বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৪০ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্ক । বর্তমানকণ্ঠ ডটকম:
শীতটা যাই যাই করছে, প্রকৃতি থেকে বিদায় নিচ্ছে জড়তা, রুক্ষতা। উঁকি দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত, আসছে সজীবতা। শুধু প্রকৃতিতেই নয়, ফেব্রুয়ারির শুরুতেই আনন্দ-উৎসবের একটা ডঙ্কা বেজে উঠেছে রাজধানীজুড়ে। শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পাশে চলছে বাণিজ্য মেলা, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল শুরু হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলা, একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসব। এই তিন আয়োজনে উৎসবের হাওয়া বইছে কংক্রিটের নগরীতে। ফেব্রুয়ারিজুড়ে চলবে বাঙালির বহুল কাঙ্ক্ষিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
ওদিকে বাণিজ্য মেলা শেষ হতে বাকি আছে আর মাত্র এক সপ্তাহ, তাই সেখানেও এখন উপচেপড়া ভিড়। ৩৩তম জাতীয় কবিতা উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসেছে দেশি-বিদেশি কবিদের মিলনমেলা। এরপর আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুনে সবাই মাতবে বসন্তবরণ উৎসব। পরদিন তো ভালোবাসার রঙে সাজবে সবাই। বিলেতি সংস্কৃতির এই ‘ভালোবাসা দিবস’ আস্তে আস্তে নিজেদের করে নিচ্ছে শহুরে বাঙালিরা। ২১ ফেব্রুয়ারি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হবে ভাষা শহীদদের। সবমিলিয়ে উৎসব-আনন্দে কাটবে পুরো মাস।
প্রাণের মেলার উদ্বোধন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার দুয়ার খুলল মাসব্যাপী বাঙালির প্রাণের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ, মিসরীয় লেখক-গবেষক মুহসেন আল আরিসি।
রামেন্দু মজুমদারের সঞ্চালনায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবুও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা যতই যান্ত্রিক হই না কেন, বইয়ের চাহিদা কখনো শেষ হবে না। নতুন বইয়ের মলাট, বই শেলফে সাজিয়ে রাখা, বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে, আমরা সব সময় তা পেতে চাই।’
বইমেলার পরিসর এবার আরও বেড়েছে। বেড়েছে বইয়ের স্টল নিয়ে বসা প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে ‘বিজয় : ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ নবপর্যায়’। মেলার বাংলা একাডেমি অংশ একজন ভাষা শহীদের নামে, এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারজন ভাষা শহীদের নামে মোট পাঁচটি চত্বর রয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতা স্তম্ভ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংবলিত প্ল্যাকার্ড বসানো হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে। সব মিলিয়ে ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি প্রতিষ্ঠান ১৫০টি ইউনিট নিয়ে তাদের বইয়ের পসরা সাজিয়েছে। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬২০টি ইউনিট নিয়ে বসেছে ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের স্টল। এ ছাড়া লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটল ম্যাগাজিনকে ১৫৫টি স্টল দিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। পূর্বের মতো এবারও বাংলা একাডেমি ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
‘বাঙালির জয়, কবিতার জয়’
গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের খোলা ময়দানে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ৩৩তম জাতীয় কবিতা উৎসব। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ৫০ বছরে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘বাঙালির জয়, কবিতার জয়’ স্লোগানের এই উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে শহীদ আসাদ, শহীদ ডা. শামসুজ্জোহা, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ও শহীদ মতিউর রহমানকে। কবিতা পরিষদের আয়োজনে উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি আসাদ চৌধুরী। সংগঠনটির সভাপতি মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত, আহ্বায়ক রবিউল হুসাইন। উৎসবের ঘোষণাপত্র পড়েন রুবী রহমান। উৎসব শুরু করার আগে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান কবিরা। পরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী পটুয়া কামরুল হাসানের সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পর শুরু হয় কবিতা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
কবিতা উৎসবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসেছেন সেমন্তী ঘোষ, সুমন গুণ, দিলীপ দাস, মৃণাল দেবনাথ, বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী, শোভা দেববর্মণ, দীপক হালদার, বিধানান্দ পুরকায়স্থ। তুরস্ক থেকে এসেছেন তারিক গুনারসেল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্লারি বুকার, চীনের তানজিয়ান চাই, শ্রীলঙ্কার জয়শঙ্কর সুব্রামানিয়াম, ইরাকের আলী আল সালাহ, মালয়েশিয়া মালিম ঘোজালি, স্পেনের জুলিও পাভানেত্তি, উরুগুয়ের অ্যানাবেল ভিলার, কঙ্গোর কামা কামান্দা ও নেপালের পুষ্প কাহনাল। উৎসবে স্প্যানিশ ভাষায় কবিতা পড়েন কামা কামান্দা, একই ভাষায় নারীদের উৎসর্গ করে কবিতা পড়েন নারী কবি অ্যানাবেল ভিলার।
বাণিজ্য মেলায় শেষ পর্যায়ের তোড়জোড়
গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিম পাশে শুরু হওয়া ২৪তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বাকি আছে আর মাত্র সাত দিন। এ কারণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মধ্যে চলছে এক প্রকার তোড়জোড়। বিক্রেতারা যেমন বিভিন্ন প্রকার লোভনীয় অফার দিয়ে পণ্য বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছেন তেমনি ক্রেতারা ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই সংগ্রহ করে নিতে চাইছেন নিজের পছন্দের পণ্যটি। ভিড় লেগে থাকছে দর্শনার্থীদেরও।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বাণিজ্য মেলা। সাধারণত প্রতি বছর ১ জানুয়ারি মেলা শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ দেরিতে। অন্যবারের তুলনায় এবার বাণিজ্য মেলা অনেকখানি ভিন্ন। মেট্রোরেলের আদলে তৈরি করা হয়েছে প্রধান গেট। এ ছাড়া মেলার ভেতরে দর্শনার্থীদের জন্য খোলামেলা জায়গা রাখা করা হয়েছে। আছে গ্রিনজোন, যাতে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরাঘুরি করতে পারে। আর মেলার দুই প্রান্তে সুন্দরবনের আদলে করা হয়েছে ইকো পার্ক।
মেলায় এবার মোট স্টল ৫৫০টি। এর মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা স্টল ২০টি, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ৬০টি, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ৩৮টি, সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৮, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন ২৯টি, প্রিমিয়ার স্টল ৬৭টি, রেস্টুরেন্ট তিনটি, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ৯টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৬টি, বিদেশি প্যাভিলিয়ন ২৬টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৯টি, বিদেশি প্রিমিয়ার স্টল ১৩টি, সাধারণ স্টল ২০১টি ও ফুড স্টল ২২টি। এবার বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের মধ্যে রয়েছে-ভারত, পাকিস্তান, চীন, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ভুটান, নেপাল, মরিশাস, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, রাশিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, সোয়াজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও হংকং।