নিজস্ব প্রতিবেদক । বর্তমানকণ্ঠ ডটকম:
প্রায় তিন যুগ পর আগামী ১১ মার্চ হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগের যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে, ভিন্ন সময়ে। সময় যতো ঘনিয়ে আসছে ততো উত্তেজনা ছড়াচ্ছে বহুল আলোচিত এই নির্বাচন। সকলের মতামতকে উপেক্ষা করে হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। আর বিরোধিতা করেছে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো। বিরোধিতাকারী ছাত্র সংগঠনগুলো বলছে, প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে শুধু ছাত্রলীগের দাবির প্রতিফলন ঘটেছে। হলে ভোটকেন্দ্র রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচন করতে চাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রনেতারা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামার ঘোষণাও দিয়েছেন।
বিরোধী ছাত্রনেতারা বলছেন, হলের ভেতরে কেন্দ্র স্থাপনে ঢাবি ভিসি ড. আখতারুজ্জামানের একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে প্রহসনের নির্বাচনে যাওয়া আর না যাওয়া একই কথা। তাদের অভিযোগ- হলগুলো ছাত্রলীগের দখলে। যেখানে তাদের এক আধিপত্য। অন্য সংগঠনগুলো যেখানে তাদের কার্যক্রম চালারে পারে না সেখানে সুষ্ঠু ভোট হতে পারে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর জন্য নির্বাচনটি ছিল নতুন স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষার বিষয়। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ডাকসু নির্বাচনেও বিরোধী সংগঠনগুলো দাবি ও অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না প্রশাসন, যা উদ্বেগের।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রশাসন ও সিন্ডিকেট একতরফা নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তাই করছে। বিরোধী সব দলের দাবিকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যতটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার সবই হয়েছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের দ্বারা।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘সব ছাত্র সংগঠনের দাবিকে উপেক্ষা করে শুধু ছাত্রলীগের দাবি মেনে নিয়েছে প্রশাসন। এতে প্রশাসন প্রহসনের নির্বাচনের প্রথম ধাপে পা দিয়েছে। তারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলবেন। প্রয়োজনে সবাই মিলে নির্বাচন বর্জন করবেন।’
ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, ‘প্রশাসন হলে ভোটকেন্দ্র রেখে একতরফা ও প্রহসনের নির্বাচন করতে চাচ্ছে। আমরা বারবার বলছি একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করার জন্য। আমাদের দাবি মেনে না নিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকেও বিরত থাকতে পারি।’
ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের অবস্থান তার বিরুদ্ধে। আমাদের দাবি পুনর্বিবেচনার জন্য ইতিমধ্যে প্রশাসনকে অবহিত করেছি। এসব দাবি নিয়ে সামনের সপ্তাহ থেকে আমরা আন্দোলন-সংগ্রামে যাব।’
তবে ছাত্রলীগ বলছে, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ইস্যুতে একটি মহল বিভ্রান্তির চেষ্টা করছে। পোলিং বুথ হলের অভ্যন্তরে স্থাপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতবর্ষী ঐতিহ্য ও প্রথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৬৫ শতাংশই হলে অবস্থান করে। এ নিয়ে নূন্যতম বিভ্রান্তির অবকাশ আছে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করে না।’