শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামের ইটভাটার ৭২ শতাংশই অবৈধ

বর্তমানকণ্ঠ ডটকম / ৩৩ পাঠক
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুরে ‘এবিসি’ নামের এক ইটভাটায় বহুদিন ধরে কৃষিজমি, পাহাড় কাটার মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছিল। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল আশপাশের পরিবেশও। অবৈধ সে ইটভাটার ছবি তুলতে গেলে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে মারধর করা হয় এক সাংবাদিককে। এরপর সমালোচনা শুরু হলে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি সেই ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।

আন্দোলনের মুখে গুঁড়িয়ে দেয়া হলেও চট্টগ্রামে এ রকম অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা কম নয়। জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ হিসাব বলছে, চট্টগ্রামে সব মিলিয়ে ইটভাটা আছে ৪১৩টি। এর মধ্যে মাত্র ১১৭টি বৈধভাবে চলছে। বাকি ২৯৬টি অর্থাৎ ৭২ শতাংশ ইটভাটাই অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। অবৈধ এই ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে গত ১ মার্চ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানকে চিঠি দিয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ শাখা-১।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. সৈয়দ শাহজাহান আহমেদের সই করা সে চিঠিতে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে দেশের সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করবে। ইটভাটার দূষণমাত্রা, আশপাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ, ইটভাটায় জ্বালানি ব্যবহারের ধরন এবং অবস্থান বিবেচনা করে অধিক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টিকারী ইটভাটাগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্ধ করা হবে।

একই চিঠিতে আরও বলা হয়, যেসব ইটভাটা নিবন্ধন ছাড়াই নতুন তৈরি হয়েছে, সেগুলোতে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম জোরদার করা হবে। আর বৈধ ইটভাটার চেয়ে অবৈধ ইটভাটা বেশি হলে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে।

অবশ্য এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, এর আগে গত ১৩ নভেম্বর দেশের সব জেলার অবৈধ ইটভাটা সাত দিনের মধ্যে বন্ধ করতে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর কয়েকটি ইটভাটা বন্ধও করা হয়। কিন্তু তারপরই থেমে যায় সেই কার্যক্রম।

জেলার ১৫টি উপজেলায় এই ৪১৩টি ইটভাটার অবস্থান। রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৬৯টি ইটভাটা রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ৬৬টি ইটভাটাই অবৈধ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অবৈধ ইটভাটার বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে পাহাড় কেটে কিংবা ফসলি জমিতে। আবার সেগুলোতে ইট তৈরিতেও ব্যবহার হচ্ছে পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি। বেশ কিছু ইটভাটার অবস্থান জনবসতিপূর্ণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে। চট্টগ্রামের দুই প্রধান নদী হালদা ও কর্ণফুলীর পাড়ও রক্ষা পায়নি ইটভাটা থেকে।

বন্ধ নয়, জরিমানাতেই আগ্রহ;
‘পরিবেশ বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ কর্মসূচির আওতায় গত ৪ মার্চ চন্দনাইশের কাঞ্চননগর পাঠাজোড়া এলাকায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ১৭টি অবৈধ ইটভাটা পরিদর্শন করে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) তথ্য অনুসন্ধান টিম। অনুসন্ধান শেষে ১২ সদস্যের এই দলটি জানায়, এসব ইটভাটার জন্য পুরো এলাকার পরিবেশ বিনষ্টের পথে। পেয়ারার জন্য বিখ্যাত চন্দনাইশের এই কাঞ্চননগরের পেয়ারা চাষাবাদও প্রায় ধ্বংসের পথে। পুরো চন্দনাইশে ৩১টি ইটভাটার মধ্যে ২৫টিই অবৈধ জানিয়ে মালিকের নামসহ তালিকাও প্রকাশ করে সংগঠনটি।

তালিকা প্রকাশের পর গত ১২ মার্চ ন্যাশনাল ব্রিকস ম্যানুফেকচারার ও মেসার্স শাহ আলী রজা (রহ.) ব্রিকস ম্যানুফেকারার নামে দুটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে প্রশাসন।

এর কয়েক দিন পর কয়লার পরিবর্তে কাঠ ও কৃষিজমির টপ-সয়েল ব্যবহার করায় সাতকানিয়ায় তিনটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই অভিযোগে গত সোমবার বাঁশখালীতে অভিযান চালিয়েও দুটি ইটভাটাকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তিন ক্ষেত্রেই আইন অমান্য করা হলেও এগুলো বন্ধ না করে জরিমানা করায় প্রশ্ন উঠেছে।

এটাকে আইওয়াশ বলছেন বিএইচআরএফের মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসককে পাঠানো জরুরি পরিপত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ না করে জরিমানার মাধ্যমে এক প্রকার বৈধতা দেয়া হচ্ছে। আমরা উচ্চ আদালতের কাছে বিষয়টি তুলে ধরব।’

অবশ্য নিজেদের ইটভাটাকে অবৈধ মানতে নারাজ চন্দনাইশ ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক বছরের জন্য ছাড়পত্র দেয়া হয়। এক বছর পর সেটি নবায়ন করতে গেলে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এখন হঠাৎ শুনি আমরা অবৈধ হয়ে গেছি।’

অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ না করে জরিমানা করে ছাড় দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে নিয়মিতই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। আইন অনুযায়ী আমাদের ইটভাটা বন্ধের এখতিয়ার নেই। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের।’

তবে সাম্প্রতিককালে ইটভাটায় কোনো অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি পরিবেশ অধিদপ্তরকে। এর কারণ জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. মুফিদুল আলম বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।’ খবর-দৈনিক বাংলা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *