ২০১৮:
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমান বিচ্ছ্ন্নি ভূখণ্ড জেগে ওঠার সম্ভাবনা এখন বেশ উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে উপকূলীবাসীর মনে আশার সঞ্চার হচ্ছে। বলা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যখন বাংলাদেশের বিরাট অংশ সাগরে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঠিক সে সময়েই বঙ্গোপসাগরের বুকে দেখা দিয়েছে আরেক বাংলাদেশের হাতছানি। সেখানে সমুদ্রের অথৈ জলে প্রাকৃতিকভাবেই বিশাল বিশাল চর জেগেছে, গড়ে উঠেছে মাইলের পর মাইল ভূখণ্ড।
বিশেষজ্ঞরাও জোর দিয়ে বলছেন, ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের আয়তন। বদলে যাচ্ছে দেশের মানচিত্র। এভাবে বাড়তে বাড়তে একদিন অনেক বড় হবে বাংলাদেশ। তখন অতিরিক্ত জনসংখ্যা অভিশাপ না হয়ে হবে আশীর্বাদ। খাদ্যাভাবও থাকবে না। কারণ জমি বাড়ছে, খাদ্য উৎপাদনও হবে দ্বিগুণ।
বিজ্ঞানীদের মতে, বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশির তলদেশ হবে ‘প্রমিজড ট্রেজার অব দ্য ফিউচার বা ‘প্রতিশ্রুত ভবিষ্যৎ সম্পদভাণ্ডার’। বিজ্ঞানীদের এ ধারণার সত্যতা মিলছে। কারণ নোয়াখালীর হাতিয়া ও চরসুবর্ণ উপজেলার একশ বর্গকিলোমিটার জুড়ে আড়াই লাখ লোকের বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। বসবাস শুরু করেই এখানকার লোকজন সরকারের দেয়া জমিতে বিভিন্ন কৃষিপণ্যের উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন। বঙ্গোপসাগর প্রান্তে গত ৫০ বছরে যে এক হাজার বর্গকিলোমিটার চর জেগেছে, তাতে ২৫ লাখ বাড়তি লোকের বসতি স্থাপন সম্ভব হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন নদীর মোহনায় যে চর পড়েছে তা সুপরিকল্পিতভাবে সুরক্ষা ও উদ্ধার করা হলে অন্তত ১৫ হাজার কিলোমিটার ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। যেসব এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে চর জেগে উঠছে সে এলাকায় ক্রসবাঁধ দিয়ে ভূমি উদ্ধার ও বনায়নের মাধ্যমে তা স্থায়ীকরণ সম্ভব হবে। নেদারল্যান্ডস এ পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণ জমি সাগরপ্রান্ত থেকে উদ্ধার করেছে। বাংলাদেশকেও তারা এ ব্যাপারে আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছে।
উপকূলীয় এলাকায় গবেষণাভিত্তিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম), অ্যাকচুয়ারি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইডিপি) ও সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরে শুধুই ‘ডোবা চর’ হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকটি চরভূমি ইতিমধ্যে স্থায়ী ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। সেসব স্থানে জনবসতিও গড়ে উঠেছে। একই ধরনের আরও প্রায় ২০টি ‘নতুন ভূখণ্ড’ এখন স্থায়িত্ব পেতে চলেছে। বঙ্গোপসাগরে দুই-তিন বছর ধরে জেগে থাকা এসব দ্বীপখণ্ড ভরা জোয়ারেও আর তলিয়ে যাচ্ছে না, বরং দিন দিনই বেড়ে চলছে এর আয়তন। এর মধ্যে হাতিয়ার ‘দুঃখ’ নদীভাঙন হলেও হাতিয়াকে ঘিরে জেগে ওঠা চরগুলো দ্বীপবাসীকে আশার আলো দেখাচ্ছে।
বয়ারচর, নঙ্গলিয়া, নলেরচর, কেরিংচর এবং পুবদিকে উড়িরচর পর্যন্ত যে বিশাল এলাকা ইতিমধ্যে জেগে উঠেছে তা ক্রমাগত দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে হাতিয়াকে ছুঁই ছুঁই করছে। এ চরাঞ্চল মূল হাতিয়ার চেয়ে বড়, দীর্ঘতম ভূখণ্ডের ইশারা দিচ্ছে বাংলাদেশকে। হাতিয়া দ্বীপের দক্ষিণাংশে জেগে উঠছে অনেক চর। নিঝুমদ্বীপের আশপাশের চরগুলো যেভাবে পলিবাহিত হয়ে জেগে উঠছে তা অব্যাহত থাকলে নোয়াখালী জেলার চেয়েও বড় আয়তনের ভূখণ্ডের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, হাতিয়াকে ঘিরে বিশাল বিশাল আয়তনের চরগুলো জেগে ওঠার বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে এবং নদী ও ভূবিশেষজ্ঞ দ্বারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাতিয়ার ভাঙনের মাত্রা কমানো গেলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা বাংলাদেশের চেয়েও বড় এক ভূখণ্ড সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তারা বলছেন, এখনো অন্তত ৪০-৫০টি ডুবোদ্বীপ রয়েছে, যা আগামী পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে জেগে উঠবে বলে আশা করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ শেষে জানিয়েছেন, সাগর বুকের ভূমি উদ্ধার ও ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব প্রযুক্তির প্রয়োজন, সেগুলো বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে উদ্ভাবনও করেছেন।