শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন

নির্বাচন কমিশনও স্থানীয় সরকারের পক্ষে কিছু কাজ করতে পারেন।

মোশাররফ হোসেন মুসা / ৭৬ পাঠক
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন

সকলের কাছে একটি ধারণা স্পষ্ট হয়েছে যে, এদেশের কোনো দলই কার্যকর স্থানীয় সরকার চায় না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অথবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য স্থানীয় সরকারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। আমরা জানি স্থানীয় প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন স্থানীয় কাজ করার জন্য। সেজন্য তাদেরকে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা হতে হয় এবং নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হয়। জাতীয় সংসদ সদস্যের বেলায় এ নিয়ম নেই। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হলেই চলে। তিনি বাংলাদেশের যে কোনো নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হতে পারেন। সেজন্য তাদের পদের প্রথমে ‘জাতীয়’ শব্দটি সংযুক্ত থাকে। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের প্রথম কাজ হলো স্থানীয় এলাকার উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করা এবং নিজস্ব আয় সৃষ্টি করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া, যা স্বশাসিত স্থানীয় সরকার হওয়ার জন্য অন্যতম দায়িত্ব। সেজন্য সরকারের কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে তাদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন । বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে চলমান এলজিএসপি (লোকাল গভর্ণমেন্ট সাপোর্ট প্রোগ্রাম)-এর প্রথম কথাও তাই। কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে গেলে যে স্বাধীনতা দরকার, সেটা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের কোনো আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হয় না।

বর্তমানে যারা ভোটে প্রার্থী হচ্ছেন তারাও জানেন না, তাদের কাজ কি? এমতাবস্থায় নির্বাচন কমিশন একটি শর্ত দিতে পারতেন। যেমন-প্রার্থী নির্বাচিত হলে কি কি কাজ করবেন, এর আগে তিনি কি কি স্থানীয় কাজ করেছেন, প্রার্থীর নিজের ও তার সমর্থনকারী/প্রস্তাবকারীর হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ আছে কি না ইত্যাদি সংযুক্ত করতে পারতেন। নির্বাচন কমিশন থেকে সরবরাহকৃত ফরমে উল্লেখ আছে -১) প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহ করার উৎসমূহ ও ব্যয় নির্বাহের বিবরণ দাখিল করতে হবে; ২) প্রার্থী আয়কর দাতা হলে রিটার্ন দাখিল করতে হবে; ৩) জামানতের সাথে ভোটার তালিকার সিডি ক্রয়ের জন্য চালানের মুল কপি সংযুক্ত করতে হবে; ৪) রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হলে দলের নাম লিখতে হবে;৫) প্রার্থী, প্রার্থীর পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রীর নাম ইংরেজি বড় হাতে লিখতে হবে;৬) সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের ফটোকপি দাখিল করতে হবে।

কিন্তু কোথাও প্রার্থীর হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ আছে কি না, নির্বাচিত হলে কি কি কাজ করবেন ইত্যাদির বিষয়ে কোনো কথা উল্লেখ নেই। ফলে প্রার্থীরা মাথায় অন্য চিন্তা নিয়ে নির্বাচিত হচ্ছেন। তবে কোনো কোনো এলাকায় রিটার্নিং অফিসারগণ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রার্থীদের হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে নির্দেশ দিচ্ছেন । গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো দলই আন্তরিক নয়। দলকে প্রতিষ্ঠিত করতে তৃণমূলেও জাতীয় রাজনীতি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে সাধারণ জনগণও অতিমাত্রায় ‘জাতীয়’ চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক বিশ্বের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, সেখানে বহু আগেই স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা হয়েছে এবং জনগণকেও স্থানীয় কাজে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাও স্থানীয় সরকারের সমস্যাবলী সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রয়েছেন।

কমিশনের জনৈক সদস্য সম্প্রতি জাসদের তাত্ত্বিক গুরু সিরাজুল আলমের খানের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে মিষ্টি মুখ করিয়েছেন (উল্লেখ্য সিরাজুল ইসলাম খানও স্থানীয় সরকারের পক্ষে নিজের লেখা গবেষণা পত্র প্রচার করে থাকেন)।

উপরিউক্ত সদস্য বিভিন্ন সভা-সেমিনারে জাতীয় সমস্যা নিয়ে কথা বলে থাকেন। তাঁর মুখেও কোনোদিন স্থানীয় সরকারকে কার্যকর করার বিষয়ে কোনো বক্তব্য শোনা যায় নি।

এখন প্রশ্ন হলো – আমরা কার্যকর স্থানীয় সরকার চাই কি না? একই প্রশ্ন নির্বাচন কমিশনকেও করা যায়।

লেখক :- গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *