শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন

বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে

বাণিজ্য ডেস্ক: / ২৬ পাঠক
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন

রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনে হামলার পর কৃষি যন্ত্রপাতি, সার, বীজ ও জ্বালানি মজুদ ধ্বংস ও দখল করে নিচ্ছে। এ অভিযোগ দেশটির সিংহভাগ কৃষকের। এতে দেশটিতে নতুন শস্যের আবাদ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশটি বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গম, ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেলের শীর্ষ উৎপাদক। যা বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি বয়ে আনবে।

রুশ সামরিক বাহিনীর সহিংসতা ইউক্রেনে বসন্তকালীন আবাদ কার্যক্রম এবং গম, যব ও সরিষাসহ শীতকালীন শস্যের জন্যেও ভয়াবহ ঝুঁকি বয়ে আনছে। এসব শস্য গত বছরের গ্রীষ্ম ও শরত্কালীনে আবাদ করা হয়েছিল।

যুদ্ধের বিভীষিকার কারণে ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে (জুলাই-আগস্ট) ইউক্রেনে কৃষিপণ্য উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমতে পারে। তথ্য বলছে, দোনেৎস্কে অবস্থিত ইউক্রেনের অন্যতম বৃহৎ এগ্রোহোল্ডিং হারবিট রুশ বাহিনীর কাছে ৯৮ হেক্টর জমির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। কোম্পানিটি কিয়েভে অবস্থিত বাকি ২২ হাজার হেক্টর জমিতেও পুরোপুরি প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। কারণ এটির ৭০ শতাংশই যুদ্ধক্ষেত্রে পড়েছে।

হারবিটের হেড অব সেলস তাতিয়ানা অ্যালাভেরদোভা জানান, কিছুদিন আগে দোনেৎস্কে তাদের কর্মীদের সঙ্গে কোম্পানিটির সব ধরনের যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর মানে তাদের সম্পত্তির বড় একটি অংশ, কৃষি যন্ত্রপাতি হয়তো রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে অথবা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

কোম্পানিটি দোনেৎস্কের ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন গম আবাদ করেছিল। আবাদি অঞ্চলের ৪০ শতাংশেরও কম অংশ সার প্রয়োগ করা হয়। এটি উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে।

কোম্পানিটি তাদের সম্পূর্ণ সম্পত্তি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে বসন্তকালীন শস্য ক্যাম্পেইন পুরোপুরিভাবে শেষ করতে পারবে না। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় পুরনো মৌসুমের শস্যও বিক্রি করতে পারছে না হারবিট।

খারকিব অঞ্চলে অবস্থিত আরেকটি এগ্রোহোল্ডিং এগ্রোজেনারেশন। কোম্পানিটি মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনায় বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে। যুদ্ধের কারণে কৃষি উপকরণ ক্রয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, খারকিব অঞ্চল দখলের সময় রুশ বাহিনীর হামলায় কোম্পানিটি তাদের কৃষি যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানান এটির সিইও সার্জি বুলাভিন।

বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানির সঙ্গে কাজ করা কৃষকরা জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলেও কৃষি যন্ত্রপাতি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক আবাদি অঞ্চলগুলোয় বসন্তকালীন ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেলবীজ আবাদ ৩০-৪০ শতাংশ সম্পন্ন হতে পারে। যেখানে গম ও যবের উৎপাদন নিম্নমুখী থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে দেশটির খাদ্যশস্য রফতানি নিম্নমুখী থাকবে।

একইভাবে চলতি মৌসুমেও রফতানি থাকবে মন্দার মুখে। ইউক্রেনের প্রধান সমুদ্রবন্দরগুলো দিয়ে দেশটির ৯০ শতাংশ রফতানি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। কিন্তু এসব বন্দর বন্ধ হয়ে পড়ায় রফতানি সম্ভাবনাও কমতে পারে। এটি বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চলতি বিপণন মৌসুমে ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষ সূর্যমুখী তেল রফতানিকারকের তকমা ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। ৫৫-৬০ লাখ টন রফতানির সম্ভাবনা ছিল। এ ছাড়া, গম রফতানিতে দেশটি চতুর্থ স্থানে উঠে আসার সম্ভাবনাও ছিল। বিশ্লেষকরা রফতানির পরিমাণ ২ কোটি ৪০ লাখ থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ টনে পৌঁছনোর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, ভুট্টা রফতানিতেও চতুর্থ স্থানে উঠে আসার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *