বয়স তখন ১৩। পড়া-লেখার সুযোগ পায়নি। দরিদ্র পরিবারের রুচির জন্য বাবার পেশা কামারের কাজে লেগে পড়ি। ১০৫ বছর বয়স বাবা মোঃ আনেস আলীর। বার্ধক্যে আর কাজ করতে পারচ্ছেন না।
পিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁতরাচ্ছেন। তুলে দিলে খেতে পারেন না দিলে অসড় পড়ে থাকেন। কিন্তু তেমন আয় না থাকলেও আমি ৬২ বছর বয়সেও ধরে আছি বাবার পেশা। বলছিলেন ভোলাহাট উপজেলার মুশরীভূজা(সোনারপাড়া)গ্রামের ছন্দ কবি কামার মোঃ রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি ১৩ বছর বয়স থেকে বাপ দাদার কামারের পেশায় কাজ করতে করতে মাজা নুঁয়ে গেছে। হাতুড়ি দিয়ে আগুণে পুড়িয়ে লাল শক্ত লৌহাকে পিটিয়ে পিটিয়ে চলতে চলতে হাঁপিয়ে উঠেছি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমার একমাত্র ছেলেকে রাজশাহীতে রেখে বাংলাদেশ পলেটেকনিকে ইলেক্ট্রনিক্সে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করিয়েছি। দু’মেয়ে এসএসসি পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে আমি বেশ সুখি। নিজে আলোর মুখ দেখতে না পেলেও তিনটি সন্তানকে তাঁদের কিছুটা হলেও সাধ্য মত পড়িয়েছি। তিনি কাঁন্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ভোলাহাট উপজেলার প্রায় মানুষের কাছে আমি ছন্দ কবি নামে পরিচিত। ছন্দে ছন্দে কবিতার মধ্যদিয়ে সারাটা দিন পার করি। গেলো মহামারি করোনায় কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়েছে। সেই ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। নিজের অস্বচ্ছলতার কথা কাউকে সম্মানের ভয়ে বলতে পারিনা। সরকার বিভিন্ন মানুষকে করোনার সময় সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু আমার ভাগ্যে কানা-কড়িও জুটেনি। শুনেছি কামারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতা দিয়েছেন। সে সহযোগিতা থেকে আমি বাদ পড়েছি।
তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, আমি ছন্দ কবিতা বলায় ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন ধরণের মানুষ আমাকে চিনেন। তিনি বলেন, আমি বর্তমানে ভোলাহাট মেডিকেল মোড় ফায়ার সার্ভিসের পাশে কামারের কাজ করে সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।
উদিয়মান সাংবাদিক আলি হায়দার জানান, মোঃ রবিউল ইসলাম ছন্দে ছন্দে উপস্থিত বাস্তব পরিস্থিতির উপর কবিতা তৈরি করে মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। তাঁকে এলাকায় কামার হিসেবে যতটা না চিনে ছন্দ কবি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত রয়েছে তাঁর। তিনি উপস্থিত বুদ্ধি রাখেন প্রচুর।
সমাজসেবক মোঃ রৌশন জানান, রবিউল ইসলাম একজন ভালো মানুষ। তাঁকে ভোলাহাটের প্রায় মানুষ ভালোবাসেন। তিনি সব সময় পরিচ্ছন্ন অবস্থায় চলাফেরা করেন। তাঁর আর্থীক অবস্থা ভালো না হলেও চলাফেরা শিক্ষিত মানুষের মত। তাঁকে সরকারী ভাবে বা বেসরকারি ভাবে আর্থীক সহায়তার দাবী করেন তিনি।