বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন

অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারে চলছে কাঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মোঃ মোছাদ্দেক হাওলাদার, বরিশাল । / ৭৮ পাঠক
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন

অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে লাক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবার ভরসা ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি। চিকিৎসা সেবার নামে সরকারি স্বাস্থ্য হাসপাতালটিতে চিকিৎসকদের ফাঁকিবাজি, রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত না করে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সময় দেয়া, বয়স্ক ও গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা নিতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা, ভতি রোগীদের নিম্ন মানের খাবার পরিবেশন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা, বিছানাপত্র ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট, রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না করা, নার্সদের ডিউটিতে অবহেলাসহ সকল অনিয়ম যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়াও সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উন্নত মানের মেশিনপত্র থাকলেও এখানকার চিকিৎসকরা মাসোহারা নিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য করে। অপরদিকে হাসপাতালের এক্স-রে, ইসিজি পরীক্ষাগার কক্ষে গিয়ে দেখা যায় তালা ঝুলছে। সরকারি ওষুধও নিয়মিত পাওয়া যায় না এই হাসপাতালে। দুই একটা ওষুধ ছাড়া বাকি সব ওষুধই বাহিরের দোকানগুলো থেকে কিনে আনতে হয় । রাতের বেলা নার্সদের সেবা পেতে হলে আলদা বোনাস দিতে হয় রোগীদের। এসব অনিয়মের নেপথ্যে রয়েছেন হাসপাতালটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার তালুকদার।

তিনি অফিস সময়েও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মোটা অংকের ভিজিট নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার ১ লাখ ২৪ হাজার জনসংখ্যার একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে ৫০ শয্যা হাসপাতালটি ভরসা। জেলা শহরের অদূরে অবস্থিত উপজেলাটিতে চিকিৎসা সেবা নিতে ছুটে এসে প্রতিনিয়ত নানা রকম ভোগান্তি স্বীকার হচ্ছেন বসবাসরত বাসিন্দারা। চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও চিকিৎসাসেবার নামে পুরো স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স জুড়ে রয়েছে অনিয়ম। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এই এলাকার নিরীহ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা।

স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কমর্রত চিকিৎসক দূনীতির প্রধান সেনাপতি ডা. তাপস কুমারের খামখেয়ালিপনায় ব্যাহত হচ্ছে উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা। কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট বিদ্যমান থাকাবস্থায় সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম গিলে খাচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষের সামনে সেবা নিতে আসা রোগীদের লম্বা লাইন। ডাক্তারের অপেক্ষায় সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে এসব রোগীরা। এর মধ্যে রয়েছে ষাটোর্ধ্ব একাধিক মহিলা, রয়েছেন গর্ভবতী নারীরাও। সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললেও দেখা মেলে না হাসপাতালটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ এমন অনেক চিকিৎসকের। দিন শেষে ডাক্তার আসলে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক ও ফার্মেসির প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতে ব্যাস্ত হয়ে পরেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বক্তব্য দেননি কর্তব্যরত চিকিৎসক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক থেকে ডাক্তাররা ৪০ শতাংশ কমিশন নিয়ে রোগীদের হাসপাতালের বাইরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পাঠান। এই বিষয় ডাক্তারের এক সহকারি ও স্থানীয় কিছু তরুণ রোগী দেখার সাথে সাথে রোগীদের বিভিন্ন ক্লিনিকের কার্ড ধরিয়ে দেন। সরকারি পরীক্ষাগার গুলো বন্ধ বলে বুঝিয়ে প্রতিনিধিদের মধ্যমে রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিক গুলোতে পাঠিয়ে কমিশন আদায় করেন।

চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর অভিযোগ, হাসপাতালে খাবারের মান খুবই নোংরা, মাঝে মাঝে রাতে বাসি খাবার দেওয়া হয়। রোগীরা এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলেও কোনো সমাধান মিলেনা। সঠিক সময়ে নার্স ও চিকিৎসদের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। হাসপাতালে ভিতরে ও বাইরে দিনভর বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিড় লেগেই থাকে। তারা রোগীদের হাত থেকে চিকিৎসাপত্র ছিনিয়ে নিয়ে জেদের কোম্পানির ওষুধের তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে ডা. তাপস কুমার তালুকদার অনিয়মের বিষয়টি অস্বিকার করে বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ এবং রোগীদের খাবারের মান ঠিকঠাক আছে। আমি মাঝে মাঝে উপজেলার বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহন করতে গিয়ে রোগী দেখায় বিলম্ব হয়।

এ বিষয় জানতে চাইলে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, বিষয়গুলো আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। সব সমস্যা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *