শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন
প্রায় পাচঁ দশক ধরে এক পিরের আদেশে ভোট দেননি চাঁদপুর জেলার একটি ইউনিয়নের নারী ভোটাররা। এমন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে। সেখানকার নাররাী দেশ স্বাধীনের পর কোনো নির্বাচনেই ভোট না দেয়ার ঘটনাটি ঘটে আসছে। তাদের ধারণা, পিরের আদেশ অমান্য করলে এলাকায় ভয়ঙ্কর বিপদ নেমে আসতে পারে।
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা এই পুরো ইউনিয়নটিতে কলেরা মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল। এই মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গ্রামবাসীর আয়োজন করে দোয়া মাহফিলের। সেই মাহফিলে পির মওদুদ হাসান জৈনপুরী আদেশ দেন, ইউনিয়নের সব নারীকে কঠোর পর্দা করতে হবে। আর তাহলেই গ্রাম বাসি রক্ষা পাবে এই মহামারি থেকে।
আর সে থেকেই কেটে গেছে প্রায় ৫০ বছর। পর্দার কঠোর নিয়ম ধীরে ধীরে কিছুটা শিথিল হলেও, ভোটকেন্দ্রে যাওয়া হননি ইউনিয়নের নারীদের।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের বেশির ভাগ নারীরাই দেশ স্বাধীনের পর স্থানীয় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের কোন নির্বাচনেই ভোট দেয়ার জন্য যাননি ভোট কেন্দ্রে।
স্থানীয়রা বলছেন, তাদের ধারণা, পিরের আদেশ অমান্য করে নারীরা ভোট দিতে গেলে এলাকায় আবার কোনো বিপদ নেমে আসতে পারে। তাই ভোটের দিন বেশির ভাগ নারীই বাড়িতেই থাকেন, সাম্প্রতিক সময়ে হাতে গোনা কয়েকজন নারী যান ভোটকেন্দ্রে।
রাহেলা খাতুন নামে এক নারী বলেন, পিরের নির্দেশমতো আমরা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাই না। ভোটের দিন ঘরেই থাকি। বাড়ির পুরুষরা ভোট দিতে যান।
তবে ভোট না দিলেও বাড়ির বাইরের বাকি সব কাজই করছেন নারীরা। এমনকি নির্বাচনেও প্রার্থী হচ্ছেন। নিয়মিত বাজারে যান এই ইউনিয়নের নারীরা
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৭৪১ এবং নারী ভোটার ৯ হাজার ৪৫ জন। আগামী ৫ জানুয়ারি এখানে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট হবে।
রৌজ আক্তার নামে তরুণী বলেন, এবার আমি ভোটার হয়েছি। সামনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেয়ার ইচ্ছা আছে। সব ঠিক থাকলে কেন্দ্রে যাব। তবে পির সাহেব পর্দার মধ্যে চলাফেরা করতে বলায় এখানকার নারীরা ভোট দিতে যেতে চান না।
এখন তো সব নারী কাজের প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন। সব ধরনের কাজ করছেন। তাহলে ভোট দিতে যাওয়ায় সমস্যা কোথায়! এবার বারের নির্বাচনে নারীদের ভোট দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ইউনিয়নের নারী ভোটাদের ভোট কেন্দ্রে ফিরাতে শনিবার দুপুরে উদ্বুদ্ধকরণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত কলেজ মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কোরআন ও হাদীসের আলোকে নারীদের ভোট প্রদানের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ইউনুস হোসেন। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, সংবাদ পত্রের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি রুপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা কোন নির্বাচনেই তাদের ভোট প্রয়োগ করেন না। আমি গভীর ভাবে বিশ^াস করি কোন আলেম নারীদেরকে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন না। পর্দা রক্ষা করে নারীদের ভোট প্রদান ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। নারীরা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকলে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে বিরুপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হলে ধর্মীয়ভাবে নারীরাও দায় এড়াতে পারে না। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নারীদেরকে ভোট প্রদান করতে হবে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি’র সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদ হোসেন, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ।