হাসান তামিম, বর্তমানকন্ঠ ডটকম, ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া : গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে যেখানে মা এবং মেয়েকে মিথ্যা গরু চুরির অপরাধে নির্যাতন এবং রশি দিয়ে বেধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্ত জানা গেল সেখানকার স্থানীয় চেয়ারম্যানে কথামত রাজি না হওয়ায় মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে লাঞ্চিত করা হয়। এ বিষয়টি দেখার পর কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া রেনুর হত্যার ঘটনাটি চোখে ভেসে আসে। রেনু তার ছোট্ট মেয়েটিকে বাসায় রেখে বের হয়েছিলো মেয়ের স্কুলে ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে কিন্তু তাকে জীবন দিতে হলো মিথ্যা ছেলেধরার অপবাদে।
বিচার কি হয়েছে? এখনো হয়নি। পুরুষশাসিত বাংলাদেশের সমাজে নারীদের অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি তার বাস্তব উদাহরণ এই দুটি ঘটনা। রেনুকে পেটানোর ভিডিওটি দেখে আমি আতকে উঠি কিভাবে একজন মহিলাকে সকল পুরুষ মিলে পেটাচ্ছে আর আমরা উৎসুক জনতা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। বিশেষ করে নারীদের চারিত্রিক ভাবে ছোট করতে অনেক সময় তার ব্যক্তিগত বিষয় সামনে নিয়ে আসা হয়।
কেননা আমাদের সমাজে নারীদেরকে এখনো সেই সন্মানটি দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে কিছু ধর্মীয় উগ্রবাদী মানুষ নারীর অধিকার এবং ক্ষমতায়ন নিয়ে সবসময় তীব্র বিরোধিতা করে এমনকি জনসমাবেশে নারীদের নিয়ে বিদ্রুপ মন্তব্য করে। আমরা সিংগাপুর কিংবা উন্নত দেশ হচ্ছি কিন্ত নারীদের অধিকার এবং নিরাপত্তা কোথায়? পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে নারীদের নিরাপত্তা এবং অধিকার মর্যাদা দেওয়া হয় যা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি। ধর্মের এবং সামাজিকতার দোহাই দিয়ে নারীদের অধিকার আরো খর্ব করা হচ্ছে। রেনু হত্যার বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারনে গতকাল মা মেয়েকে নির্যাতন হতে হয়েছে। এমন অনেক মা বোন দিনের পর দিন পরিবার কিংবা অন্য কারো কাছে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দু একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসলেও অধিকাংশই আসে না। আমাদের দেশে নারীদের যেকোন অগ্রগতিকে এখনো সমাজে বাকা চোখে দেখা হয়। ইউরোপের দেশগুলোতে এক সময় নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করতে দেওয়া হতো না কিন্ত এখন নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর আমাদের দেশে সেই আদিকালের পুরুষশাসিত সমাজের মতোই নারীদেরকে সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনো শোনা যায় নারীরা এখনো নিজ গৃহে নির্যাতিত হয়। আর ধর্ষনের কথা নাই বা বললাম।
বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থা ধীরগতি এবং সামাজিক কুসংস্কার এর জন্য দায়ী। জানিনা কতদিন চলবে তবে এভাবে চলতে থাকলে এমন নির্মম ঘটনা আরো দেখতে হতে পারে। এর জন্য আমরা নিজেরাও অনেকাংশে দায়ী।