মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন

ফ্রান্সের প্যারিস গেইট নবযৌবনে বিকষিত বিজয়ী প্রতিক !

সৈয়দ মুন্তাছির রিমন, ফ্রান্স । / ২১ পাঠক
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন

শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্মভূমি ফ্রান্সের প্যারিস নগরী। যে নগরী ভ্রমণ পিপাসুদের স্বপ্নের বাসস্থান। এই বাসস্থানের ইতিহাস আর ঐতিহ্য শত শত বছর জুড়ে মেধা ও জ্ঞান অন্বেষনীদের আহার যুগিয়ে আসছে অন্তত সময়। আর সময়ের তালে তালে ফরাসি মানবতা ও ভ্রাতৃত্ব সকল জাতির কাছে সমাদৃত হয়ে উঠে। প্যারিস নগরীর বিভিন্ন স্থাপত্যে ভীড়ে দৃষ্টি অবলোকন করলে ভেসে আসে শিল্পের প্রতিচ্ছবি।

যে শিল্প আধুনিক, পরিকল্পিত, বৈজ্ঞানিক, স্বাধীনতা, সভ্যতা ও ভ্রাতৃত্বের নির্দশন বহন করে চলছে। এই প্যারিস শহরের পুরো নির্দশন গুলো ইল-দ্য-ফ্রঁস অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র সেন নদীর তীর ঘেষে বিকষিত হয়েছে। প্যারিস শুধু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নয়। বরং দুই হাজারের বেশি বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবেও সমাদৃত।

কিন্তু আজ ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি স্থান হলো প্যারিস গেইট। এই নামেই তাদের কাছে খ্যাত। এদিকে এই প্যারিস নগরীতে সবাই আইফেল টাওয়ার দেখতে আসে। কিন্তু আইফেল টাওয়ারের মোহমায়ায় ভ্রমণ পিপাসুরা অনেকে স্মৃতিস্তম্ব বা প্যারিস গেইটকে ভুলে যায়। তবে আসলেই কি এর নাম প্যারিস গেইট? ফরাসি জাতিরা এই গেইটকে কি নামে সন্মোধন করে? প্যারিস শহরে এরকম অনেক স্মৃতি বিজরিত স্থাপনা আছে। প্রতিটি স্থাপনাই আলাদা আলাদা ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্মৃতি ও নাম বহন করে।

ঠিক তেমনি এই প্যারিস গেইট নামে বাংলাদেশিদের কাছে খ্যাত স্মৃতিসৌধের নাম হলো-আর্ক দ্য ত্রিয়োম্ফ"(Arc de Triomphe)"। এই নামে সবাই চিনলেও তার আরেকটি নাম আছে ফরাসী ভাষায়। যা হলো-Arc de Triomphe de l'Etoile।

যার অর্থ-বিজয়ী তারকা স্তম্ব বা বিজয়ী তারকা স্মৃতিসৌধ কিংবা বিজয়ী খিলান। ফরাসি জাতির এই বিজয়ী তারকা স্মৃতিসৌধটি অভিজাত এলাকা ও বিখ্যাত শঁজেলিজে মহারাস্তার পশ্চিম প্রান্তে এবং প্লাস দ্য লেতোয়াল ("তারকা চত্বর", ১২ রাস্তার মিলনস্থল) এর কেন্দ্রে অবস্থিত। এই মিলন স্থলটি কালের ধারাবহিকতায় ২৬ রাস্তার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। জিন-ফ্রান্সোইস-থেরেস চালাগ্রিনের নকশায় তার উচ্চতা ৫১ মিটার (১৬৫ ফুট) এবং প্রস্থ ৪৫ মিটার। স্মৃতিসৌধটি পুরাতন প্যারিস ও নতুন প্যারিসকে একত্রিত করে বিজয়ের জয়গান গেয়ে ভ্রাতৃত্ব এবং মানবতার সুবাতাস বিস্তার করে চলছে। রাতের আলোয় এটি একটি বৃত্তাকার প্লাজায় বসে যেখান থেকে ১২ গ্র্যান্ড অ্যাভিনিউ গুলো বিকিরণ করে একটি তারা তৈরি করে।

১৮০৫ সালে ফরাসী বিপ্লব ও নেপোলিয়নের অস্টার্লিজ যুদ্ধের দুর্দান্ত সাফল্যের পরে নেপোলিয়ন তার ১৫ আগস্ট জন্মদিনে ১৮০৬ সালে স্মৃতিসৌধটি চালু করেন। বিভিন্ন পটভুমির ধারাবাহিকতায় এর শিল্প কৈশলি ১৮৩৬ সালে রাজা লুই-ফিলিপের রাজত্বকালে শেষ হয়। আর তিনি ২৯ জুলাই অফিসিয়াল ভাবে চালু করেন। পরবর্তীতে ফরাসীরা দলগত ভাবে যে কোনো প্রতিযোগীতায় বিশ্বজয় করলে এই স্থান থেকে বিজয় মিছিল শুরু করার রীতি চালু হয়।

স্মৃতিসৌধের বুকে শত শত জেনারেল ও যুদ্ধের নাম দিয়ে সজ্জিত করা হয়। স্মৃতিসৌধের নীচে ১৯২১ সালে যুক্ত হয় ফ্রান্সের অজানা সৈনিকের সমাধি। আর সেখানে ১৯৩৩ সালে প্রথম জ্বলে উঠে স্মরণ শিখা। তার আলোয় প্রতিটি সন্ধ্যা বিজয়ের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে আজ অবধি। বর্তমানে বিজয়ী স্মৃতিসৌধের শৈল্পিক উন্নয়ন সাধনের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। আর গত কয়েক দিন আগে ১৬ দিনের জন্য পলিপ্রোপিলিন ফ্যাব্রিক ও লাল দড়ি- কাপড় দিয়ে মোড়ানো হয়। আর তাতেই ভ্রমণ পিপাসুদের নজর কেড়ে নেয়।

অবশেষে এখানে বসবাসরত সকল নাগরিকের মনের ক্যানভাসে উকি দেয় বিজয় গাথা ইতিহাস। যে ইতিহাস ফরাসি চেতনাকে সবার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে সৃষ্টি করে মহান মানবতা। যেনো স্মৃতিসৌধটি পৃথিবীর সকল জাতির বেদা-বেদ ভুলে জন্ম দেয় মনুষ্যত্ব। আর নবযৌবনে মানুষের জয়গান গেয়ে এক বিকষিত বিজয়ী প্রতিক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *