বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন

আড়াই মাসেও মেলেনি বই

নিউজ ডেস্ক | বর্তমানকণ্ঠ ডটকম- / ৯৩ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন

বছরের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো সিলেটের শিক্ষার্থীদের হাতে এসে পৌঁছায়নি সব বই। বিশেষ করে নবম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও ধর্মশিক্ষা বিষয়ের একটি বইও এখন পর্যন্ত সিলেটে আসেনি। এতে বিপাকে পড়েছে ওই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। বই না থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে।

আর কয়েক দিন পরই শুরু হবে রমজান। রমজানে এক মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকবে বিদ্যালয়। ফলে রমজানের আগে বই না পৌঁছালে বছরের চার মাসই বইহীন থাকতে হবে শিক্ষার্থীদের।

নবম শ্রেণির তিনটি বই এখনো না আসার কথা জানিয়ে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিন খান বলেন, এখনো বেশির ভাগ ক্লাসেরই শতভাগ বই মেলেনি। তবে নবম শ্রেণির তিনটি বই সিলেটে এক কপিও আসেনি। গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বইও এখন পর্যন্ত আসেনি। এতে শিক্ষার্থীদের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘ সময় বইহীন থাকলে এর প্রভাব তাদের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও পড়বে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে পুরোনো বইয়ের দু-এক কপি ছিল। এগুলো দিয়ে এখন শিক্ষকরা কোনোমতে ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছে বই না থাকায় তাদের বাড়ির কাজ দেয়া যাচ্ছে না। শহরের চেয়ে গ্রামের শিক্ষার্থীরা আরও বেশি বিপাকে রয়েছে।’

গত সপ্তাহে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের সঙ্গে বৈঠকেও বই না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে স্কুল, মাদ্রাসা, ভোকেশনাল, ইংরেজি ভার্সন মিলিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে সিলেট জেলায় পাঠ্যবইয়ের মোট চাহিদা ছিল ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৪৪ সেট। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ৫৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৮ সেট। ফলে এখনো ২ লাখ ২ হাজার ৬০৬ সেট বইয়ের ঘাটতি রয়েছে। জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলগুলোর চাহিদা ছিল ৪০ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৮ সেট। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার ৪২ সেট।

বই না পাওয়ায় ক্লাসেও তেমন পড়ানো হয় না জানিয়ে সিলেটের গোটাটিকর উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের বলে, ‘বই না থাকায় গণিত, বাংলা ও ধর্ম ক্লাসে তেমন পড়ানো হয় না। কিছু পড়ালেও আমরা তা বুঝতে পারি না। গণিতের একটি অধ্যায়ও এখন পর্যন্ত শেষ করা যায়নি।’

আড়াই মাসেও বই না আসায় সিলেট অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ঝর্ণা দেব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এক বছর পর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাদের বই সবার আগে আসা উচিত ছিল। অথচ এখন পর্যন্ত গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বইও আসেনি। এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে? রমজানের ছুটির পরই তো পরীক্ষা শুরু হবে। বই না পেলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে কীভাবে?’

আব্দুর রশিদ নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ‘পুরোনো বই থেকে ফটোকপি করে মেয়েকে পড়তে দিয়েছি। কিন্তু নতুন বইয়ে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না তা তো জানি না। ফলে এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি।’

চলতি বছরের শুরু থেকেই বই নিয়ে সংকট দেখা দেয়। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছায় নির্ধারিত সময়ের অনেক পর। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কয়েক ধাপে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শতভাগ বই পায় শিক্ষার্থীরা।

তবে এখন ৯৫ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে গেছে জানিয়ে সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘কিছু বই এখনো আমরা পাইনি। বিশেষ করে নবম শ্রেণির তিনটি বই। এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।’

দু-এক দিনের মধ্যে চাহিদার সব বই পৌঁছে যাবে জানিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহমদ বলেন, রমজানের আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *