বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন

ছেলের প্রশ্ন : ‘মাকে কি দেখতে আসবে না বাবা’

মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা। / ৬৫ পাঠক
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা ২০১২ সালে গুম হওয়া মফিজুল ইসলাম রাশেদের স্ত্রী মারুফা আক্তার রুমা (৪০) গতকাল বুধবার সড়ক দুঘর্টনায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন)। হীম ঘরে মায়ের লাশ। অঝোড় নয়নে কাদছে সবাই। এ সময় হঠাৎ করে আমার সামনে এসে ১২ বছরের কিশোর রামিমুল ইসলাম রিফাদের প্রশ্ন আচ্ছা আঙ্কেল আজও বাবা আসবে না মাকে দেখতে। পুরো পরিবেশটা যেন আরো ভারী হয়ে উঠলো।

রিফাদ হেমায়েতপুর বেলাল মডেল স্কুলোর পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র। স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় এসেছে হাসপাতালে। শব্দহীন কান্নায় উপস্থিত সবা্র চোখই ছল ছল করছিল। রিফাদের বড় ভাই রিমন সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি সে একটি পোষাক কারখানায় চাকরি করে মা ও ভাইকে নিয়ে সাজানোর সংসারটা চালাতো। আর প্রতিক্ষা করতো গুম হয়ে যাওয়া বাবা ফিরে আসবে। সবাইকে বুকে জড়িয়ে নিবে।

একসময় ওদের সংসারটা পরিপূর্ণ হবে। কিন্তু, বিধাতার কি নিষ্ঠুর খেলা। ঘাতক বাস আর সেই স্বপ্ন পুরন হতে দিলো না। আজ যদি কাকতালিয়ভাবে ওদের বাবা ফিরেও আসে মা তো আর ফিরবে না। কারণ, মা যেখানে গেছে সেখান থেকে ফিরে আসার কোন পথ খোলা নাই। রাশেদ যখন ২০১২ সালে গুম হয়ে গিয়েছে তখন তারা মীরপুর বুদ্ধিজীবী শহীদ মিনার সংলগ্ন সেকেন্ড কলোনীতে থাকতো। রাশেদ ছিল মেধাবী ও জনপ্রিয় ছাত্র নেতা। খুব সহজেই সে মিশতে পারতো মানুষের সাথে। তার গুম হয়ে যাওয়ার পর এই দুউ সন্তান খুবই ছোট ছিল। বুঝতে পারে নাই তাদের বাবা কোথায় গেছে, কেন গেছে বা কে নিয়ে গেছে। সেই থেকে প্রতিক্ষা তাদের।

ভয়াবহ শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিস্থিতির মাঝে শুরু হয় রুমা আপার জীবন সংগ্রাম। ছায়াহীন এই সংগ্রাম কতটা কষ্টের যে করে, সেই অনুধাবন করতে পারে। অন্য কেউ নয়। সেই সংগ্রামী নারী এই সন্তানকে বুকে ধরেই গতকাল পর্যন্ত ছিল। কিন্তু, ঘাতক বাস সেই সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটালো। গুম পরিবারের সকল সদস্যরাই এ্কই পরিবারের অংশে পরিনত হয়েছে। গতকালও সেই সত্যটি প্রমানিত হলো।

মারুফা আক্তার রুমার দুঘর্টনার খবর তাৎক্ষনিক হাসপাতালে ও স্থানীয় থানায় ছুটে যান মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আখি, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, অধিকারের সাইফুল ইসলাম, আইন ও শালিশ কেন্দ্রের ফরিদ, গুম পরিবারের ফারজানা, নিপা, ঝমুর, বেবী প্রমুখ। প্রত্যেকের চোখে জল থাকলেও ছিল না সন্তানের প্রশ্নের জাবাব। মনে হচ্ছিল মরনের চাইতেও কঠিন ছিল কিশোর রামিমুল ইসলাম রিফাদের প্রশ্ন ?

এই প্রশ্নের উত্তর কি পাবে সে। এই রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের পরিচালক তারা কি পারবে এই প্রশ্নের জবাব দিতে। রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী কিংবা আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী কার কাছে জবাব পাবে রিফাদ। এখানে সকল শব্ধহীন প্রতিবাদ।

[ চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *