বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

চলতি মৌসুমে চাঁদপুরে পাটের ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা

এ কে আজাদ, চীপ রিপোর্টার / ২৮ পাঠক
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

চাঁদপুর জেলার এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট আবাদে৷ বিমুখ হচ্ছেন কৃষকরা। উৎপাদন খরচ বেশি ও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় দিনদিন আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকে নেমেছে পাটের দাম।

কৃষকরা বলছেন, গেলো বছর যেখানে প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ২৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৮০০ টাকা দরে। অপরদিকে চারা রোপণ থেকে শুরু করে আঁশ প্রস্তুতকরণ পর্যন্ত প্রতি মণ পাটে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা টাকা খরচ হচ্ছে তাদের। এতে এ বছর পাট চাষে ব্যাপক লোকসানের শঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, প্রস্তুতকৃত আঁশ কিছুদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারলে দাম কিছুটা বাড়বে।

চাঁদপুর কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় দেশি, তোষা, কেনাফ ও মেস্তা জাতের পাট আবাদ হয়ে থাকে। যা বেশি আবাদ হয় সদর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। যদিও গত বছর পাটের দাম ভালো থাকায় চলতি বছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে থাকলেও আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার ২০০ হেক্টর বেশি।

এ বছর দেশি জাতের পাটের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে, তোষা আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭২০ হেক্টর, মেস্তা ১৭৫ হেক্টর ও কেনাফ জাতের পাটের আবাদ হয়েছে ৫৩০ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে কাটা হয়েছে দেশি ৯৮৫ হেক্টর, তোষা ৯৭৫ হেক্টর, মেস্তা ১৭০ হেক্টর ও কেনাফ ৩৩০ হেক্টর জমির পাট।

চাঁদপুর সদর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কেউ পাট কাটছেন, কেউবা জাগ দিচ্ছেন, আবার কেউ পাটের আঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধসহ সবাই একত্রে কাজ করছে। কেউ বাড়ির আঙ্গিনায়, কেউ আবার রাস্তায়।

সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের সাহেব বাজার এলাকার কৃষক রফিক তালুকদার, নুরুল ইসলাম বেপারী, বাচ্চু বেপারী ও দেলোয়ার খানসহ বেশ কয়েকজন জানায়, প্রতিমণ পাট উৎপাদনে চারা রোপণ থেকে শুরু করে আঁশ নেওয়া পর্যন্ত শ্রমিক খরচ পড়েছে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা। কিন্তু এবছর দাম মাত্র ১৫০০-১৮০০ টাকা। এতে প্রতিমণে অনেক টাকা লস দিতে হবে।

তাদের দাবি, গত বছর পাট মৌসুমের প্রথম দিকে প্রতিমণ পাটের দাম ছিল ২৪০০-২৬০০ টাকা, শেষ সময় ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পাটের আঁশ বিক্রি হয়েছে। এতে অনেকেই লাভবান হওয়ায় এবছরও চাষ করেছেন। কিন্তু এবার দাম এমন হবে তা বুঝতে পারেননি। এভাবে চললে সামনের বছর অনেক কৃষকই আর পাট আবাদ করবে না।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার কৃষক মিজানুর রহমান তালুকদার, লায়লা বেগম ও রোকেয়া খাতুন বলেন, পাট চাষে এ বছর ক্ষতিগ্রস্ত হবো। পাটের ন্যায্য দামে সরকার যদি একটু গুরুত্ব দিতো তাহলে কৃষকরা এ ফসল আবাদে আরও উদ্বুদ্ধ হতো।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, আরও কয়েকদিন যদি পাটের আঁশ সংরক্ষণ করে রাখা যায় তাহলে দাম কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কৃষকদের জন্য একটি সুখবর হলো পাটের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন হয়েছে। আগামী বছর থেকে উদ্ভাবিত নতুন এ জাতের পাট আবাদের মাধ্যমে কৃষকরা দ্বিগুণ ফলন পাবেন এবং অধিক লাভবান হবেন।

অতীতে পাট আবাদে চাঁদপুরের যথেষ্ট সুনাম থাকায় এই শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে দুটি বেসরকারি জুট মিল। এছাড়াও সরকারিভাবে তৈরি করা হয় পাট গুদামজাত করার জন্য বিশাল আকারের গোডাউন। কিন্তু সময়ের পালাক্রমে বন্ধ রয়েছে একটি জুটমিল। অন্যটি চালু আছে নামেমাত্র। এছাড়া সরকারি গোডাউনটি পড়ে আছে জরাজীর্ণ অবস্থায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *